ঢাকা ১২:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা প্রসঙ্গ

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আলোকে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার

  • আপডেট সময় : ০৭:২৩:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. একেএম শামছুল ইসলাম, পিএসসি, জি (অব.)

মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রদর্শনে একটি মৌলিক পরিবর্তন এনেছিলেন। এটি নিছক একটি রাজনৈতিক ধারণা নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার একটি সমন্বিত দর্শন; যার মূল ভিত্তি স্বনির্ভরতা, জনসম্পৃক্ততা ও অর্থনৈতিক সংবেদনশীলতা।

এই দর্শনের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা একটি কেন্দ্রীয় অনুষঙ্গ; যেখানে- সামরিক শক্তি, জনসম্পৃক্ত কৌশল, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন সবই একই সূত্রে গাঁথা।
আজকের বৈশ্বিক বাস্তবতায় যুদ্ধ শুধু গোলাবারুদ ও সৈন্য সামন্তের বিষয় নয় বরং সাইবার, তথ্য এবং অর্থনীতি মূল উপজীব্য, সেখানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এই বাস্তববাদী ও বহুমাত্রিক নিরাপত্তা দর্শন আবারো নতুনভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

(১) জাতীয় নিরাপত্তার বাস্তবতা ও ঝুঁকির পুনর্মূল্যায়ন

১.১ ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা ও সীমাবদ্ধতা: বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানকে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সীমাবদ্ধতা নয়, সম্ভাবনা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেছিলেন, ইধহমষধফবংয রং হড়ঃ ওহফরধ-ষড়পশবফ; রঃ রং ইধু-ষরহশবফ। বঙ্গোপসাগর কেবল একটি জাহাজ চলাচলের পথ নয়, এটি আজ ওহফড়-চধপরভরপ অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু। ভারতের উত্তর-পূর্ব, মিয়ানমারের আরাকান, চীনের ইউনান প্রদেশ- এই পুরো অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশ হতে পারে অর্থনৈতিক করিডোর এবং নিরাপত্তার ভারসাম্য রক্ষাকারী রাষ্ট্র।

১.২ নিরাপত্তা ধারণার পুনর্সংজ্ঞা: রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতীয় নিরাপত্তাকে কেবল সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতেন না। তার মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক সংহতি এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা- এই তিনটি উপাদান না থাকলে সামরিক শক্তিও অকার্যকর। ১৯৭৯ সালে তার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (ইঘঝঈ) এই ধারণারই প্রতিফলন ছিল।

১.৩ বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়ন ও দায়িত্বশীলতা: বাংলাদেশের মতো একটি সীমিত বাজেটের দেশকে প্রতিরক্ষা খাতে খড়-িপড়ংঃ, ঐরময-সড়ৎধষব কৌশল নিতে হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাজেট-সচেতন নেতৃত্বের প্রতীক। তিনি বিশ্বাস করতেন, অপ্রচলিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মনোবল বৃদ্ধি করে এবং জন-সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে সামরিক শক্তিকে টেকসই করা সম্ভব।

(২) ঞড়ঃধষ উবভবহংব ও জনগণনির্ভর প্রতিরক্ষা কাঠামো

২.১ রাষ্ট্রভিত্তিক নয়, জনগণনির্ভর প্রতিরক্ষা: তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘রাষ্ট্র যখন হুমকির মুখে, তখন প্রতিটি নাগরিকই একজন সৈনিক’ (ঊধপয পরঃরুবহ রং ধ ংড়ষফরবৎ যিবহ ঃযব হধঃরড়হ রং ঁহফবৎ ঃযৎবধঃ)। এই উদ্দেশ্য জিয়া ১৯৭৬ সালে ভিডিপি (ঠউচ), ১৯৭৯ সালে বিএনসিসি (ইঘঈঈ), এরৎষ’ং এঁরফব, ঝপড়ঁঃং এবং ১৯৭৯ সালেই এপিবিএন (অচইঘ) গঠন করেন। যেগুলো প্যারামিলিটারি/সহায়ক বাহিনী হিসেবে কাজে লাগিয়ে সংকট বা জাতীয় জরুরি অবস্থায় সশস্ত্র বাহিনীর সম্প্রসারণ বা পুনর্গঠন সম্ভব হয়। এটি ছিল এক অসাধারণ কৌশলগত পদক্ষেপ। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে নিরাপত্তা কাঠামোর অংশীদার বানানোর চেষ্টা ছিল তার প্রতিরক্ষা ভাবনার ভিত্তি।

