নিজস্ব প্রতিবেদক : একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাছবি: পিআইডি
বাংলাদেশের পরিণতিও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে-এমন আশঙ্কার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কখনো খেলাপি (ডিফল্টার) হয়নি, হবেও না। দেশের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক মজবুত, সরকার অত্যন্ত সতর্ক।
গতকাল বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। এর আগে বাংলাদেশের পরিণতি শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে—এমন আশঙ্কা করে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছিলেন, বিদেশি ঋণের বোঝা বাংলাদেশ বইতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
বিরোধীদলীয় উপনেতার বক্তব্যের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলীয় উপনেতা শ্রীলঙ্কার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এটা বাস্তব। তবে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত উন্নয়নে যত ঋণ নিয়েছে, সব ঋণ সময়মতো পরিশোধ করা হয়। সমাপনী ভাষণে দ্রব্যমূল্য, রাজধানীতে যানজট নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বেগুনের পরিবর্তে মিষ্টিকুমড়া বা অন্য কোনো সবজি দিয়ে বেগুনি তৈরি করা, যানজট কমাতে ব্যক্তিগত গাড়ি কম বের করার পরামর্শ দেন।
গাড়ি বের করবেন আবার জ্যাম হলে গালি দেবেন, চলবে না : সাধারণ মানুষের জন্য পাবলিক বাস বাড়ানো ও মেট্রোরেল করা হচ্ছে জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, ‘অতিরিক্ত গাড়ি এখন রাস্তায় চলে। সবাই ট্রাফিক রুল মেনে চললে আর গাড়ি কম বের করলে যানজট তো থাকে না। গাড়িতেও চড়বেন, একেকটি পরিবার দু–তিনটি গাড়ি বের করবেন আবার ট্রাফিক জ্যাম হলে গালি দেবেন, এটা তো চলবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন কার জন্য? উন্নয়ন তো এ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য। মানুষ চলাচল করতে পারে তার জন্য। এখন হয়তো আপাতত কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এটা সম্পন্ন হওয়ার পর উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে ৬০ হাজার লোক যাতায়াত করতে পারবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যাতে বেশি কষ্ট না পায়, সে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে। মোটা চালের দাম এখন ৪৬ টাকার মতো, সেটা খুব বেশি বাড়েনি। চিকন ও মাঝারি চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। আলু পাইকারি বাজারে ২০ টাকা খুচরা বাজারে ২৫ টাকা। পেঁয়াজের দামের জন্য এখন কৃষক হাহাকার করছে।
মিষ্টিকুমড়া দিয়ে বেগুনি বানানো যায় : সংসদ নেতা বলেন, ‘বেগুনের দাম ১১০ টাকার ওপরে চলে গেল। সেটা এখন কমে ৮০ টাকায় এসেছে। বেগুন দিয়ে বেগুনি না খেয়ে আরও যেসব সবজি সহজলভ্য আছে, সেটা দিয়ে খেলেই হয়। আমরা তো তাই খাই। বেগুনি না বানিয়ে মিষ্টিকুমড়া দিয়ে খুব ভালো বেগুনি বানানো যায়। আমরা এভাবে করি। সেভাবে করা যায়।’
জিনিসের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বেড়েছে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে জিনিসের দাম বেড়েছে। রড–সিমেন্টসহ প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এটা কেবল বাংলাদেশে নয়, সব দেশে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার জন্য আমেরিকার অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এক ডলারের তেল চার ডলার হয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপে সাড়ে সাত ভাগের ওপরে মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশে ৬ ভাগের নিচে আছে মূল্যস্ফীতি। তিনি বলেন, এই করোনার ধাক্কার মধ্যেও বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ ভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পেয়ে ২৫১১ মার্কিন ডলার হয়েছে। জিনিসের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বেড়েছে। দারিদ্র্যসীমাও হ্রাস পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকতে বিদেশ থেকে কোনো জিনিস কেনার সময় ১০ টাকার জিনিস ২০ টাকায় কিনে বাকি ১০ টাকা পকেটে ঢুকাত। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে সেটা হয় না। আমরা বরং দাম কমিয়ে আনি।’
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ আছে বলেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে, ভারসাম্য আছে। অন্য পথে যারা ক্ষমতা দখল করতে চায়, তারা এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের পেনশনে আইন প্রক্রিয়াধীন : লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় এনে তাদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়ন এবং ওই আইনের আওতায় একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য : সংবিধান নিয়ে জি এম কাদেরের এক বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য হলো এমন একটি দলের থেকে সংবিধানের বিষয় শুনতে হচ্ছে, যে দলটি ক্ষমতায় এসেছিল সংবিধান লঙ্ঘন করে, ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে মার্শাল ল জারি করে। মার্শাল লর মাধ্যমে যাদের জন্ম, যার নেতা ক্ষমতাই দখল করেছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে বিদায় দিয়ে—সেনাপ্রধান হয়ে গেলেন রাষ্ট্রপ্রধান। যে সংবিধান স্থগিত করে ক্ষমতায় এসেছিল, তার থেকে আজকে আমাদের সংবিধান শিখতে হচ্ছে। সংবিধানের ব্যাখ্যা শুনতে হচ্ছে।’
বাংলাদেশ কখনো ঋণখেলাপি হয়নি, হবেও না: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
ট্যাগস :
বাংলাদেশ কখনো ঋণখেলাপি হয়নি
জনপ্রিয় সংবাদ