ঢাকা ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫
গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ছাত্রদলের সমাবেশে তারেক রহমান

বাংলাদেশের মানুষ আর প্রতিহিংসা-প্রতিশোধের রাজনীতি চায় না

  • আপডেট সময় : ১০:০০:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রোববার শাহবাগে ছাত্রদল আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুংয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের মানুষ আর বিভেদ-বিরোধ ও প্রতিহিংসা–প্রতিশোধের রাজনীতি চায় না বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ এখন একটি পরিণত দেশ। এই পরিণত বাংলাদেশে জনগণ আর বিভেদ–বিরোধ ও প্রতিহিংসা-প্রতিশোধের রাজনীতি চায় না। জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চায়।

রোববার (৩ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রদল।
ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে উচ্চকিত বিএনপি আগামী দিনে মানবিক মানুষ তৈরির রাজনীতি শুরু করতে চায় বলে জানিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপির আগামী দিনের নীতি কর্মসংস্থান সৃষ্টি আর নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার রাজনীতি। বিএনপির নীতি আজকের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করার রাজনীতি। মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত কর্মমূখী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রাজনীতি।

‘ফ্যাসিস্ট চক্র’ শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করেছে।
কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বিএনপি আগামী দিনে শিক্ষা কারিকুলাম ঢেলে সাজাতে কাজ করছে বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যদি স্কুল পর্যায় থেকে যা যে ক্ষেত্রে আগ্রহ আছে, সেদিকে ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়, এ ধরনের শিক্ষা থাকলে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। তাহলে একজন শিক্ষার্থী স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ হলে তাকে বেকারত্বের অভিশাপ পোহাতে হবে না। বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর শেষ করার পর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করতে হবে না। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিএনপি স্কুল পর্যায় থেকে ব্যবহারিক কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে আগামী দিনে শিক্ষা কারিকুলাম ঢেলে সাজানোর কাজ করছে।

তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষে হোক: আগামী নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের কাছে ভোট চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তোমাদের হারানো ভোটের অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠার এক বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান, তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি তোমরা আগামী দিনে সাহস ও সততার সঙ্গে এগিয়ে যাও, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ তোমাদের সঙ্গে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি পরিণত দেশ। এই দেশের জনগণ আর বিরোধ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি চায় না। রাজনৈতিক দলগুলোকে সে কারণেই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জনগণ চায়, রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। সুতরাং কথা বলার রাজনীতি নয়, আমরা শুরু করবো মানুষের জীবনমান উন্নয়নের রাজনীতি। ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি গড়তে হবে দেশকে। তারেক রহমান বলেন, একজন মায়ের চোখে বাংলাদেশ যেমন, আমরা নবীন এবং প্রবীণ সবাই মিলে তেমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। দেশের সব শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আজকের এই তারুণ্য ও শিক্ষার্থীরা আগামীর বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থির উত্থান কিংবা পুনর্বাসন ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে, সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ছাত্র সমাবেশ শুরু হয়। বেলা সোয়া তিনটার দিকে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, হাবিব উন নবী খান, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।

ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা পূরণে ছাত্রদলের ৯ দফা প্রতিশ্রুতি: ২৪-এর ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা পূরণের ৯ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। রোববার (৩ আগস্ট) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত সমাবেশে এই ৯ দফা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
ছাত্রদলের ৯ দফা প্রতিশ্রুতি হলো-
১. শিক্ষাঙ্গনে গেস্টরুম নির্যাতন, গণরুম সংস্কৃতি, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে বাধ্য করা এবং রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের মতো ঘৃণিত চর্চার স্থায়ী বিলোপসাধন এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ছাত্রদল সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
২. ক্যাম্পাসে ও আবাসিক হলে প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ আবাসন, পুষ্টিকর খাদ্য, বাসযোগ্য কক্ষ এবং পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ছাত্রদল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
৩. ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তা, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি জনকল্যাণমুখী, পরমতসহিষ্ণু, উদার এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ছাত্রদলের প্রতিটি নেতাকর্মী নিবেদিত থাকবে। শিক্ষাক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্রগঠনের সব পর্যায়ে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং নারীদের জন্য শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ছাত্রদল জোরালো উদ্যোগ নেবে।
৪. স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষা এবং জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, আধিপত্যবাদবিরোধী এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী চিন্তার সন্নিবেশনে রাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশপন্থি সর্বজনীন শিক্ষানীতি ও পাঠক্রম প্রণয়নের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে ছাত্রদল।
৫. বেকারত্ব দূর করতে রাষ্ট্র কর্তৃক কর্মমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে ছাত্রদল জোরালো উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধ এবং এসব পরীক্ষাব্যবস্থাকে দুর্নীতি ও জালিয়াতিমুক্ত করতে ছাত্রদল সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে।
৬. মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস এবং মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

৭. ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৬৯, ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর, ১৯৯০ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভাবধারার সাংস্কৃতিক চর্চা বেগবান করার লক্ষ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলবে ছাত্রদল।
৮. শিক্ষাঙ্গনগুলোতে শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ছাত্রদল জোরালো ভূমিকা রাখবে।
৯. বাংলাদেশে যেন আর কখনও ঘৃণ্য ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে, সে লক্ষ্যে ছাত্রদল সদা সোচ্চার থাকবে এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা নিশ্চিত করতে ছাত্রদল আপামর ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে নিরন্তরভাবে কাজ করে যাবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ছাত্রদলের সমাবেশে তারেক রহমান

