নিজস্ব প্রতিবেদক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশে আরব বসন্তের সম্ভাবনা নিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার তো নিশ্চয় মনে হয় না এ ধরনের কোনো সুযোগ আছে।’
গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘৫২ বছরে বাংলাদেশের অর্জন’ শীর্ষক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ইস্যুতে রুশ মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার বক্তব্যের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকেরা। আরব বসন্তের সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার তো নিশ্চয় মনে হয় না এ ধরনের কোনো সুযোগ আছে। আমরা একটা গণতান্ত্রিক দেশ। শেখ হাসিনার কারণে আমাদের দেশে গণতন্ত্র সমুন্নত আছে। আর আমরা ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করব। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেটা করব। আমরা খুব ভালোভাবে চলছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া কী বলেছে, এটা আমাদের ইস্যু নয়। এটা ওদের জিজ্ঞাসা করেন। অনেকে অনেক ধরনের কথা বলবে কিন্তু আমরা এটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আমরা সার্বভৌম, আমাদের ভারসাম্য পররাষ্ট্রনীতি।’ সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’Ñএটার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কে কী বলল, না বলল, এটা তাদের মাথাব্যথা। আমরা পরাশক্তিগুলোর টানাটানিতে পা দিতে চাই না। আমাদের ভারসাম্য কূটনীতি নিয়ে আমরা চলতে চাই।’
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চান, অন্য কিছু দরকার নাই বলেন তিনি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চান বলে জানান মন্ত্রী। গত শুক্রবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জনগণের ভোটের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সন্তোষজনক মনে না হলে ‘আরব বসন্তের’ মতো করে বাংলাদেশকে আরও অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হতে পারে।’
বাংলাদেশে আরব বসন্তের মত অবস্থা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের মনঃপুত না হলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ‘আরব বসন্তের মত’ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করেছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “প্রধান শিল্পগুলো আক্রমণের শিকার হতে পারে। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ‘নাগরিকের গণতান্ত্রিক ইচ্ছার প্রতিফলনের বাধাগ্রস্ত করেছেন’, এমন প্রমাণহীন বিষয়ে অভিযুক্ত হতে পারেন।
“যদি জনগণের ইচ্ছার প্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের মনঃপুত না হয়, আরব বসন্তের মত ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করার পরবর্তী প্রচেষ্টা চালানো হতে পারে।”
২০১০ সালের শুরু থেকে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণ আন্দোলনের ঢেউ বয়ে যায়। সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে তিউনিসিয়া, মিশরে, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে। হোসনি মুবারক, মুয়াম্মর আল-গাদ্দাফির মত দীর্ঘদিনের শাসকদের পতন ঘটে। পশ্চিমা সাংবাদিকদের লেখায় দেশে দেশে ওই আন্দোলন ‘আরব বসন্ত’ নাম পায়। বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের ইউরোপীয় মিত্রদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এসব আন্দোলন সফল হয়। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বাক্য বিনিময় চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এর আগে রাশিয়া অভিযোগ করেছিল, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে এবং ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা করতে বিরোধী পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই অভিযোগ অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, বাংলাদেশ বিষয়ে রাশিয়া যে বক্তব্য রেখেছে, সেটি তাদের ‘ধারাবাহিক অপব্যাখ্যার’ অংশ। এবারের বিবৃতিতে মারিয়া জাখারোভা আবারও বিরোধী দলের আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিশনগুলোর সম্পর্ক থাকার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “১২-১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরোধীরা বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ, বাসে অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘাত করেছে। এসব ঘটনা এবং ঢাকায় পশ্চিমা মিশনগুলোর উত্তেজনার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আমরা দেখছি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের, যা ইতোপূর্বে ২২ নভেম্বরের ব্রিফিংয়ও আমরা আলোচনা করেছি।”
তিনি বলেন, “আসন্ন সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ আরো বড় পরিসরে চাপের অস্ত্র ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।” ওয়াশিংটনের দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ওয়াশিংটনের বোধ ফিরবে এবংএকটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্পষ্ট হস্তক্ষেপ থেকে তারা বিরত থাকবে– সে সম্ভাবনা খুবই কম। “তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, বিদেশি শক্তির এসব কর্মকা-ের পরও বাংলাদেশে ক্ষমতার প্রশ্নটি শেষ পর্যন্ত জনগণের দ্বারাই নির্ধারিত হবে; অন্য কারো মাধ্যমে নয়।”
বাংলাদেশে আরব বসন্তের সম্ভাবনা নাকচ করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জনপ্রিয় সংবাদ