বিদেশের খবর ডেস্ক: ভারতের দিল্লি, আসাম, ওডিশা, রাজস্থান, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রসহ বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে ‘বাংলাদেশি’ তকমা লাগিয়ে বাংলাভাষীদের হেনস্তার প্রতিবাদে সোচ্চার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।স তবে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের সমালোচনা করে পাল্টা অভিযোগ করেছেন, মমতা রাজ্যে রোহিঙ্গা ও মুসলিম অনুপ্রবেশকে স্বীকৃতি দিতে বাঙালিকে হেনস্তার ধুয়া তুলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ঘৃণ্য চক্রান্তে মেতে উঠেছে।
বিজেপি নেতা শুভেন্দু আজ বুধবার মিছিল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে ভুয়া ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার দাবিতে স্মারকলিপি দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে মমতা বলেছেন, এখন বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্তা করা হচ্ছে। উচ্ছেদ করা হচ্ছে। বাংলায় কথা বললেই ওই সব রাজ্যে তুলে নেওয়া হচ্ছে বাংলাভাষীদের। রাখা হচ্ছে আটককেন্দ্রে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। বাংলায় কথা বললে অপরাধ কিসের? বিজেপি ভয় পেয়ে এখন বাঙালিবিদ্বেষের রাজনীতি শুরু করেছে।
প্রতিবাদ মিছিল শেষে ধর্মতলার ডরিনা ক্রসিংয়ে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় মমতা বলেছেন, ‘বাঙালির ওপর অত্যাচার আমরা সহ্য করব না। মেনে নেব না কোচবিহার, নদিয়ার বাংলাভাষীদের ‘পুশব্যাক’কে। সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে তো বিএসএফ। বিএসএফ তো কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। তাই অনুপ্রবেশের দায় তো কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর বর্তায়।’ তিনি বলেন, ’২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে আবার খেলা হবে। বিজেপি তৈরি থেকো। ভোটের সময় বিজেপি মতুয়াদের চায়, ভোট ফুরালে অত্যাচার।
মমতা বাম দলের সমালোচনা করে বলেন, এখন বাম-রাম জোট বেঁধেছে। জগাই-মাধাই-গদাই এক জোট হয়েছে। এদের প্রতিহত করতে হবে। বাঙালিদের ওপর অত্যাচার আর সহ্য করা হবে না।
মমতার বক্তব্যের পাল্টা জবাবে রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘এতই যখন বাঙালিপ্রাণ, তখন এই বাংলায় কেন অবাঙালি কীর্তি আজাদ ও ইউসুফ পাঠানকে লোকসভা নির্বাচনে মনোনয়ন দিলেন? তখন কি কোনো বাঙালিকে এই আসনে লড়ার জন্য পাননি?’
আসন্ন রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করতে তৃণমূল এবার বাংলাবিদ্বেষের কথা তুলেছে। মমতাদের বিশ্বাস, এ দাবিতে তৃণমূল এবার আসন্ন রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করে আবার পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় বসতে পারবে।
সমাবেশের আগে আগে কলকাতার কলেজ স্কয়ার থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মমতা এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। মিছিল কলেজ স্কয়ার থেকে তিন কিলোমিটার দূরের ধর্মতলার ডরিনা ক্রসিংয়ে শেষ হয়। মিছিলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়সহ তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিধায়কসহ নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। যদিও জাতীয় কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই-লিবারেশন (এমএল) এ হেনস্তার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। তারাও বিভিন্ন প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, এবার বিজেপি হিন্দুত্ব প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকসহ বাংলাভাষীদের বিতাড়নের লক্ষ্য নিয়ে শুরু করেছে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে উচ্ছেদ ও বিতাড়ন। সেই লক্ষ্য নিয়ে এবার আসামে শুরু হয়েছে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাভাষীদের বিতাড়ন ও উচ্ছেদ।
১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দুর্গাপুরে এক জনসভায় যোগ দেওয়ার কথা আছে। আবার ২১ জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে মমতার বিশাল সমাবেশ হবে ধর্মতলায়। মমতা তার আগেই আজ এ মিছিল ও প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়ে কার্যত বিজেপিকে চাপে রাখতে চাইছেন।
বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেন, মমতা যখনই বিপদে পড়েন, তখনই বাঙালি বাঙালি মন্ত্র জপ করেন। ভোটে জিততে অনুপ্রবেশকারীদের ভারতের নাগরিক বানানোর চেষ্টা করেন।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