নিজস্ব প্রতিবেদক : আসছে অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে বলে বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে। বৈশ্বিক আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটির বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শীর্ষ দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদনের জুন সংখ্যায় এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্টে’ বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গত বছরের দিনগুলোর চেয়ে নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত ও মৃতের দৈনিক সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত জনসংখ্যার ক্ষুদ্র একটি অংশকে টিকা দিতে পেরেছে
“কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে তা মোকাবিলায় বিধিনিষেধ আরোপের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কর্মস্থলে চলাফেরা ও বেচাকেনা মহামারীপূর্ব পরিস্থিতির অনেক নিচে নেমেছে।”
করোনাভাইরাস মহামারীর এমন গুরুতর পরিস্থিতির কারণে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি চাপের মুখে থাকবে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক। তবে বরাবরের মতোই এই পূর্বাভাসের বেশ কিছুটা বাড়িয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যা গত ৩ জুন প্রস্তাবিত বাজেট তুলে ধরা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরেও সরকারের প্রাক্বলনের চেয়ে অনেক কম ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক।
সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য প্রথমে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্বলন করেছিল। কিন্তু মহামারী পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তা সংশোধন করে প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্বলন করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের ১ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দেয়। পরে মার্চ মাসে দক্ষিণ এশিয়ার হালনাগাদে তা বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ধরা হয়। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি বলছে, ভবিষ্যতে স্বাভাবিক কর্মকা-ে ফেরা, মাঝারি পর্যায়ের মূল্যস্ফীতি ও তৈরি পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধির উপর ভর করে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি ‘ব্যক্তিগত ভোগ’ জোরালো থাকবে। তার ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে হলেও প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত থাকবে। ফলে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১ শতাংশ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক ২ শতাংশে উঠতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের জন্য অভ্যন্তরীণ আর্থিক খাতের চাপ উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি হিসেবে থাকবে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব দেশের মোট ঋণের অংশ হিসেবে ‘মন্দ ঋণের’ পরিমাণ মহামারীর আগেই অনেক বেড়ে যায়, যার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে মন্দা তৈরি হয়েছে। এটা বেসরকারি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশ্বব্যাংক বলছে, আগামী অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। এ ছাড়া পাকিস্তানে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ২০২১ সালে বিশ্বের গড় প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। গত ৮০ বছরের মধ্যে মন্দাপরবর্তী সময়ে এত প্রবৃদ্ধি আর হয়নি। কারণ বিশ্বের কয়েকটি বড় দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনো মহামারীর কারণে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.১%: বিশ্ব ব্যাংক
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