২.২ আধুনিকায়ন ও ভারসাম্য: সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী-তিনটি শাখার ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কৌশলগত সিদ্ধান্ত ছিল। সেইসাথে, তিনি ঋড়ৎপব গঁষঃরঢ়ষরবৎং অর্থাৎ টহসধহহবফ অবৎরধষ ঠবযরপষব (টঅঠ), ঝরমহধষ ওহঃবষষরমবহপব (ঝওএওঘঞ), কমান্ডো ইউনিট, মোবাইল র‌্যাপিড রেসপন্স ফোর্স ইত্যাদিকে গুরুত্ব দেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ড্রোন, অও ঝঁৎাবরষষধহপব, ঈুনবৎ উবভবহংব- এসব ক্ষেত্রেও এই দর্শনের সম্প্রসারণ জরুরি।

২.৩ স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্প: গধফব রহ ইধহমষধফবংয ধারণা জিয়ার উদ্ভাবন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, নারায়ণগঞ্জে বারুদের কারখানা এবং সৈনিকদের জন্য পোশাক শিল্পের সূচনা হয়। আজকের প্রেক্ষাপটে আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্প যেমন- খরমযঃ অৎসড়ৎবফ ঠবযরপষব (খঅঠ), ইঁষষবঃঢ়ৎড়ড়ভ ঔধপশবঃ, টঅঠ, ও ঝঁৎাবরষষধহপব উৎড়হব তৈরির জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব।

(৩) বাস্তববাদী কূটনীতি ও আঞ্চলিক ভারসাম্য

৩.১ দ্বিপক্ষীয় ভারসাম্য ও কৌশলগত নিরপেক্ষতা: রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ভারতের সঙ্গে সমতা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এর পাশাপাশি তিনি চীন, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বহুমাত্রিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করেন। তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল- বাংলাদেশ হবে স্বাধীন, সম্মানিত ও কৌশলগত অংশীদার, কোনো পরাশক্তির অনুসারী নয়। বর্তমান ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক নিরাপত্তা জোটে না গিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে হবে, কারণ এসব জোট ভারতের প্রভাবাধীন হতে পারে; বরং সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার নেতৃত্ব নিতে হবে- যার মূল প্রস্তাবক ছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে। একই সঙ্গে আসিয়ান সদস্যপদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারতসহ বিশ্ব ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

৩.২ জাতিসংঘে শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণ: শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সক্রিয়তা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দূরদর্শী পররাষ্ট্র নীতির ফসল। ১৯৮০ সালের পর থেকেই বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনের প্রধান অবদানকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

৩.৩ বঙ্গোপসাগর নিরাপত্তা ফোরাম (ইধু ড়ভ ইবহমধষ ঝবপঁৎরঃু ঋড়ৎঁস) গঠন: ওঙজঅ ও ইওগঝঞঊঈ-এর সীমাবদ্ধতার মধ্যে নতুন আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোট গঠনের প্রস্তাব সময়োপযোগী। এতে বাংলাদেশ মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ভারসাম্যের অন্যতম নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে।