বাংলাদেশের মানুষ আর প্রতিহিংসা-প্রতিশোধের রাজনীতি চায় না

আপডেট সময় : ১০:০০:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের মানুষ আর বিভেদ-বিরোধ ও প্রতিহিংসা–প্রতিশোধের রাজনীতি চায় না বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ এখন একটি পরিণত দেশ। এই পরিণত বাংলাদেশে জনগণ আর বিভেদ–বিরোধ ও প্রতিহিংসা-প্রতিশোধের রাজনীতি চায় না। জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চায়।

রোববার (৩ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রদল।
ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে উচ্চকিত বিএনপি আগামী দিনে মানবিক মানুষ তৈরির রাজনীতি শুরু করতে চায় বলে জানিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপির আগামী দিনের নীতি কর্মসংস্থান সৃষ্টি আর নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার রাজনীতি। বিএনপির নীতি আজকের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করার রাজনীতি। মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত কর্মমূখী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রাজনীতি।

‘ফ্যাসিস্ট চক্র’ শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করেছে।
কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বিএনপি আগামী দিনে শিক্ষা কারিকুলাম ঢেলে সাজাতে কাজ করছে বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যদি স্কুল পর্যায় থেকে যা যে ক্ষেত্রে আগ্রহ আছে, সেদিকে ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়, এ ধরনের শিক্ষা থাকলে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। তাহলে একজন শিক্ষার্থী স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ হলে তাকে বেকারত্বের অভিশাপ পোহাতে হবে না। বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর শেষ করার পর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করতে হবে না। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিএনপি স্কুল পর্যায় থেকে ব্যবহারিক কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে আগামী দিনে শিক্ষা কারিকুলাম ঢেলে সাজানোর কাজ করছে।

তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষে হোক: আগামী নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের কাছে ভোট চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তোমাদের হারানো ভোটের অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠার এক বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান, তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি তোমরা আগামী দিনে সাহস ও সততার সঙ্গে এগিয়ে যাও, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ তোমাদের সঙ্গে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি পরিণত দেশ। এই দেশের জনগণ আর বিরোধ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি চায় না। রাজনৈতিক দলগুলোকে সে কারণেই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জনগণ চায়, রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। সুতরাং কথা বলার রাজনীতি নয়, আমরা শুরু করবো মানুষের জীবনমান উন্নয়নের রাজনীতি। ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি গড়তে হবে দেশকে। তারেক রহমান বলেন, একজন মায়ের চোখে বাংলাদেশ যেমন, আমরা নবীন এবং প্রবীণ সবাই মিলে তেমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। দেশের সব শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আজকের এই তারুণ্য ও শিক্ষার্থীরা আগামীর বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থির উত্থান কিংবা পুনর্বাসন ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে, সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ছাত্র সমাবেশ শুরু হয়। বেলা সোয়া তিনটার দিকে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, হাবিব উন নবী খান, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।

ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা পূরণে ছাত্রদলের ৯ দফা প্রতিশ্রুতি: ২৪-এর ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা পূরণের ৯ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। রোববার (৩ আগস্ট) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত সমাবেশে এই ৯ দফা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
ছাত্রদলের ৯ দফা প্রতিশ্রুতি হলো-
১. শিক্ষাঙ্গনে গেস্টরুম নির্যাতন, গণরুম সংস্কৃতি, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে বাধ্য করা এবং রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের মতো ঘৃণিত চর্চার স্থায়ী বিলোপসাধন এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ছাত্রদল সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
২. ক্যাম্পাসে ও আবাসিক হলে প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ আবাসন, পুষ্টিকর খাদ্য, বাসযোগ্য কক্ষ এবং পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ছাত্রদল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
৩. ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তা, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি জনকল্যাণমুখী, পরমতসহিষ্ণু, উদার এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ছাত্রদলের প্রতিটি নেতাকর্মী নিবেদিত থাকবে। শিক্ষাক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্রগঠনের সব পর্যায়ে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং নারীদের জন্য শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ছাত্রদল জোরালো উদ্যোগ নেবে।
৪. স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষা এবং জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, আধিপত্যবাদবিরোধী এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী চিন্তার সন্নিবেশনে রাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশপন্থি সর্বজনীন শিক্ষানীতি ও পাঠক্রম প্রণয়নের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে ছাত্রদল।
৫. বেকারত্ব দূর করতে রাষ্ট্র কর্তৃক কর্মমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে ছাত্রদল জোরালো উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধ এবং এসব পরীক্ষাব্যবস্থাকে দুর্নীতি ও জালিয়াতিমুক্ত করতে ছাত্রদল সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে।
৬. মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস এবং মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

৭. ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৬৯, ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর, ১৯৯০ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভাবধারার সাংস্কৃতিক চর্চা বেগবান করার লক্ষ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলবে ছাত্রদল।
৮. শিক্ষাঙ্গনগুলোতে শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ছাত্রদল জোরালো ভূমিকা রাখবে।
৯. বাংলাদেশে যেন আর কখনও ঘৃণ্য ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে, সে লক্ষ্যে ছাত্রদল সদা সোচ্চার থাকবে এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা নিশ্চিত করতে ছাত্রদল আপামর ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে নিরন্তরভাবে কাজ করে যাবে।