ঢাকা ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

‘বাংলাদেশের চোখে জলবায়ু পরিবর্তন’

  • আপডেট সময় : ০৩:০৫:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ নভেম্বর ২০২১
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : জলবায়ু সঙ্কটে মানুষের জীবন আর নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতকে বাঁচাতে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বৈশ্বিক সংহতির আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই সংহতির লক্ষ্য হবে সহযোগিতামূলক এবং সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া, আর তা সফল করতে উন্নত দেশগুলোকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই এখন জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ক্লাইমেট চেইঞ্জ থ্রু দ্য লেন্স অব বাংলাদেশ শিরোনামে লেখা এক নিবন্ধে তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজন ও প্রশমনের নানা উদ্যোগে যে অভিজ্ঞতা ও সাফল্য এসেছে, তা উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বিনিময়ে বাংলাদেশ প্রস্তুত।
জার্মানভিত্তিক সাময়িকী বার্লিন পালসে প্রকাশিত তার ওই নিবন্ধ গত ২২ নভেম্বর পুনঃপ্রকাশ করে দ্য ডিপ্লোম্যাট। আজকের প্রত্যাশার পাঠকদের জন্য নিবন্ধটির বাংলা তর্জমা প্রকাশ করা হল।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার শেষ প্রান্তে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় প্রায়ই জলবায়ুজনিত দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যত পৃথিবীর যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার, তা সংশোধনের কোনো উপায় থাকবে না, আর এ বাস্তবতা অস্বীকার করারও উপায় নেই।
প্রলম্বিত হতে থাকা বর্ষায় স্থানীয় পর্যায়ে বৃষ্টিপাতের মাত্রায় ব্যাপক তারতম্য দেখা দেবে। এর প্রভাবে আরও ঘনঘন বন্যা দেখা দেবে। তাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। আর সেটা হলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে, সংকটে পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা। জলবায়ু পরিবর্তন যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ডেকে আনছে, দেশের মানুষের জীবন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা তৈরি করছে হুমকি।
আসন্ন এই সর্বনাশের কথা ভেবেই আমরা জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, আর্থিক প্রস্তুতি এবং ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর অভিযোজনে সহযোগিতার কাজে হাত দিয়েছি। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অভিজ্ঞতা ও সাফল্য এসেছে, তা আমরা উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বিনিময়ও করতে পারি।
এশিয়া, আফ্রিকা, ক্যারিবিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও দক্ষিণ আমেরিকার ৪৮ দেশের জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ প্রণয়নের মাধ্যমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সিভিএফ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই গত জুলাই মাসে প্রথম এ ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যেখানে জলবায়ু-সম্পর্কিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থায়নের কৌশলগত একটি বিনিয়োগ কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে জার্মানি এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ কর্মসূচির মূল উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শক্তি সঞ্চয়ের জন্য অবকাঠামো, পাওয়ার-গ্রিডের আধুনিকায়ন এবং কার্বন ট্রেডিং। বাংলাদেশের শিল্প এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোর আর্থিক সুরক্ষা এবং স্থানীয়ভাবে অভিযোজন নিশ্চিত করারও ওপরও সেখানে নজর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জলবায়ু সহনশীল এবং প্রকৃতিভিত্তিক কৃষি ও মৎস্যসম্পদের উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব পরিবহন এবং স্বাস্থ্য কর্মসূচির বিকাশ মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশ্ব যখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার বিস্তৃত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আর সে কারণেই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, সীমিত ভূ-সম্পদ, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কোভিড সংকট মোকাবেলা করেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হতি ধরে রাখতে পেরেছে।