(৪) প্রতিরক্ষা বাজেট ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা

৪.১ ফলাফলভিত্তিক (চবৎভড়ৎসধহপব-ঙৎরবহঃবফ) বাজেট: প্রতিরক্ষা খাতে কোন খাতে কী পরিমাণ বাজেট ব্যয় হচ্ছে তার প্রভাব মূল্যায়ন জরুরি। দক্ষতা, প্রকল্পের ফলাফল এবং অনিয়মের শাস্তি- এই তিনটি কৌশলে প্রতিরক্ষা বাজেটকে অধিকতর কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা মূলক করা যায়।
৪.২ উপার্জন সংশ্লিষ্ট সামরিক প্রকল্প: সেনাবাহিনীর নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত প্রকল্প- যেমন সেনাবাহিনী পরিচালিত হাউজিং, কৃষি খামার ও কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বাজেট চাপ কমাতে পারে এবং সিভিল-সামরিক সহযোগিতাকে সমৃদ্ধ করতে পারে। সেনাবাহিনী পরিচালিত অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষামূলক প্রকল্পগুলো থেকে অর্জিত মুনাফা তাদের সদস্যদের কল্যাণে ব্যয় করা যেতে পারে।

(৫) ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সাইবার যুদ্ধ

৫.১ সাইবার কমান্ড ও তথ্যযুদ্ধ প্রস্তুতি: আধুনিক বিশ্বে সাইবার হামলা ও তথ্যযুদ্ধ সবচেয়ে ঘাতক ও সুপরিকল্পিত অস্ত্ররূপে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘গোয়েন্দা-কেন্দ্রিক নিরাপত্তা’ (ওহঃবষষরমবহপব ঈবহঃৎরপ ঝবপঁৎরঃু) দর্শনের আধুনিক বাস্তবায়ন হতে পারে- সাইবার কমান্ড, তথ্য বিশ্লেষণ ইউনিট, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নজরদারি (অও-ফৎরাবহ ংঁৎাবরষষধহপব)।

আমাদের সাইবার স্পেস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও তথ্যযুদ্ধের ময়দানে দক্ষতা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন গোয়েন্দা ও প্রযুক্তিনির্ভর সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার অভিপ্রায়ে একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর জাতীয় সমন্বয়কারী কাঠামো গঠন জরুরি। বিগত ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক বিরোধী দমনমূলক কর্মকাণ্ডে পুলিশ ব্যবস্থার সামরিকীকরণ এক বিপজ্জনক প্রবণতা ছিল; যা থেকে সরে এসে পুলিশের প্রকৃত বেসামরিক চরিত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।

র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের (ওঐখ) মানদণ্ড অনুযায়ী পুনর্গঠন ও প্রশিক্ষিত করা জরুরি, যেন তারা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় পেশাদারিত্ব ও মানবিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়।

৫.২ সমন্বিত নিরাপত্তা সংস্থা: জঅই, পুলিশ, বিজিবি, উএঋও, ঘঝও- তাদের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর তথ্য বিনিময় এবং ঔড়রহঃ ঙঢ়বৎধঃরড়হং ঈড়সসধহফ ঈবহঃবৎ-এর মাধ্যমে সমন্বয় গঠন জিয়ার ঙঢ়বৎধঃরড়হধষ ঈড়ড়ৎফরহধঃরড়হ দর্শনকেই আধুনিক কাঠামো দেবে।

(৬) জাতীয় ঐক্য, সচেতনতা ও মিডিয়ার ভূমিকা

৬.১ সর্বজনীন জনযুদ্ধ (ঞড়ঃধষ চবড়ঢ়ষব’ং ডধৎ) পুনঃপ্রবর্তন: রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঞড়ঃধষ চবড়ঢ়ষব’ং ডধৎ দর্শন আধুনিক প্রেক্ষাপটে পুনরায় চালু করা জরুরি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সাইবার সচেতনতায় প্রশিক্ষিত করতে হবে। বিএনসিসি, স্কাউটস ও গার্লস গাইডের মাধ্যমে দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের গুণ বিকাশ ঘটানো সম্ভব। প্রচলিত ও অপ্রচলিত যুদ্ধনীতি (ইষবহফরহম ঈড়হাবহঃরড়হধষ ধহফ টহপড়হাবহঃরড়হধষ ডধৎভধৎব উড়পঃৎরহব) সমন্বয়ে একটি নতুন প্রতিরক্ষা কৌশল গড়ে তুলতে হবে। তথ্যযুদ্ধ, সাইবার হুমকি ও জন ভিত্তিক প্রতিরক্ষা কাঠামোয় প্রশিক্ষণ ও অংশগ্রহণে সাধারণ জনগণকে যুক্ত করবার মাধ্যমে যে কোনো জাতীয় সংকটে প্রথম সাড়া দানকারী হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে।

