ঢাকা ০৯:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের আল-সাদাত মনোনীত শিশু শান্তি পুরস্কারে

  • আপডেট সময় : ০৫:১৩:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক: মাত্র ১৫ বছর বয়সী শাহী আল-সাদাত। বাংলাদেশে শিশু অধিকার রক্ষায় দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করছে। এ বছর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারে জন্য মনোনীত হয়েছে সে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মেহেরপুর থেকে সুপারিশের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ পুরস্কারকে ‘শিশুদের নোবেল’ও বলা হয়ে থাকে।
১৩ বছর বয়সে শাহী প্রতিষ্ঠা করে দ্য স্টার্টআপ আইও; যা বাংলাদেশে শিশু অধিকার রক্ষায় কাজ করে। এর সমস্ত মুনাফা শিশুদের সুরক্ষার জন্য ব্যয় করা হয়। ২০০৯ সালের ২২ মার্চ মেহেরপুর জেলার একটি ছোট গ্রামে জন্ম নেওয়া শাহী বর্তমানে দেশের অন্যতম শিশু অধিকারকর্মী ও স্টার্টআপ আইওর প্রতিষ্ঠাতা। সে স্টার্টআপ সাইবার, কিডস হেলপলিঙ্ক, গার্লস টিনসেফ এবং টিন এক্স নামে বিভিন্ন উদ্যোগ পরিচালনা করছে। তার এই মনোনয়ন স্টার্টআপ সাইবার ও কিডস হেলপলিংকের ওপর বেশি ভিত্তি করে হয়েছে।
মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহী তার সহপাঠীদের অধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। তার অদম্য ইচ্ছা অনলাইন ও অফলাইনে শিশুদের সব ধরনের হয়রানি ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে; যা তাকে এই অসাধারণ উদ্যোগের পথে নিয়ে যায়।
শাহী স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম হাসানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর। তার এই উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন এবং তাকে নিজের সন্তানের মতো দেখে অনুপ্রাণিত করেন জেলা প্রশাসনক। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় শাহী প্রতিষ্ঠা করে কিডস হেলপলিংক, স্টার্টআপ সাইবার, গার্লস টিনসেফ এবং টিন এক্স। দ্য স্টার্টআপ আইও তার আয়কে শুধু শিশু সুরক্ষা সচেতনতা বাড়ানোর কাজে ব্যয় করে এবং সেমিনার, পোস্টার, ব্যানার ও নিরাপত্তা ভিডিও নির্মাণে নিয়োজিত।
শাহী উদ্যোগ মেহেরপুরের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। স্টার্টআপ আইও এর অধীনে ইতোমধ্যে ১৫৭টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের পাঁচটি জেলায়, যার মধ্যে রয়েছে মেহেরপুর ও সিলেট। এছাড়া অনলাইন সেমিনারেরও আয়োজন করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। গার্লস টিনসেফের মাধ্যমে শাহিল কিশোরীদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছে; যা তার মা মোসাম্মৎ সুরাইয়া আক্তার ও বন্ধু মাইশা মালিহা সোহার অনুপ্রেরণায় শুরু হয়েছে। তার দল প্রায় সাতটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে।
শিশুদের আইনি সহায়তার লক্ষ্যে কিডস হেলপলিংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে; যা মেহেরপুরের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ শামীম হাসানের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়েছে। এই হেলপলিংকটি শিশুদের আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে দ্য স্টার্টআপ আইও; যেখানে শিশু বিয়ে, শিশুশ্রম, মানবপাচার ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। এই কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে শাহী আল সাদাত সরাসরি ৪৪ জন শিক্ষার্থীকে সহায়তা করেছেন, সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগের মাধ্যমে ২০ হাজার জনেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছেন এবং ৫১ জনকে আইনি পরামর্শ প্রদান করেছেন ও মানসিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
শাহী আল-সাদাত এখন দ্য স্টার্টআপ আইওর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তার কম্পিউটার বিজ্ঞানে দক্ষতা ও তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার স্বীকৃতি রয়েছে। সে ‘দ্য কোয়ান্টাম এনিগমা’, ‘সাইবার সেনটিনেল’ ও ‘ফল ইন লাভ’ শিরোনামের তিনটি বইয়ের লেখক।
শাহী আল সাদাতের ভাষ্যÑ আমাদের টিনেজারদের যদি আমরা নির্যাতন, হয়রানি এবং অপরাধ থেকে রক্ষা করতে পারি তাহলে আমরা শুধু আজ তাদের বাঁচাচ্ছি না; আমরা একটি ঘৃণাহীন ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছি।
শাহী নেতৃত্বে দ্য স্টার্টআপ আইও শিশু অধিকার এবং সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছে এবং বাংলাদেশে অনলাইন ও অফলাইন হয়রানি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শাহী আল সাদাতের অবিচল প্রতিশ্রুতি শিশুদের সুরক্ষা বৃদ্ধির এবং সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে তাকে প্রশংসা ও স্বীকৃতি অর্জন করিয়েছে। তার অবদান যুব নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলোর গুরুত্বকে তুলে ধরে যা সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক এবং শিশু অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি একটি স্থায়ী ছাপ রেখে চলেছেন।
শাহী আল সাদাত একজন সামাজিক উদ্যোক্তা ও শিশু অধিকার কর্মী হিসেবে তার যাত্রা অনেককে অনুপ্রাণিত করছে এবং শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা প্রচারের ক্ষেত্রে তার কাজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশের আল-সাদাত মনোনীত শিশু শান্তি পুরস্কারে

