ঢাকা ১০:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের অপেক্ষায় শত শত রোহিঙ্গা

  • আপডেট সময় : ০২:০৬:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের ভেতরে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ, গুলি ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে টেকনাফ অংশে মিয়ানমারের শীলখালী ও বলিবাজার এলাকার বাসিন্দাদের সেখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এসব এলাকার শত শত রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশায় টেকনাফ ও উখিয়াসংলগ্ন নাফ নদীতে নৌকা নিয়ে ভাসছেন। দিনের বেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে অনুপ্রবেশ সম্ভব হচ্ছে না। তাই রাতে নজরদারি এড়িয়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছেন তারা।
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার জন্য নাফ নদীতে ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থানের কয়েকটি ছবি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, লম্ববিল, উনছিপ্রাংকানজড় পাড়া এলাকাসহ নাফ নদীতে ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান করছে কিছু রোহিঙ্গা। যেখানে ছোট শিশু ও বয়স্ক মানুষ আছে। তারা বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি বাঁশি দিলে তারা মিয়ানমারের সীমান্তে চলে যান। তারা মিয়ানমারের কুমিরখালী জুমহাড়া ও ঘোনা পাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
বিজিবি ও কোস্টগার্ড সূত্র মতে, নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গা নাগরিকবোঝাই ৪-৬টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সময় টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি ১০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে। উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। শুনেছি বলিবাজার থেকে কিছু রোহিঙ্গা নদীতে ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান নিয়েছে সুযোগ বুঝে অনুপ্রবেশ করার জন্য। এর আগেও ২৩ জন রোহিঙ্গা অস্ত্র নিয়ে অনুপ্রবেশের সময় স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আমি তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা সজাগ আছি, কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালীর বাসিন্দা রবিউল বলেন, আমাদের এলাকা দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে। বেশ কিছুদিন ধরে ডিঙি নৌকা নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে তারা। কয়েকবার প্রবেশের চেষ্টাও করেছিল কিন্তু বিজিবির বাধায় ঢুকতে পারেনি। তারা মিয়ানমারের শহর কুমিরখালীর বাসিন্দা। কুমিরখালী ঘাঁটি দখলে নিতে কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে তারা এদিকে পালিয়ে আসছে।
হোয়াইক্যং লম্বাবিল এলাকার বাসিন্দা কায়সার বলেন, কাল আমাদের সীমান্ত দিয়ে দুইজন রোহিঙ্গা নারী অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে বিজিবি আটক করে তাদের দেশে ফিরিয়ে দেয়। আমাদের লম্বাবিল এলাকার সীমান্ত দিয়ে খালি চোখে নাফ নদীতে রোহিঙ্গাবোঝাই ৩-৪টি ডিঙি নৌকা দেখা যায়।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, আমাদের এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা প্রবেশের চেষ্টা করছে। দুই থেকে তিন দিনে ৬ জন রোহিঙ্গাকে বিজিবি আটক করে পুশব্যাক করেছে। আরও কিছু রোহিঙ্গা ডিঙি নৌকা নিয়ে নাফ নদীতে অবস্থান করছে শুনেছি। এজন্য আমার সব ইউপি সদস্যদের সর্তক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই যেন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে। উনছিপ্রাং ২২নং ক্যাম্পের হেড মাঝি রফিক বলেন, এই মুহূর্তে কুমিরখালী ঘাঁটি দখলে নিতে কয়েকদিন ধরে যুদ্ধ চলছে। কুমিরখালী জুমহাড়া ও ঘোনা পাড়া এলাকায় কয়েকশ রোহিঙ্গা পরিবার আছে। এলাকাগুলোতে ব্যাপক হামলা হচ্ছে। অনেকেই ঝুঁকিতে আছেন। বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকায় নাফ নদীর শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমার থেকে আসা সন্দেহজনক দুই নারী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে। এ সময় বিজবির সদস্যরা ওই দুই নারীকে দেখতে পেয়ে থামার জন্য নির্দেশ দেন। পরে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথামিক জিজ্ঞাসাবাদে, ওই দুই নারী নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিক পরিচয় দেন। পরে তাদের পুশব্যাক করা হয়। আমরা সব সময়ই সজাগ আছি।