৬.২ মিডিয়া ও সুশীল সমাজের দায়িত্ব: জাতীয় প্রতিরক্ষা সচেতনতা এবং তথ্যের নির্ভুলতা বজায় রাখতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ, গবেষণানির্ভর ও বিশ্লেষণভিত্তিক গণ-যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর হধৎৎধঃরাব ধিৎভধৎব- এ বিজয় অর্জনের জন্য নির্ভরযোগ্য ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচার একান্ত প্রয়োজন। এই উপলব্ধি থেকেই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (ইওওঝঝ)।

আজকের প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন আরও কৌশলগত গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যাতে ঞৎধপশ-২ ও ঞৎধপশ-৩ কূটনীতি জোরদার হয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে একটি জ্ঞান ভিত্তিক দর্শন গড়ে ওঠে।

উপসংহার

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদ ও আধুনিক প্রতিরক্ষা দর্শন: রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এক গভীর কৌশলগত দর্শন; যেখানে স্বপ্ন ও বাস্তবতা, সাহস ও জ্ঞান, সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক সংযম প্রভৃতির সমন্বয় ঘটেছে। আজকের বাংলাদেশ যদি সীমিত সম্পদের মধ্যেই সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অর্জন করতে চায় তবে এই জাতীয়তাবাদী দর্শনকেই কৌশলগত নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কৌশল এখন আর শুধু সীমান্ত রক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি জলবায়ু নিরাপত্তা, সাইবার প্রতিরোধ, তথ্যযুদ্ধ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জন-সম্পৃক্ত নেতৃত্বের সমন্বিত প্রয়াস। এই পুরো কাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এখন সময় এসেছে- তার বাস্তববাদী, স্বনির্ভর এবং সমন্বিত প্রতিরক্ষা দর্শনকে বাস্তবতায় রূপান্তরিত করবার।

লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা প্রসঙ্গ

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আলোকে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার

আপডেট সময় : ০৭:২৩:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. একেএম শামছুল ইসলাম, পিএসসি, জি (অব.)

মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রদর্শনে একটি মৌলিক পরিবর্তন এনেছিলেন। এটি নিছক একটি রাজনৈতিক ধারণা নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার একটি সমন্বিত দর্শন; যার মূল ভিত্তি স্বনির্ভরতা, জনসম্পৃক্ততা ও অর্থনৈতিক সংবেদনশীলতা।

এই দর্শনের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা একটি কেন্দ্রীয় অনুষঙ্গ; যেখানে- সামরিক শক্তি, জনসম্পৃক্ত কৌশল, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন সবই একই সূত্রে গাঁথা।
আজকের বৈশ্বিক বাস্তবতায় যুদ্ধ শুধু গোলাবারুদ ও সৈন্য সামন্তের বিষয় নয় বরং সাইবার, তথ্য এবং অর্থনীতি মূল উপজীব্য, সেখানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এই বাস্তববাদী ও বহুমাত্রিক নিরাপত্তা দর্শন আবারো নতুনভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

(১) জাতীয় নিরাপত্তার বাস্তবতা ও ঝুঁকির পুনর্মূল্যায়ন

১.১ ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা ও সীমাবদ্ধতা: বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানকে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সীমাবদ্ধতা নয়, সম্ভাবনা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেছিলেন, ইধহমষধফবংয রং হড়ঃ ওহফরধ-ষড়পশবফ; রঃ রং ইধু-ষরহশবফ। বঙ্গোপসাগর কেবল একটি জাহাজ চলাচলের পথ নয়, এটি আজ ওহফড়-চধপরভরপ অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু। ভারতের উত্তর-পূর্ব, মিয়ানমারের আরাকান, চীনের ইউনান প্রদেশ- এই পুরো অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশ হতে পারে অর্থনৈতিক করিডোর এবং নিরাপত্তার ভারসাম্য রক্ষাকারী রাষ্ট্র।

