নারী ও শিশু ডেস্ক: বাংলাদেশ থেকে এখনও প্রতি মাসে ৫০০ নারী ও শিশু ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়। তাদের মধ্যে গড়ে ৪০০ জন নারী ও ১০০ জন শিশু থাকে। জাতিসংঘে গৃহীত ‘সর্বজনীন শিশু দিবস-২০১৮ উপলক্ষ্যে সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে পিসিটিএসসিএন কনসোর্টিয়ামভুক্ত সিপ ও ইনসিডিন বাংলাদেশ নামে দুটি সংগঠন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ১০ লাখ নারী ও শিশু পাচার হয়েছে। গত ১০ বছরে শুধুমাত্র ভারতেই প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি নারী ও শিশু পাচার হয়েছে। যাদের বয়স ১২ থেকে ৩০ এর মধ্যে।
সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশের যত শিশু নিখোঁজ বা পাচারের ঘটনা ঘটে তার মাত্র ২৭ শতাংশের খবর দৈনিক পত্রিকায় এবং ১২ শতাংশের খবর টিভি নিউজে উঠে আসে।
সংস্থাটির দাবি, ভারতের কলকাতা, হায়দারাবাদ ও মুম্বাইভিত্তিক একটি চক্র বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে তাদের একটি শক্তিশালী পাচার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এই চক্রটি নারী, শিশু ও কিডনি পাচারে সক্রিয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের প্রদত্ত মানবপাচারের মাসিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭৮ জন শিশু পাচার হয়েছে এবং উদ্ধার হয়েছে ৬০ জন। আর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মাসিক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, একই সময়ে ১২৩ জন শিশু পাচার হয়েছে। কিন্তু, একজন পাচারকারীকেও ধরা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, পিসিটিএসসিএন একটি কনসোর্টিয়াম যা ইনসিডিন বাংলাদেশ, কমিউনিটি পার্টিসিপেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিডি), নারী মৈত্রী, সিপ এবং সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইইপি) নামের উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে গঠিত।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে পিসিটিএসসিএন কনসোর্টিয়ামের শিশু প্রতিনিধি শারমিন সুলতানা স্বর্ণা ও রোকন। তারা জানায়, নারী ও শিশু পাচারের হুমকির কারণে আমাদের দেশের শিশুরা বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের সন্তানেরা ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভালো বেতনের কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ও পরিবারের সম্মতি নিয়েই তাদের নিজেদের আয়ত্ত্বে আনে পাচারকারীরা। এরপর কৌশলে তাদের পাচার করা হয়। শিশু তার পরিবারের প্রতি অনুগত ও দায়িত্বশীল থাকে বলে সে অনেক সময় এই নির্মম পরিণতি ও অমানবিক জীবন নীরবে মেনে নেয়।
তারা বলেন, পাচার নিয়ে পৃথিবীতে বিশাল বাণিজ্য রয়েছে। যার উদ্দেশ্য থাকে যৌনদাসত্ব, জোরপূর্বক শ্রম, বাধ্যতামূলক শোষণমূলক শ্রম ও অঙ্গ পাচারের মতো কার্যকলাপের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন। এটি শিশু অধিকারের সর্বোচ্চ লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়। আর পাচারের শিকার নারী ও শিশুরা মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, মর্যাদাসহ সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পিসিটিএসসিএনের পক্ষ থেকে নারী ও শিশু পাচার রোধে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, শিশুর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা নিরসনে সরকারি ও বেসরকারি কাজের সমন্বয় ও জোরদার, শিশু অধিকার সনদ ও শিশু আইনের আলোকে শিশুর বিকাশের ও সুরক্ষার সব পদক্ষেপ গ্রহণ, শিশুদের বিষয়টি সংযুক্ত করে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২২ বাস্তবায়ন, কর্মপরিকল্পনার তদারকি কার্যক্রম জোরদার করা। শিশু পাচার মোকাবিলায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন বিধিমালা ২০১৭-এ বর্ণিত মানবপাচার দমন সংস্থা, তহবিল ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালকে কার্যকর করার প্রক্রিয়ায় শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা। উদ্ধারকৃত শিশুদের জন্য টেকসই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া পরিচালিত করা। শিশু আইন ২০১৩-এর অধীন শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো মেনে চলা। এবং সচেতনতা অর্জনে প্রয়োজনীয় প্রচারণা কার্যক্রম ও সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে একটি কাঠামো গড়ে তোলা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইনসিডিন বাংলাদেশ ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম খান, এসইইপির সমন্বয়কারী মো জাহিদ হোসেন, সিপিডির সমন্বয়কারী শরীফুল্লাহ রিয়াজসহ প্রমুখ।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