নাফ নদীতে মাথায় হেলমেট, হাতে গ্লাভস পরা লাশ: কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালীর তেলিপাড়া খালে মাথায় হেলমেট ও হাতে গ্লাভস পরা একটি লাশ ভেসে এসেছে রোববার দুপুরে। গতকাল রোববার দুপুর দেড়টায় লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, লাশটি মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী কিংবা বিদ্রোহী কোনো গোষ্ঠীর সদস্যের হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো কিছু বলতে পারেনি পুলিশ।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শামীম হোসেন দুপুরে বলেন, নাফ নদীর সঙ্গে সংযোগ থাকা তেলিপাড়া খালের জোয়ারের পানিতে লাশ ভেসে আসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরা পুলিশের জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) খবর দেন। সেখান থেকে খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জানায়, লাশের মাথায় হেলমেট, হাতে গ্লাভস রয়েছে। লাশটি ফুলে গেছে। পুলিশ ধারণা করছে, কয়েক দিন আগের লাশ। এর আগে গত শনিবার উখিয়ার সীমান্ত এলাকার রহমতের বিল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ চলছে। ইতিমধ্যে বিজিপিকে হটিয়ে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত তিনটা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। এ ছাড়া মিয়ানমার সেনা, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য, শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। তাঁরা বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে রয়েছেন।
আবারও গোলাগুলির শব্দ: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার উনছিপ্রাং সীমান্তে নাফ নদীর ওপারে আবারও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। গতকাল রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। মাহমুদ সেলিম নামে এক যুবক বলেন, একদিন পর পর গোলাগুলির শব্দে সীমান্ত কেঁপে উঠছে। ফলে স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছেন। বিশেষ করে গভীর রাতে বৃষ্টির মতো মর্টারশেলের শব্দে পুরো গ্রামের মানুষ চমকে উঠে। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, কয়েকদিন ধরে টেকনাফ সীমান্তে ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। আজ ভোরে উলুবনিয়া এবং উনচিপ্রাং সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন স্থানীয়রা। তবে, সীমান্তে বিজিবি থাকায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে কোথাও যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত। মাঝে মধ্যেই দুই উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশের অপেক্ষায় শত শত রোহিঙ্গা

আপডেট সময় : ০২:০৬:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের ভেতরে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ, গুলি ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে টেকনাফ অংশে মিয়ানমারের শীলখালী ও বলিবাজার এলাকার বাসিন্দাদের সেখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এসব এলাকার শত শত রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশায় টেকনাফ ও উখিয়াসংলগ্ন নাফ নদীতে নৌকা নিয়ে ভাসছেন। দিনের বেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে অনুপ্রবেশ সম্ভব হচ্ছে না। তাই রাতে নজরদারি এড়িয়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছেন তারা।
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার জন্য নাফ নদীতে ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থানের কয়েকটি ছবি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, লম্ববিল, উনছিপ্রাংকানজড় পাড়া এলাকাসহ নাফ নদীতে ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান করছে কিছু রোহিঙ্গা। যেখানে ছোট শিশু ও বয়স্ক মানুষ আছে। তারা বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি বাঁশি দিলে তারা মিয়ানমারের সীমান্তে চলে যান। তারা মিয়ানমারের কুমিরখালী জুমহাড়া ও ঘোনা পাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
বিজিবি ও কোস্টগার্ড সূত্র মতে, নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গা নাগরিকবোঝাই ৪-৬টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সময় টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি ১০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে। উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। শুনেছি বলিবাজার থেকে কিছু রোহিঙ্গা নদীতে ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান নিয়েছে সুযোগ বুঝে অনুপ্রবেশ করার জন্য। এর আগেও ২৩ জন রোহিঙ্গা অস্ত্র নিয়ে অনুপ্রবেশের সময় স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আমি তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা সজাগ আছি, কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালীর বাসিন্দা রবিউল বলেন, আমাদের এলাকা দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে। বেশ কিছুদিন ধরে ডিঙি নৌকা নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে তারা। কয়েকবার প্রবেশের চেষ্টাও করেছিল কিন্তু বিজিবির বাধায় ঢুকতে পারেনি। তারা মিয়ানমারের শহর কুমিরখালীর বাসিন্দা। কুমিরখালী ঘাঁটি দখলে নিতে কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে তারা এদিকে পালিয়ে আসছে।
