ঢাকা ০২:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

বাংলা মিডিয়াম’ নিয়ে বিতর্কে কলকাতার লোরেটো কলেজ

  • আপডেট সময় : ০১:২০:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩
  • ১২৫ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক: ‘ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা না করে থাকলে আমাদের কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তির আবেদন করারই প্রয়োজন নেই’- এমন ধরনের একটি বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লোরেটো কলেজ। নানা মহল থেকে চাপের মুখে তারা বিজ্ঞপ্তিটি মঙ্গলবার প্রত্যাহার করে ক্ষমা চেয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাংলা মিডিয়ামে পড়া ছাত্রীদের বিরুদ্ধে কলেজটির এই বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে লোরেটো কলেজের সামনে দিনভর বিক্ষোভ দেখিয়েছে ‘বাংলা পক্ষ’ নামে বাংলা ভাষার পক্ষে লড়াই করা একটি সংগঠন। ওই প্রতিষ্ঠানটি যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও লোরেটো কলেজের প্রিন্সিপালকে তলব করে গোটা বিষয়টি নিয়ে তাদের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের নামী শিক্ষাবিদরাও অনেকে লোরেটো কলেজের এই ধরনের ‘বাংলা মিডিয়াম’-বিরোধী নীতির নিন্দায় সরব হয়েছেন। বিখ্যাত ভাষাবিদ ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘লোরেটো কলেজের ওই ফরমানে আমি কিন্তু এতটুকুও অবাক হইনি। বাংলা মিডিয়ামে পড়া ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আমাদের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা যে প্রায় কুষ্ঠরোগীর মতো ব্যবহার করে এবং তাদের অচ্ছুত বলে মনে করে, এই ঘটনায় সেটাই শুধু আরও একবার প্রমাণ হয়েছে।’ আসলে পশ্চিমবঙ্গে স্কুল পর্যায়ে পড়াশুনার মাধ্যম কি মাতৃভাষা বাংলা হওয়া উচিত না কি ইংরেজি এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশুনা করা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতে চাকরি পাওয়া বা কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সুযোগ বেশি, এই বাস্তবতার কারণে রাজ্যের বহু গরিব বা নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মাও সন্তানকে সাধ্যের বাইরে গিয়ে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়িয়ে থাকেন। অন্যদিকে কলকাতার বাইরে পশ্চিমবঙ্গের জেলা বা মফস্বল শহরগুলো, যেখানে ভালো ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের বেশ অভাব- সেখানকার সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াশুনা করেও বহু ছাত্রছাত্রী কর্মজীবনে দারুণ সাফল্য পাচ্ছেন এমনও প্রচুর উদাহরণ আছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে ‘বাংলা মিডিয়াম’ বনাম ‘ইংলিশ মিডিয়ামে’র একটা সূক্ষ্ম রেষারেষি বরাবরই আছে, যেটাকে আরও একবার সামনে দিয়েছে লোরেটো কলেজের এই ঘটনা। ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত মধ্য কলকাতার লোরেটো কলেজ আসলে একটি খ্রিষ্টান মিশনারি প্রতিষ্ঠান, যেটি শুধু মেয়েদের জন্য। পড়াশুনার উঁচু মান ও কঠোর শৃঙ্খলার জন্য পরিচিত এই কলেজটিকে শহরের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। শতাধিক বছরের পুরনো লোরেটো কলেজের ছাত্রীদের কথ্য ও লিখিত ইংরেজির গুণগত মানও অসাধারণ শহরের শিক্ষাজগতে এ কথাও সুবিদিত। কিন্তু ইংরেজি মিডিয়ামে না পড়ে থাকলে স্নাতক স্তরে আবেদন করারই দরকার নেই, বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা ঘোষণা করেই এখন ফ্যাসাদে পড়েছে লোরেটো কলেজ। নিজেদের ওয়েবসাইটে তারা (ইংরেজিতে) লিখেছিল, “যে শিক্ষার্থীদের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশুনার মাধ্যম ভার্নাকুলার (অর্থাৎ বাংলা বা হিন্দি) ছিল, তাদের ভর্তির আবেদন বিবেচনা করা হবে না।” সোশ্যাল মিডিয়াতে এটা নিয়ে তুমুল হই চই শুরু হওয়ার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথমে সাফাই দিয়েছিল, যেহেতু লোরেটোতে শুধু ইংরেজিতেই ক্লাস হয় তাই অন্য মিডিয়াম থেকে ছাত্রীরা এলে অসুবিধায় পড়বেন বিধায় ওই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। পরে সমালোচনা আরও তীব্র হলে তারা ওই বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তিটি সরিয়ে নেয়। এ বিষয়ে লোরেটোর প্রিন্সিপাল ড. ক্রিস্টেন কুটিনহোর বক্তব্য জানতে চেয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি অবশ্য কোনও জবাব দেননি। এই বিতর্ক শুরু হওয়ার পরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য পরিষ্কার করে দেয়, এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি আইনানুগ নয় এবং বাংলা/হিন্দি মিডিয়াম ছাত্রীদের সঙ্গে বৈষম্য করার কোনও অধিকার লোরেটো কলেজের নেই। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এদিন লোরেটোর প্রিন্সিপালকে তার দফতরে ডেকে পাঠান এবং সেই বৈঠকের কিছুক্ষণ পর লোরেটো কলেজ রাজ্যবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে।
লোরেটো কলেজের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কলকাতার লোরেটো কলেজ নিঃশর্তভাবে ক্ষমাপ্রার্থী বাংলার মানুষের কাছে। ভর্তির ওই নোটিশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আমরা নতুন করে বাংলাকে পরিষেবার দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলা মিডিয়াম’ নিয়ে বিতর্কে কলকাতার লোরেটো কলেজ

