প্রত্যাশা ডেস্ক: বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর একটি চিঠিতে শুল্ক আরোপের কথা উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এর আগে, গত এপ্রিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। সে সময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। তার আগে দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল। চিঠিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মাত্র ৩৫ শতাংশ হারে ট্যারিফ আদায় করবো। উচ্চতর শুল্ক এড়ানোর জন্য আমদানি করা পণ্যগুলো সেই উচ্চতর শুল্কের সাপেক্ষে হবে। দয়া করে বুঝতে হবে, আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্য ঘাটতি বৈষম্য রয়েছে তা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ৩৫ শতাংশ সংখ্যাটি তার চেয়ে অনেক কম। আপনি অবগত আছেন যে, বাংলাদেশ বা আপনার দেশের মধ্যে থাকা কোম্পানিগুলো যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য তৈরি বা উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নেয় তবে কোনো শুল্ক থাকবে না এবং প্রকৃতপক্ষে আমরা দ্রুত, পেশাদার ও নিয়মিতভাবে অনুমোদন দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো, যা কিনা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেও হতে পারে। চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো উল্লেখ করেন, যদি কোনো কারণে আপনি আপনার ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তবে আপনি যে সংখ্যাটি বাড়াতে চান না কেন, আমরা যে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছি সেটি তার সঙ্গে যুক্ত হবে।
বাংলাদেশসহ ১৪ দেশকে চিঠি, কার ওপর কত শুল্ক জারি: গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে- এমন সব দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বর্ধিত শুল্ক আরোপের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে প্রায় ১০০ দিন সময়ও দিয়েছিলেন তিনি।
গত ২ এপ্রিল অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। তারপর এটি কার্যকরের জন্য যে সময়সীমা তিনি দিয়েছিলেন, তা ও শেষ হচ্ছে আগামী ৯ জুলাই। তবে সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এ সময়সীমাকে ১ আগস্ট পর্যন্ত উন্নীত করেছেন এবং বর্ধিত শুল্কের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে গত সোমবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশকে চিঠি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাকি দেশগুলো হলো জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, কাজাখস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, লাওস, মিয়ানমার, বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনা, তিউনিশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সারবিয়া, কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ড।
এসব দেশের মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, কাজাখস্তান, তিউনিসিয়া’র ওপর ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা ও বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনার পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ, বাংলাদেশ ও সার্বিয়ার পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যের ওপর ৩২ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যাণ্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ শুল্প আরোপ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শুল্ক জারি করা হয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও লাওসের ওপর-৪০ শতাংশ।
সোমবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে চিঠিগুলোর ইমেজ পোস্ট করেছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি যে ১৪ দেশকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট, তাদের প্রত্যেককে একটি সাধারণ সতর্কবার্তা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, যদি এসব দেশ পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করে, তাহলে এসব দেশের ওপর ধার্যকৃত শুল্কের পরিমাণ আরো বাড়ানো হবে। সূত্র: এনবিসি