প্রত্যাশা ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সাবেক দুর্নীতিবিরোধী প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার খবর নিয়ে আলোচনা চলছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমেও।
ডেইলি লিখেছে, ক্ষমাতচ্যুত শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র থাকার যে প্রমাণ মিলছে, তা তার আগের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ঢাকায় কর্মকর্তারারা যে রেকর্ড পেয়েছেন, সে অনুযায়ী ১৯ বছর বয়সে তার নামে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। আর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ইস্যু করা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেজ অনুযায়ী, তার ভোটার নিবন্ধন নম্বর রয়েছে, যা দিয়ে বাংলাদেশের ভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের পাসপোর্ট ডেটাবেজ বলছে, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক পাসপোর্ট নবায়নের জন্য ২০১১ সালে ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেছিলেন।
বর্তমানে ৪৩ বছর বয়সী টিউলিপ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি মা-বাবার ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ থাকলেও ২০১৭ সালে তিনি বলেছিলেন, “আমি ব্রিটিশ, আমি বাংলাদেশি নই।”
টিউলিপ বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলার মুখোমুখি-এমন খবর মেইলে প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি গত জানুয়ারিতে প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন। যদিও কোনো ধরনের অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই লেবার এমপি।
টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা রেহানা এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক তার দুই ভাইবোনের বিরুদ্ধে ঢাকার পূর্বাচলে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে মামলা চলছে। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ডেইলি মেইলকে বলেছেন, টিউলিপের নামে ইস্যু হওয়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র ‘আসল’। সতবে টিউলিপ সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র দাবি করেছেন, “বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন না করেই তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা এখন মনগড়া ও জাল কাগজপত্র ছড়াচ্ছে, যাতে তাদের কথিত বিচারিক প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়া যায়।
টিউলিপ সিদ্দিক কখনোই বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি পাননি এবং শৈশবকাল থেকেই কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট রাখেননি। মুখপাত্র বলেন, তার বিশ্বাসযোগ্যতা ও সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য এটি সুপরিকল্পিত ও উন্মত্ত চেষ্টা। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন যে, তিনি কোনো ভুল করেননি।
শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ড দামের একটি ফ্ল্যাট ‘উপহার’ পাওয়ার খবর নিয়ে সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেন টিউলিপ সিদ্দিক। এর ছয় মাস আগে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে। এর পরপর বাংলাদেশের রূপপুর পরমাণু প্রকল্পে শেখ হাসিনা ও তার ভাগ্নির দুর্নীতি জড়ানোর অভিযোগের মধ্যে ‘উপহারের’ ফ্ল্যাট নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়।
রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকে টিউলিপ কোনো নিয়ম ভেঙেছেন– এমন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস বলেছিলেন, টিউলিপ যদি তার পরিবারের বাংলাদেশি রাজনৈতিক যোগাযোগ থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য ‘সম্পদের ঝুঁকি’ সম্পর্কে আরো সচেতন হতেন, সেটা তার জন্য ভালো হত।
প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার অবশ্য পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর টিউলিপের প্রশংসাই করেছিলেন; বলেছিলেন, টিউলিপের জন্য তার দরজা খোলা থাকবে।
স্কাই নিউজ গত এপ্রিলে জানায়, বাংলাদেশে পরোয়ানা জারি এবং অন্যান্য ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষাপটে টিউলিপের ফেরার সুযোগ এখনো আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কাছে। জবাবে একজন মুখপাত্র বলেছিলেন: আমরা নির্দিষ্ট কোনো মামলার বিষয়ে মন্তব্য করি না।
প্লট দুর্নীতির মামলায় পরোয়ানা জারি নিয়ে আলোচনার মধ্যে টিউলিপের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে দুদক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকার গুলশানের একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে দিয়ে ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে সেখানে।
সানা/আপ্র/১৯/০৯/২০২৫