গত ২০ বছরে আমরা কৃষি উৎপাদন বাড়িয়েছি। ১৯৭১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের ধান উৎপাদন প্রায় তিনগুন হয়েছে। এ পর্যন্ত একশর বেশি উচ্চ-ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে খরা সহিষ্ণু এবং তাপ সহনশীল জাতও রয়েছে। এছাড়া খাদ্যের চাহিদা মেটাতে, সামাজিক চ্যালেঞ্জ প্রশমিত করতে এবং জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অনেক এলাকায় ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বাংলাদেশ সামুদ্রিক বাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করছে, উপকূলীয় এলাকাকে সুরক্ষা দিতে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে সবুজ বেষ্টনী। নদী তীরের লাখো মানুষের জীবন রক্ষা ও সম্পদ সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ যাতে মেলে, সেজন্য ভাঙ্গনের পূর্বাভাস ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। দুর্যোগে দ্রুত সাড়া দিতে স্থানীয় সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবকদের ক্ষমতায়ন ও সংগঠিত করতে নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গড়ে তোলাও একটি কার্যকর প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ হতে পারে।
সবশেষে, আমার সরকার সবুজ বেষ্টনীর উন্নয়ন ও বনায়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ১ কোটি ১৫ লাখের বেশি চারা রোপণ করেছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলেই রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। স্থলজ বনের চেয়ে এর কার্বন সঞ্চয়ের ক্ষমতা প্রায় পাঁচগুণ বেশি। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুাযায়ী বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সীমিত রাখার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের পথ অনুসরণ করছে। তবে সেই লক্ষ্য অর্জনে যে গতি ও ব্যাপকতা দরকার, সব দেশের অংশগ্রহণ ছাড়া তা সম্ভব নয়। সেজন্য বাংলাদেশ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি বৈশ্বিক সংহতির আহ্বান জানাচ্ছে, যার লক্ষ্য হবে সহযোগিতামূলক এবং সমন্বিত পদক্ষেপ এগিয়ে নেওয়া। তবে সেক্ষেত্রে জার্মানির মত উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে উদ্যোগ ও আন্তরিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনে তাদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। তাদের উচিত উদ্ভাবনী প্রযুক্তি হস্তান্তর, সক্ষমতা তৈরি এবং অভিযোজন ও প্রশমনে জলবায়ু তহবিল বাড়ানোর মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে সহায়তা করা। অংশীদারত্বমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশসন ও অভিযোজনের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগিয়ে কার্বন নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের মাধ্যমে বৈশ্বিক সম্প্রদায় এখানে নেতৃত্ব দিতে পারে। সেই সঙ্গে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও দায়িত্বশীল হতে হবে, যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয়। কয়েক দশক ধরে এমন দায়িত্বশীল আচরণের উদাহরণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘বাংলাদেশের চোখে জলবায়ু পরিবর্তন’

আপডেট সময় : ০৩:০৫:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ নভেম্বর ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : জলবায়ু সঙ্কটে মানুষের জীবন আর নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতকে বাঁচাতে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বৈশ্বিক সংহতির আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই সংহতির লক্ষ্য হবে সহযোগিতামূলক এবং সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া, আর তা সফল করতে উন্নত দেশগুলোকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই এখন জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ক্লাইমেট চেইঞ্জ থ্রু দ্য লেন্স অব বাংলাদেশ শিরোনামে লেখা এক নিবন্ধে তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজন ও প্রশমনের নানা উদ্যোগে যে অভিজ্ঞতা ও সাফল্য এসেছে, তা উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বিনিময়ে বাংলাদেশ প্রস্তুত।
জার্মানভিত্তিক সাময়িকী বার্লিন পালসে প্রকাশিত তার ওই নিবন্ধ গত ২২ নভেম্বর পুনঃপ্রকাশ করে দ্য ডিপ্লোম্যাট। আজকের প্রত্যাশার পাঠকদের জন্য নিবন্ধটির বাংলা তর্জমা প্রকাশ করা হল।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার শেষ প্রান্তে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় প্রায়ই জলবায়ুজনিত দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যত পৃথিবীর যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার, তা সংশোধনের কোনো উপায় থাকবে না, আর এ বাস্তবতা অস্বীকার করারও উপায় নেই।
প্রলম্বিত হতে থাকা বর্ষায় স্থানীয় পর্যায়ে বৃষ্টিপাতের মাত্রায় ব্যাপক তারতম্য দেখা দেবে। এর প্রভাবে আরও ঘনঘন বন্যা দেখা দেবে। তাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। আর সেটা হলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে, সংকটে পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা। জলবায়ু পরিবর্তন যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ডেকে আনছে, দেশের মানুষের জীবন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা তৈরি করছে হুমকি।
আসন্ন এই সর্বনাশের কথা ভেবেই আমরা জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, আর্থিক প্রস্তুতি এবং ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর অভিযোজনে সহযোগিতার কাজে হাত দিয়েছি। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অভিজ্ঞতা ও সাফল্য এসেছে, তা আমরা উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বিনিময়ও করতে পারি।