হোয়াইক্যং লম্বাবিল এলাকার বাসিন্দা কায়সার বলেন, কাল আমাদের সীমান্ত দিয়ে দুইজন রোহিঙ্গা নারী অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে বিজিবি আটক করে তাদের দেশে ফিরিয়ে দেয়। আমাদের লম্বাবিল এলাকার সীমান্ত দিয়ে খালি চোখে নাফ নদীতে রোহিঙ্গাবোঝাই ৩-৪টি ডিঙি নৌকা দেখা যায়।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, আমাদের এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা প্রবেশের চেষ্টা করছে। দুই থেকে তিন দিনে ৬ জন রোহিঙ্গাকে বিজিবি আটক করে পুশব্যাক করেছে। আরও কিছু রোহিঙ্গা ডিঙি নৌকা নিয়ে নাফ নদীতে অবস্থান করছে শুনেছি। এজন্য আমার সব ইউপি সদস্যদের সর্তক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই যেন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে। উনছিপ্রাং ২২নং ক্যাম্পের হেড মাঝি রফিক বলেন, এই মুহূর্তে কুমিরখালী ঘাঁটি দখলে নিতে কয়েকদিন ধরে যুদ্ধ চলছে। কুমিরখালী জুমহাড়া ও ঘোনা পাড়া এলাকায় কয়েকশ রোহিঙ্গা পরিবার আছে। এলাকাগুলোতে ব্যাপক হামলা হচ্ছে। অনেকেই ঝুঁকিতে আছেন। বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকায় নাফ নদীর শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমার থেকে আসা সন্দেহজনক দুই নারী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে। এ সময় বিজবির সদস্যরা ওই দুই নারীকে দেখতে পেয়ে থামার জন্য নির্দেশ দেন। পরে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথামিক জিজ্ঞাসাবাদে, ওই দুই নারী নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিক পরিচয় দেন। পরে তাদের পুশব্যাক করা হয়। আমরা সব সময়ই সজাগ আছি।
নাফ নদীতে মাথায় হেলমেট, হাতে গ্লাভস পরা লাশ: কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালীর তেলিপাড়া খালে মাথায় হেলমেট ও হাতে গ্লাভস পরা একটি লাশ ভেসে এসেছে রোববার দুপুরে। গতকাল রোববার দুপুর দেড়টায় লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, লাশটি মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী কিংবা বিদ্রোহী কোনো গোষ্ঠীর সদস্যের হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো কিছু বলতে পারেনি পুলিশ।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শামীম হোসেন দুপুরে বলেন, নাফ নদীর সঙ্গে সংযোগ থাকা তেলিপাড়া খালের জোয়ারের পানিতে লাশ ভেসে আসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরা পুলিশের জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) খবর দেন। সেখান থেকে খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জানায়, লাশের মাথায় হেলমেট, হাতে গ্লাভস রয়েছে। লাশটি ফুলে গেছে। পুলিশ ধারণা করছে, কয়েক দিন আগের লাশ। এর আগে গত শনিবার উখিয়ার সীমান্ত এলাকার রহমতের বিল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ চলছে। ইতিমধ্যে বিজিপিকে হটিয়ে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত তিনটা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। এ ছাড়া মিয়ানমার সেনা, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য, শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। তাঁরা বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে রয়েছেন।
আবারও গোলাগুলির শব্দ: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার উনছিপ্রাং সীমান্তে নাফ নদীর ওপারে আবারও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। গতকাল রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। মাহমুদ সেলিম নামে এক যুবক বলেন, একদিন পর পর গোলাগুলির শব্দে সীমান্ত কেঁপে উঠছে। ফলে স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছেন। বিশেষ করে গভীর রাতে বৃষ্টির মতো মর্টারশেলের শব্দে পুরো গ্রামের মানুষ চমকে উঠে। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, কয়েকদিন ধরে টেকনাফ সীমান্তে ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। আজ ভোরে উলুবনিয়া এবং উনচিপ্রাং সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন স্থানীয়রা। তবে, সীমান্তে বিজিবি থাকায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে কোথাও যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত। মাঝে মধ্যেই দুই উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।