১.২ নিরাপত্তা ধারণার পুনর্সংজ্ঞা: রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতীয় নিরাপত্তাকে কেবল সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতেন না। তার মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক সংহতি এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা- এই তিনটি উপাদান না থাকলে সামরিক শক্তিও অকার্যকর। ১৯৭৯ সালে তার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (ইঘঝঈ) এই ধারণারই প্রতিফলন ছিল।

১.৩ বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়ন ও দায়িত্বশীলতা: বাংলাদেশের মতো একটি সীমিত বাজেটের দেশকে প্রতিরক্ষা খাতে খড়-িপড়ংঃ, ঐরময-সড়ৎধষব কৌশল নিতে হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাজেট-সচেতন নেতৃত্বের প্রতীক। তিনি বিশ্বাস করতেন, অপ্রচলিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মনোবল বৃদ্ধি করে এবং জন-সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে সামরিক শক্তিকে টেকসই করা সম্ভব।

(২) ঞড়ঃধষ উবভবহংব ও জনগণনির্ভর প্রতিরক্ষা কাঠামো

২.১ রাষ্ট্রভিত্তিক নয়, জনগণনির্ভর প্রতিরক্ষা: তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘রাষ্ট্র যখন হুমকির মুখে, তখন প্রতিটি নাগরিকই একজন সৈনিক’ (ঊধপয পরঃরুবহ রং ধ ংড়ষফরবৎ যিবহ ঃযব হধঃরড়হ রং ঁহফবৎ ঃযৎবধঃ)। এই উদ্দেশ্য জিয়া ১৯৭৬ সালে ভিডিপি (ঠউচ), ১৯৭৯ সালে বিএনসিসি (ইঘঈঈ), এরৎষ’ং এঁরফব, ঝপড়ঁঃং এবং ১৯৭৯ সালেই এপিবিএন (অচইঘ) গঠন করেন। যেগুলো প্যারামিলিটারি/সহায়ক বাহিনী হিসেবে কাজে লাগিয়ে সংকট বা জাতীয় জরুরি অবস্থায় সশস্ত্র বাহিনীর সম্প্রসারণ বা পুনর্গঠন সম্ভব হয়। এটি ছিল এক অসাধারণ কৌশলগত পদক্ষেপ। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে নিরাপত্তা কাঠামোর অংশীদার বানানোর চেষ্টা ছিল তার প্রতিরক্ষা ভাবনার ভিত্তি।

২.২ আধুনিকায়ন ও ভারসাম্য: সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী-তিনটি শাখার ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কৌশলগত সিদ্ধান্ত ছিল। সেইসাথে, তিনি ঋড়ৎপব গঁষঃরঢ়ষরবৎং অর্থাৎ টহসধহহবফ অবৎরধষ ঠবযরপষব (টঅঠ), ঝরমহধষ ওহঃবষষরমবহপব (ঝওএওঘঞ), কমান্ডো ইউনিট, মোবাইল র‌্যাপিড রেসপন্স ফোর্স ইত্যাদিকে গুরুত্ব দেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ড্রোন, অও ঝঁৎাবরষষধহপব, ঈুনবৎ উবভবহংব- এসব ক্ষেত্রেও এই দর্শনের সম্প্রসারণ জরুরি।

২.৩ স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্প: গধফব রহ ইধহমষধফবংয ধারণা জিয়ার উদ্ভাবন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, নারায়ণগঞ্জে বারুদের কারখানা এবং সৈনিকদের জন্য পোশাক শিল্পের সূচনা হয়। আজকের প্রেক্ষাপটে আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্প যেমন- খরমযঃ অৎসড়ৎবফ ঠবযরপষব (খঅঠ), ইঁষষবঃঢ়ৎড়ড়ভ ঔধপশবঃ, টঅঠ, ও ঝঁৎাবরষষধহপব উৎড়হব তৈরির জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব।

