নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় ক্রিয়াশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও নেতৃবৃন্দ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে হামলার জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ও হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই হল ছাড়তে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। তবে শিক্ষার্থীদের অনেকেই হল ছাড়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন।
নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আতিকুর রহমান তার ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ষড়যন্ত্রের হয়নি শেষ, সজাগ থাকো বাংলাদেশ।
শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মো. শফিকুল ইসলাম তার ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, বহিরাগতদের হামলা এই ক্যাম্পাসে মানবো না। ১৯ সেপ্টেম্বর বিসিএস প্রিলি পরীক্ষা। প্রিলি পরীক্ষার্থীরা হল ছেড়ে যাবে কোথায়? ছেলেপেলেদের কিছু করে খেতে দেন।
শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মো. তরিকুল ইসলাম তুষার তার ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, ধিক্কার জানাই এই প্রশাসনকে। অযোগ্য ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ চাই।
ছাত্রশিবিরের বাকৃবি শাখার নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বাকৃবির শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের বর্বরোচিত হামলা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেন, বহিরাগতদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে আশ্রয় নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় নারী শিক্ষার্থী হেনস্তাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকে গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলা নিন্দনীয় ও অনভিপ্রেত। এই ঘটনার জেরে ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা প্রবল আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে।
এদিকে, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বাকৃবি শাখার নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলার বিচার, ক্যাম্পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে সংগঠনটি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা সন্ত্রাস, দখলদারত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গন। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা সে আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি। শত শহীদের রক্তের অর্জনকে এভাবে ভূলুণ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন, ক্যাম্পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন, ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তাদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন।’
হল ছাড়ছেন অনেকেই, বিক্ষোভে ছাত্রদের একাংশ: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের হামলার জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ও হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই হল ছাড়তে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। তবে শিক্ষার্থীদের অনেকেই হল ছাড়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন।
গতকাল রোববার (৩১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কোনো অবস্থাতেই হল ছাড়বেন না বলে তাৎক্ষণিকভাবে জানায়। এদিকে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে শুরু করেন। সকাল ৯টার আগেই ছাত্রীদের হলগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। তবে ছাত্ররা সবাই এখনও হল ছাড়েনি। সকাল ৯টার কিছু পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেআর মার্কেটের সামনে তারা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের হল ছেড়ে দিতে বলেছেন। বাড়ি থেকেও দুশ্চিন্তা করছে। সব মিলিয়ে হল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছি। তবে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, গতকালকের বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, সেসময় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উপরন্তু আমাদেরকে হল থেকে বের করা হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, আমরা এটি মানব না। তারা এখনও হল না ছাড়ার ব্যাপারে অনড় বলে জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সানা/আপ্র/০১/০৯/২০২৫