এশিয়া, আফ্রিকা, ক্যারিবিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও দক্ষিণ আমেরিকার ৪৮ দেশের জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ প্রণয়নের মাধ্যমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সিভিএফ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই গত জুলাই মাসে প্রথম এ ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যেখানে জলবায়ু-সম্পর্কিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থায়নের কৌশলগত একটি বিনিয়োগ কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে জার্মানি এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ কর্মসূচির মূল উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শক্তি সঞ্চয়ের জন্য অবকাঠামো, পাওয়ার-গ্রিডের আধুনিকায়ন এবং কার্বন ট্রেডিং। বাংলাদেশের শিল্প এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোর আর্থিক সুরক্ষা এবং স্থানীয়ভাবে অভিযোজন নিশ্চিত করারও ওপরও সেখানে নজর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জলবায়ু সহনশীল এবং প্রকৃতিভিত্তিক কৃষি ও মৎস্যসম্পদের উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব পরিবহন এবং স্বাস্থ্য কর্মসূচির বিকাশ মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশ্ব যখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার বিস্তৃত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আর সে কারণেই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, সীমিত ভূ-সম্পদ, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কোভিড সংকট মোকাবেলা করেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হতি ধরে রাখতে পেরেছে।
গত ২০ বছরে আমরা কৃষি উৎপাদন বাড়িয়েছি। ১৯৭১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের ধান উৎপাদন প্রায় তিনগুন হয়েছে। এ পর্যন্ত একশর বেশি উচ্চ-ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে খরা সহিষ্ণু এবং তাপ সহনশীল জাতও রয়েছে। এছাড়া খাদ্যের চাহিদা মেটাতে, সামাজিক চ্যালেঞ্জ প্রশমিত করতে এবং জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অনেক এলাকায় ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বাংলাদেশ সামুদ্রিক বাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করছে, উপকূলীয় এলাকাকে সুরক্ষা দিতে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে সবুজ বেষ্টনী। নদী তীরের লাখো মানুষের জীবন রক্ষা ও সম্পদ সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ যাতে মেলে, সেজন্য ভাঙ্গনের পূর্বাভাস ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। দুর্যোগে দ্রুত সাড়া দিতে স্থানীয় সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবকদের ক্ষমতায়ন ও সংগঠিত করতে নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গড়ে তোলাও একটি কার্যকর প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ হতে পারে।
সবশেষে, আমার সরকার সবুজ বেষ্টনীর উন্নয়ন ও বনায়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ১ কোটি ১৫ লাখের বেশি চারা রোপণ করেছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলেই রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। স্থলজ বনের চেয়ে এর কার্বন সঞ্চয়ের ক্ষমতা প্রায় পাঁচগুণ বেশি। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুাযায়ী বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সীমিত রাখার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের পথ অনুসরণ করছে। তবে সেই লক্ষ্য অর্জনে যে গতি ও ব্যাপকতা দরকার, সব দেশের অংশগ্রহণ ছাড়া তা সম্ভব নয়। সেজন্য বাংলাদেশ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি বৈশ্বিক সংহতির আহ্বান জানাচ্ছে, যার লক্ষ্য হবে সহযোগিতামূলক এবং সমন্বিত পদক্ষেপ এগিয়ে নেওয়া। তবে সেক্ষেত্রে জার্মানির মত উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে উদ্যোগ ও আন্তরিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনে তাদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। তাদের উচিত উদ্ভাবনী প্রযুক্তি হস্তান্তর, সক্ষমতা তৈরি এবং অভিযোজন ও প্রশমনে জলবায়ু তহবিল বাড়ানোর মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে সহায়তা করা। অংশীদারত্বমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশসন ও অভিযোজনের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগিয়ে কার্বন নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের মাধ্যমে বৈশ্বিক সম্প্রদায় এখানে নেতৃত্ব দিতে পারে। সেই সঙ্গে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও দায়িত্বশীল হতে হবে, যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয়। কয়েক দশক ধরে এমন দায়িত্বশীল আচরণের উদাহরণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।