(৩) বাস্তববাদী কূটনীতি ও আঞ্চলিক ভারসাম্য

৩.১ দ্বিপক্ষীয় ভারসাম্য ও কৌশলগত নিরপেক্ষতা: রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ভারতের সঙ্গে সমতা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এর পাশাপাশি তিনি চীন, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বহুমাত্রিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করেন। তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল- বাংলাদেশ হবে স্বাধীন, সম্মানিত ও কৌশলগত অংশীদার, কোনো পরাশক্তির অনুসারী নয়। বর্তমান ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক নিরাপত্তা জোটে না গিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে হবে, কারণ এসব জোট ভারতের প্রভাবাধীন হতে পারে; বরং সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার নেতৃত্ব নিতে হবে- যার মূল প্রস্তাবক ছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে। একই সঙ্গে আসিয়ান সদস্যপদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারতসহ বিশ্ব ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

৩.২ জাতিসংঘে শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণ: শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সক্রিয়তা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দূরদর্শী পররাষ্ট্র নীতির ফসল। ১৯৮০ সালের পর থেকেই বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনের প্রধান অবদানকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

৩.৩ বঙ্গোপসাগর নিরাপত্তা ফোরাম (ইধু ড়ভ ইবহমধষ ঝবপঁৎরঃু ঋড়ৎঁস) গঠন: ওঙজঅ ও ইওগঝঞঊঈ-এর সীমাবদ্ধতার মধ্যে নতুন আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোট গঠনের প্রস্তাব সময়োপযোগী। এতে বাংলাদেশ মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ভারসাম্যের অন্যতম নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে।

(৪) প্রতিরক্ষা বাজেট ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা

৪.১ ফলাফলভিত্তিক (চবৎভড়ৎসধহপব-ঙৎরবহঃবফ) বাজেট: প্রতিরক্ষা খাতে কোন খাতে কী পরিমাণ বাজেট ব্যয় হচ্ছে তার প্রভাব মূল্যায়ন জরুরি। দক্ষতা, প্রকল্পের ফলাফল এবং অনিয়মের শাস্তি- এই তিনটি কৌশলে প্রতিরক্ষা বাজেটকে অধিকতর কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা মূলক করা যায়।
৪.২ উপার্জন সংশ্লিষ্ট সামরিক প্রকল্প: সেনাবাহিনীর নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত প্রকল্প- যেমন সেনাবাহিনী পরিচালিত হাউজিং, কৃষি খামার ও কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বাজেট চাপ কমাতে পারে এবং সিভিল-সামরিক সহযোগিতাকে সমৃদ্ধ করতে পারে। সেনাবাহিনী পরিচালিত অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষামূলক প্রকল্পগুলো থেকে অর্জিত মুনাফা তাদের সদস্যদের কল্যাণে ব্যয় করা যেতে পারে।

(৫) ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সাইবার যুদ্ধ

৫.১ সাইবার কমান্ড ও তথ্যযুদ্ধ প্রস্তুতি: আধুনিক বিশ্বে সাইবার হামলা ও তথ্যযুদ্ধ সবচেয়ে ঘাতক ও সুপরিকল্পিত অস্ত্ররূপে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘গোয়েন্দা-কেন্দ্রিক নিরাপত্তা’ (ওহঃবষষরমবহপব ঈবহঃৎরপ ঝবপঁৎরঃু) দর্শনের আধুনিক বাস্তবায়ন হতে পারে- সাইবার কমান্ড, তথ্য বিশ্লেষণ ইউনিট, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নজরদারি (অও-ফৎরাবহ ংঁৎাবরষষধহপব)।

