ঢাকা ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক ১৯ কর্মকর্তার বিষয়ে তথ্য নিচ্ছে দুদক

  • আপডেট সময় : ১২:৫৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক ১৯ কর্মকর্তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের মধ্যে রয়েছেন তিন সাবেক গভর্নর, বেশ কয়েকজন সাবেক ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তাসহ ভারতীয় দুই নাগরিক।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে দুদক এই তথ্য চায়। ওই চিঠিতে কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, দায়িত্বের পরিধি, কর্মস্থল ও সংশ্লিষ্ট তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা, নীতি শিথিলতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।

তালিকায় তিন সাবেক গভর্নর

তথ্য তলব করা কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ চুরির সময় গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন ড. আতিউর রহমান। ঘটনার পর একই বছরের ১৫ মার্চ তিনি পদত্যাগ করেন।

এছাড়া সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, এসএম মনিরুজ্জামান, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, আহমেদ জামাল এবং বিএফআইইউয়ের সাবেক প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তালিকায় আরো রয়েছেন সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা।

বর্তমান কর্মকর্তারাও তদন্তের আওতায়

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজশাহী অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক, আইসিটি বিভাগের দেবদুলাল রায়, কমন সার্ভিস বিভাগ-২ এর পরিচালক মো. তফাজ্জল হোসেন, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ও অফিসার্স কাউন্সিলের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মসিউজ্জামান খান ও রাহাত উদ্দিনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মসিউজ্জামান খানের নাম দুবার উল্লেখ করা হয়েছে, তবে দুদক নিশ্চিত করেছে যে তিনি একই ব্যক্তি। মেজবাউল হক গত ১৪ সেপ্টেম্বর এক মাসের নোটিশে পদত্যাগ করেন।

দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, রিজার্ভ রক্ষণাবেক্ষণ এবং লেনদেন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত বিভাগগুলোর একাধিক কর্মকর্তা ওই সময় দায়িত্বে ছিলেন।

২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনা

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে প্রায় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো দুই কোটি ডলার ফেরত আসে তাৎক্ষণিকভাবে। ফিলিপাইনে স্থানান্তরিত আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি ডলার পরবর্তীতে ফেরত পাওয়া যায়। বাকি ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধারে এখনো ১২টি মামলা চলমান রয়েছে।

ঘটনার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট, আইটি, পেমেন্ট সিস্টেম ও অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং—এই চারটি বিভাগ সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল।

ভারতীয় দুই নাগরিকের তথ্যও তলব

দুদকের চিঠিতে ভারতীয় নাগরিক নীলা ভান্নান ও রাকেশ আস্তানার বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে। নীলা ভান্নান রিজার্ভ চুরির আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে তিনটি ব্যাংকের লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য ‘সুইফট’ সংযোগের কাজ করেন। আর রিজার্ভ চুরির পর সাইবার নিরাপত্তা দুর্বলতা নিরূপণ ও ‘ফায়ারওয়াল’ ভেদ করে কীভাবে টাকা স্থানান্তর হলো তা যাচাই করতে রাকেশ আস্তানাকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তের অংশ হিসেবে সব তথ্য যাচাইয়ের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এসি/আপ্র/০৫/১০/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক ১৯ কর্মকর্তার বিষয়ে তথ্য নিচ্ছে দুদক

আপডেট সময় : ১২:৫৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক ১৯ কর্মকর্তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের মধ্যে রয়েছেন তিন সাবেক গভর্নর, বেশ কয়েকজন সাবেক ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তাসহ ভারতীয় দুই নাগরিক।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে দুদক এই তথ্য চায়। ওই চিঠিতে কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, দায়িত্বের পরিধি, কর্মস্থল ও সংশ্লিষ্ট তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা, নীতি শিথিলতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।

তালিকায় তিন সাবেক গভর্নর

তথ্য তলব করা কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ চুরির সময় গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন ড. আতিউর রহমান। ঘটনার পর একই বছরের ১৫ মার্চ তিনি পদত্যাগ করেন।

এছাড়া সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, এসএম মনিরুজ্জামান, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, আহমেদ জামাল এবং বিএফআইইউয়ের সাবেক প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তালিকায় আরো রয়েছেন সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা।

বর্তমান কর্মকর্তারাও তদন্তের আওতায়

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজশাহী অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক, আইসিটি বিভাগের দেবদুলাল রায়, কমন সার্ভিস বিভাগ-২ এর পরিচালক মো. তফাজ্জল হোসেন, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ও অফিসার্স কাউন্সিলের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মসিউজ্জামান খান ও রাহাত উদ্দিনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মসিউজ্জামান খানের নাম দুবার উল্লেখ করা হয়েছে, তবে দুদক নিশ্চিত করেছে যে তিনি একই ব্যক্তি। মেজবাউল হক গত ১৪ সেপ্টেম্বর এক মাসের নোটিশে পদত্যাগ করেন।

দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, রিজার্ভ রক্ষণাবেক্ষণ এবং লেনদেন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত বিভাগগুলোর একাধিক কর্মকর্তা ওই সময় দায়িত্বে ছিলেন।

২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনা

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে প্রায় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো দুই কোটি ডলার ফেরত আসে তাৎক্ষণিকভাবে। ফিলিপাইনে স্থানান্তরিত আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি ডলার পরবর্তীতে ফেরত পাওয়া যায়। বাকি ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধারে এখনো ১২টি মামলা চলমান রয়েছে।

ঘটনার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট, আইটি, পেমেন্ট সিস্টেম ও অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং—এই চারটি বিভাগ সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল।

ভারতীয় দুই নাগরিকের তথ্যও তলব

দুদকের চিঠিতে ভারতীয় নাগরিক নীলা ভান্নান ও রাকেশ আস্তানার বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে। নীলা ভান্নান রিজার্ভ চুরির আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে তিনটি ব্যাংকের লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য ‘সুইফট’ সংযোগের কাজ করেন। আর রিজার্ভ চুরির পর সাইবার নিরাপত্তা দুর্বলতা নিরূপণ ও ‘ফায়ারওয়াল’ ভেদ করে কীভাবে টাকা স্থানান্তর হলো তা যাচাই করতে রাকেশ আস্তানাকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তের অংশ হিসেবে সব তথ্য যাচাইয়ের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এসি/আপ্র/০৫/১০/২০২৫