আপডেট সময় : ০৫:১৩:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

নারী ও শিশু ডেস্ক: মাত্র ১৫ বছর বয়সী শাহী আল-সাদাত। বাংলাদেশে শিশু অধিকার রক্ষায় দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করছে। এ বছর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারে জন্য মনোনীত হয়েছে সে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মেহেরপুর থেকে সুপারিশের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ পুরস্কারকে ‘শিশুদের নোবেল’ও বলা হয়ে থাকে।
১৩ বছর বয়সে শাহী প্রতিষ্ঠা করে দ্য স্টার্টআপ আইও; যা বাংলাদেশে শিশু অধিকার রক্ষায় কাজ করে। এর সমস্ত মুনাফা শিশুদের সুরক্ষার জন্য ব্যয় করা হয়। ২০০৯ সালের ২২ মার্চ মেহেরপুর জেলার একটি ছোট গ্রামে জন্ম নেওয়া শাহী বর্তমানে দেশের অন্যতম শিশু অধিকারকর্মী ও স্টার্টআপ আইওর প্রতিষ্ঠাতা। সে স্টার্টআপ সাইবার, কিডস হেলপলিঙ্ক, গার্লস টিনসেফ এবং টিন এক্স নামে বিভিন্ন উদ্যোগ পরিচালনা করছে। তার এই মনোনয়ন স্টার্টআপ সাইবার ও কিডস হেলপলিংকের ওপর বেশি ভিত্তি করে হয়েছে।
মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহী তার সহপাঠীদের অধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। তার অদম্য ইচ্ছা অনলাইন ও অফলাইনে শিশুদের সব ধরনের হয়রানি ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে; যা তাকে এই অসাধারণ উদ্যোগের পথে নিয়ে যায়।
শাহী স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম হাসানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর। তার এই উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন এবং তাকে নিজের সন্তানের মতো দেখে অনুপ্রাণিত করেন জেলা প্রশাসনক। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় শাহী প্রতিষ্ঠা করে কিডস হেলপলিংক, স্টার্টআপ সাইবার, গার্লস টিনসেফ এবং টিন এক্স। দ্য স্টার্টআপ আইও তার আয়কে শুধু শিশু সুরক্ষা সচেতনতা বাড়ানোর কাজে ব্যয় করে এবং সেমিনার, পোস্টার, ব্যানার ও নিরাপত্তা ভিডিও নির্মাণে নিয়োজিত।
শাহী উদ্যোগ মেহেরপুরের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। স্টার্টআপ আইও এর অধীনে ইতোমধ্যে ১৫৭টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের পাঁচটি জেলায়, যার মধ্যে রয়েছে মেহেরপুর ও সিলেট। এছাড়া অনলাইন সেমিনারেরও আয়োজন করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। গার্লস টিনসেফের মাধ্যমে শাহিল কিশোরীদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছে; যা তার মা মোসাম্মৎ সুরাইয়া আক্তার ও বন্ধু মাইশা মালিহা সোহার অনুপ্রেরণায় শুরু হয়েছে। তার দল প্রায় সাতটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে।
শিশুদের আইনি সহায়তার লক্ষ্যে কিডস হেলপলিংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে; যা মেহেরপুরের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ শামীম হাসানের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়েছে। এই হেলপলিংকটি শিশুদের আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে দ্য স্টার্টআপ আইও; যেখানে শিশু বিয়ে, শিশুশ্রম, মানবপাচার ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। এই কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে শাহী আল সাদাত সরাসরি ৪৪ জন শিক্ষার্থীকে সহায়তা করেছেন, সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগের মাধ্যমে ২০ হাজার জনেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছেন এবং ৫১ জনকে আইনি পরামর্শ প্রদান করেছেন ও মানসিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
শাহী আল-সাদাত এখন দ্য স্টার্টআপ আইওর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তার কম্পিউটার বিজ্ঞানে দক্ষতা ও তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার স্বীকৃতি রয়েছে। সে ‘দ্য কোয়ান্টাম এনিগমা’, ‘সাইবার সেনটিনেল’ ও ‘ফল ইন লাভ’ শিরোনামের তিনটি বইয়ের লেখক।
শাহী আল সাদাতের ভাষ্যÑ আমাদের টিনেজারদের যদি আমরা নির্যাতন, হয়রানি এবং অপরাধ থেকে রক্ষা করতে পারি তাহলে আমরা শুধু আজ তাদের বাঁচাচ্ছি না; আমরা একটি ঘৃণাহীন ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছি।
শাহী নেতৃত্বে দ্য স্টার্টআপ আইও শিশু অধিকার এবং সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছে এবং বাংলাদেশে অনলাইন ও অফলাইন হয়রানি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শাহী আল সাদাতের অবিচল প্রতিশ্রুতি শিশুদের সুরক্ষা বৃদ্ধির এবং সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে তাকে প্রশংসা ও স্বীকৃতি অর্জন করিয়েছে। তার অবদান যুব নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলোর গুরুত্বকে তুলে ধরে যা সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক এবং শিশু অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি একটি স্থায়ী ছাপ রেখে চলেছেন।
শাহী আল সাদাত একজন সামাজিক উদ্যোক্তা ও শিশু অধিকার কর্মী হিসেবে তার যাত্রা অনেককে অনুপ্রাণিত করছে এবং শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা প্রচারের ক্ষেত্রে তার কাজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে।