ঢাকা ০২:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

‘বাঘের দুধ’ নামে যা বিক্রি হয় পুরান ঢাকায়

  • আপডেট সময় : ১১:১৮:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০২৩
  • ১৩০ বার পড়া হয়েছে

মহানগর প্রতিবেদন : কথায় আছে-টাকা হলে বাঘের দুধও কেনা যায়! পুরান ঢাকার নবাবপুর (রথখোলা) এলাকায় কথিত ‘বাঘের দুধ’ বিক্রি হয় বলে শোনা যায়। সেখানে ‘শাহ বণিকের দোকানে’ কবিরাজি ও বনজ ওষুধপত্র বিক্রি হয়। মূলত বনজ ওষুধ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে এটি। জিনিসটি আসলে কী সে ব্যাপারে সম্প্রতি একটি সংবাদসংস্থার সঙ্গে কথা হয় দোকান মালিকের।
শাহ বণিকের দোকানদার রানা বিলাই বলেন, ‘এটা আসলে বাঘের দুধ নয়। অনেক দুর্লভ জিনিস বলে এই নামে খ্যাত। এটা আসলে ব্যাম্বো এক্সট্র্যাক্ট বা বাঁশের নির্যাস। চায়নায় একটা স্পেশাল বাঁশ গাছ আছে যেটা চাষিরা চাষ করে। একটানা ১৮৬৭ দিন এই বাঁশ গাছে পানি দিতে হয়। একদিনও যদি পানি দেওয়া বাদ পড়ে তাহলে এটা থেকে কোনও ফল আসবে না।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘পাঁচ বছরের একটা ডেডিকেশনের পর এই জিনিসটা হয়। পাঁচ বছর পর সেই বাঁশ গাছটা ৯০ ফুটের মতো লম্বা হয়। তারপর সেখান থেকে পানি বের হয়। সেই পানিকে প্রক্রিয়াজাত করে এই দুধ বানানো হয়। আমরা এটা ভারত থেকে আমদানি করি। এটা এক তোলা মানে ১০ গ্রাম, সেটা ৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সেই অনুযায়ী ১০০ গ্রাম ৮০০ টাকা এবং কেজি আট হাজার টাকা।’ রানা বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন এই বাঁশের দুধ আসে তখন সেটা বাঘের দুধ হয়ে যায়। এখানকার ইনোসেন্ট মানুষরা এটাকে বাঘের দুধ বলেই সম্বোধন করেন। এই বাঘের দুধ মূলত ওষুধের কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি চোখের সুস্থতার জন্য ব্যবহার করা হয়, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে, ব্রেইন ভালো রাখে, হাড়ের ক্ষয় রোধে এটি ব্যবহার করা হয়। এটাকে গুঁড়া করে এক চিমটি নিয়ে টক দই বা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খায়।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান শিকদার বলেন, ‘বাঁশের নির্যাস মানবদেহের জন্য উপকারী। তবে সেই নির্যাস নেওয়ার প্রসেস সঠিক হতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ, যা সাধারণত চুল, ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বাঁশের নির্যাস ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে ও কোষ মেরামতের জন্য বেশ উপকারী। এতে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, থায়ামিন, ভিটামিন সি ইত্যাদি থাকে। তবে সেটা সব বাঁশের নির্যাসে থাকে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন পুরান ঢাকায় যেটা বিক্রি হচ্ছে, সেটা বাঁশের নির্যাস কিনা, তা দেখে বলতে হবে-এর গুণাগুণ ঠিক আছে কিনা বা এটা মানসম্মত কিনা। না দেখে তো আর কোনও মন্তব্য করতে পারবো না।’
এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ ফারহানা ইয়াসমিন মিলি জানান, বাঁশের নির্যাস প্রকৃতির সিলিকার সবচেয়ে শক্তিশালী উৎসগুলোর মধ্যে একটি— যা চুল, ত্বক এবং নখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ। এছাড়া থায়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস। বাঁশের নির্যাস কোলাজেন তৈরি করতে, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে, বলিরেখা, কালো দাগ, সুক্ষ্ম রেখা, পিগমেন্টেশন এবং কোষ মেরামতেও সাহায্য করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাঘের দুধ নামে বাঁশের যে নির্যাস বিক্রি হয়— সেটা ইতোপূর্বে আমি শুনেছি। কিন্তু এ সম্পর্কে আমার কাছে পূর্ণ তথ্য নেই। এর উৎপত্তি বা উৎপাদন সম্পর্কে জানার পর গুণাগুণ সম্পর্কে বলতে পারবো। পুরান ঢাকায় বাঘের দুধ নামে যা বিক্রি হচ্ছে, তা যদি আসলেইবাঁশের নির্যাস হয়, তাহলে এটা মানবদেহের জন্য উপকারী। কিন্তু তা যদি মানুষকে বোকা বানিয়ে অর্থ আত্মসাতের ফন্দি হয়, তাহলে হিতে বিপরীত হবে।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘বাঘের দুধ’ নামে যা বিক্রি হয় পুরান ঢাকায়

আপডেট সময় : ১১:১৮:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০২৩

মহানগর প্রতিবেদন : কথায় আছে-টাকা হলে বাঘের দুধও কেনা যায়! পুরান ঢাকার নবাবপুর (রথখোলা) এলাকায় কথিত ‘বাঘের দুধ’ বিক্রি হয় বলে শোনা যায়। সেখানে ‘শাহ বণিকের দোকানে’ কবিরাজি ও বনজ ওষুধপত্র বিক্রি হয়। মূলত বনজ ওষুধ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে এটি। জিনিসটি আসলে কী সে ব্যাপারে সম্প্রতি একটি সংবাদসংস্থার সঙ্গে কথা হয় দোকান মালিকের।
শাহ বণিকের দোকানদার রানা বিলাই বলেন, ‘এটা আসলে বাঘের দুধ নয়। অনেক দুর্লভ জিনিস বলে এই নামে খ্যাত। এটা আসলে ব্যাম্বো এক্সট্র্যাক্ট বা বাঁশের নির্যাস। চায়নায় একটা স্পেশাল বাঁশ গাছ আছে যেটা চাষিরা চাষ করে। একটানা ১৮৬৭ দিন এই বাঁশ গাছে পানি দিতে হয়। একদিনও যদি পানি দেওয়া বাদ পড়ে তাহলে এটা থেকে কোনও ফল আসবে না।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘পাঁচ বছরের একটা ডেডিকেশনের পর এই জিনিসটা হয়। পাঁচ বছর পর সেই বাঁশ গাছটা ৯০ ফুটের মতো লম্বা হয়। তারপর সেখান থেকে পানি বের হয়। সেই পানিকে প্রক্রিয়াজাত করে এই দুধ বানানো হয়। আমরা এটা ভারত থেকে আমদানি করি। এটা এক তোলা মানে ১০ গ্রাম, সেটা ৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সেই অনুযায়ী ১০০ গ্রাম ৮০০ টাকা এবং কেজি আট হাজার টাকা।’ রানা বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন এই বাঁশের দুধ আসে তখন সেটা বাঘের দুধ হয়ে যায়। এখানকার ইনোসেন্ট মানুষরা এটাকে বাঘের দুধ বলেই সম্বোধন করেন। এই বাঘের দুধ মূলত ওষুধের কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি চোখের সুস্থতার জন্য ব্যবহার করা হয়, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে, ব্রেইন ভালো রাখে, হাড়ের ক্ষয় রোধে এটি ব্যবহার করা হয়। এটাকে গুঁড়া করে এক চিমটি নিয়ে টক দই বা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খায়।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান শিকদার বলেন, ‘বাঁশের নির্যাস মানবদেহের জন্য উপকারী। তবে সেই নির্যাস নেওয়ার প্রসেস সঠিক হতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ, যা সাধারণত চুল, ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বাঁশের নির্যাস ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে ও কোষ মেরামতের জন্য বেশ উপকারী। এতে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, থায়ামিন, ভিটামিন সি ইত্যাদি থাকে। তবে সেটা সব বাঁশের নির্যাসে থাকে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন পুরান ঢাকায় যেটা বিক্রি হচ্ছে, সেটা বাঁশের নির্যাস কিনা, তা দেখে বলতে হবে-এর গুণাগুণ ঠিক আছে কিনা বা এটা মানসম্মত কিনা। না দেখে তো আর কোনও মন্তব্য করতে পারবো না।’
এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ ফারহানা ইয়াসমিন মিলি জানান, বাঁশের নির্যাস প্রকৃতির সিলিকার সবচেয়ে শক্তিশালী উৎসগুলোর মধ্যে একটি— যা চুল, ত্বক এবং নখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ। এছাড়া থায়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস। বাঁশের নির্যাস কোলাজেন তৈরি করতে, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে, বলিরেখা, কালো দাগ, সুক্ষ্ম রেখা, পিগমেন্টেশন এবং কোষ মেরামতেও সাহায্য করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাঘের দুধ নামে বাঁশের যে নির্যাস বিক্রি হয়— সেটা ইতোপূর্বে আমি শুনেছি। কিন্তু এ সম্পর্কে আমার কাছে পূর্ণ তথ্য নেই। এর উৎপত্তি বা উৎপাদন সম্পর্কে জানার পর গুণাগুণ সম্পর্কে বলতে পারবো। পুরান ঢাকায় বাঘের দুধ নামে যা বিক্রি হচ্ছে, তা যদি আসলেইবাঁশের নির্যাস হয়, তাহলে এটা মানবদেহের জন্য উপকারী। কিন্তু তা যদি মানুষকে বোকা বানিয়ে অর্থ আত্মসাতের ফন্দি হয়, তাহলে হিতে বিপরীত হবে।’