আপডেট সময় : ০১:২০:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩

বিদেশের খবর ডেস্ক: ‘ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা না করে থাকলে আমাদের কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তির আবেদন করারই প্রয়োজন নেই’- এমন ধরনের একটি বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লোরেটো কলেজ। নানা মহল থেকে চাপের মুখে তারা বিজ্ঞপ্তিটি মঙ্গলবার প্রত্যাহার করে ক্ষমা চেয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাংলা মিডিয়ামে পড়া ছাত্রীদের বিরুদ্ধে কলেজটির এই বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে লোরেটো কলেজের সামনে দিনভর বিক্ষোভ দেখিয়েছে ‘বাংলা পক্ষ’ নামে বাংলা ভাষার পক্ষে লড়াই করা একটি সংগঠন। ওই প্রতিষ্ঠানটি যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও লোরেটো কলেজের প্রিন্সিপালকে তলব করে গোটা বিষয়টি নিয়ে তাদের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের নামী শিক্ষাবিদরাও অনেকে লোরেটো কলেজের এই ধরনের ‘বাংলা মিডিয়াম’-বিরোধী নীতির নিন্দায় সরব হয়েছেন। বিখ্যাত ভাষাবিদ ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘লোরেটো কলেজের ওই ফরমানে আমি কিন্তু এতটুকুও অবাক হইনি। বাংলা মিডিয়ামে পড়া ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আমাদের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা যে প্রায় কুষ্ঠরোগীর মতো ব্যবহার করে এবং তাদের অচ্ছুত বলে মনে করে, এই ঘটনায় সেটাই শুধু আরও একবার প্রমাণ হয়েছে।’ আসলে পশ্চিমবঙ্গে স্কুল পর্যায়ে পড়াশুনার মাধ্যম কি মাতৃভাষা বাংলা হওয়া উচিত না কি ইংরেজি এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশুনা করা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতে চাকরি পাওয়া বা কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সুযোগ বেশি, এই বাস্তবতার কারণে রাজ্যের বহু গরিব বা নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মাও সন্তানকে সাধ্যের বাইরে গিয়ে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়িয়ে থাকেন। অন্যদিকে কলকাতার বাইরে পশ্চিমবঙ্গের জেলা বা মফস্বল শহরগুলো, যেখানে ভালো ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের বেশ অভাব- সেখানকার সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াশুনা করেও বহু ছাত্রছাত্রী কর্মজীবনে দারুণ সাফল্য পাচ্ছেন এমনও প্রচুর উদাহরণ আছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে ‘বাংলা মিডিয়াম’ বনাম ‘ইংলিশ মিডিয়ামে’র একটা সূক্ষ্ম রেষারেষি বরাবরই আছে, যেটাকে আরও একবার সামনে দিয়েছে লোরেটো কলেজের এই ঘটনা। ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত মধ্য কলকাতার লোরেটো কলেজ আসলে একটি খ্রিষ্টান মিশনারি প্রতিষ্ঠান, যেটি শুধু মেয়েদের জন্য। পড়াশুনার উঁচু মান ও কঠোর শৃঙ্খলার জন্য পরিচিত এই কলেজটিকে শহরের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। শতাধিক বছরের পুরনো লোরেটো কলেজের ছাত্রীদের কথ্য ও লিখিত ইংরেজির গুণগত মানও অসাধারণ শহরের শিক্ষাজগতে এ কথাও সুবিদিত। কিন্তু ইংরেজি মিডিয়ামে না পড়ে থাকলে স্নাতক স্তরে আবেদন করারই দরকার নেই, বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা ঘোষণা করেই এখন ফ্যাসাদে পড়েছে লোরেটো কলেজ। নিজেদের ওয়েবসাইটে তারা (ইংরেজিতে) লিখেছিল, “যে শিক্ষার্থীদের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশুনার মাধ্যম ভার্নাকুলার (অর্থাৎ বাংলা বা হিন্দি) ছিল, তাদের ভর্তির আবেদন বিবেচনা করা হবে না।” সোশ্যাল মিডিয়াতে এটা নিয়ে তুমুল হই চই শুরু হওয়ার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথমে সাফাই দিয়েছিল, যেহেতু লোরেটোতে শুধু ইংরেজিতেই ক্লাস হয় তাই অন্য মিডিয়াম থেকে ছাত্রীরা এলে অসুবিধায় পড়বেন বিধায় ওই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। পরে সমালোচনা আরও তীব্র হলে তারা ওই বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তিটি সরিয়ে নেয়। এ বিষয়ে লোরেটোর প্রিন্সিপাল ড. ক্রিস্টেন কুটিনহোর বক্তব্য জানতে চেয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি অবশ্য কোনও জবাব দেননি। এই বিতর্ক শুরু হওয়ার পরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য পরিষ্কার করে দেয়, এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি আইনানুগ নয় এবং বাংলা/হিন্দি মিডিয়াম ছাত্রীদের সঙ্গে বৈষম্য করার কোনও অধিকার লোরেটো কলেজের নেই। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এদিন লোরেটোর প্রিন্সিপালকে তার দফতরে ডেকে পাঠান এবং সেই বৈঠকের কিছুক্ষণ পর লোরেটো কলেজ রাজ্যবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে।
লোরেটো কলেজের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কলকাতার লোরেটো কলেজ নিঃশর্তভাবে ক্ষমাপ্রার্থী বাংলার মানুষের কাছে। ভর্তির ওই নোটিশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আমরা নতুন করে বাংলাকে পরিষেবার দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’