আমাদের সাইবার স্পেস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও তথ্যযুদ্ধের ময়দানে দক্ষতা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন গোয়েন্দা ও প্রযুক্তিনির্ভর সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার অভিপ্রায়ে একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর জাতীয় সমন্বয়কারী কাঠামো গঠন জরুরি। বিগত ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক বিরোধী দমনমূলক কর্মকাণ্ডে পুলিশ ব্যবস্থার সামরিকীকরণ এক বিপজ্জনক প্রবণতা ছিল; যা থেকে সরে এসে পুলিশের প্রকৃত বেসামরিক চরিত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।

র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের (ওঐখ) মানদণ্ড অনুযায়ী পুনর্গঠন ও প্রশিক্ষিত করা জরুরি, যেন তারা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় পেশাদারিত্ব ও মানবিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়।

৫.২ সমন্বিত নিরাপত্তা সংস্থা: জঅই, পুলিশ, বিজিবি, উএঋও, ঘঝও- তাদের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর তথ্য বিনিময় এবং ঔড়রহঃ ঙঢ়বৎধঃরড়হং ঈড়সসধহফ ঈবহঃবৎ-এর মাধ্যমে সমন্বয় গঠন জিয়ার ঙঢ়বৎধঃরড়হধষ ঈড়ড়ৎফরহধঃরড়হ দর্শনকেই আধুনিক কাঠামো দেবে।

(৬) জাতীয় ঐক্য, সচেতনতা ও মিডিয়ার ভূমিকা

৬.১ সর্বজনীন জনযুদ্ধ (ঞড়ঃধষ চবড়ঢ়ষব’ং ডধৎ) পুনঃপ্রবর্তন: রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঞড়ঃধষ চবড়ঢ়ষব’ং ডধৎ দর্শন আধুনিক প্রেক্ষাপটে পুনরায় চালু করা জরুরি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সাইবার সচেতনতায় প্রশিক্ষিত করতে হবে। বিএনসিসি, স্কাউটস ও গার্লস গাইডের মাধ্যমে দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের গুণ বিকাশ ঘটানো সম্ভব। প্রচলিত ও অপ্রচলিত যুদ্ধনীতি (ইষবহফরহম ঈড়হাবহঃরড়হধষ ধহফ টহপড়হাবহঃরড়হধষ ডধৎভধৎব উড়পঃৎরহব) সমন্বয়ে একটি নতুন প্রতিরক্ষা কৌশল গড়ে তুলতে হবে। তথ্যযুদ্ধ, সাইবার হুমকি ও জন ভিত্তিক প্রতিরক্ষা কাঠামোয় প্রশিক্ষণ ও অংশগ্রহণে সাধারণ জনগণকে যুক্ত করবার মাধ্যমে যে কোনো জাতীয় সংকটে প্রথম সাড়া দানকারী হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে।

৬.২ মিডিয়া ও সুশীল সমাজের দায়িত্ব: জাতীয় প্রতিরক্ষা সচেতনতা এবং তথ্যের নির্ভুলতা বজায় রাখতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ, গবেষণানির্ভর ও বিশ্লেষণভিত্তিক গণ-যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর হধৎৎধঃরাব ধিৎভধৎব- এ বিজয় অর্জনের জন্য নির্ভরযোগ্য ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য প্রচার একান্ত প্রয়োজন। এই উপলব্ধি থেকেই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (ইওওঝঝ)।

আজকের প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন আরও কৌশলগত গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যাতে ঞৎধপশ-২ ও ঞৎধপশ-৩ কূটনীতি জোরদার হয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে একটি জ্ঞান ভিত্তিক দর্শন গড়ে ওঠে।

উপসংহার

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদ ও আধুনিক প্রতিরক্ষা দর্শন: রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এক গভীর কৌশলগত দর্শন; যেখানে স্বপ্ন ও বাস্তবতা, সাহস ও জ্ঞান, সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক সংযম প্রভৃতির সমন্বয় ঘটেছে। আজকের বাংলাদেশ যদি সীমিত সম্পদের মধ্যেই সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অর্জন করতে চায় তবে এই জাতীয়তাবাদী দর্শনকেই কৌশলগত নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কৌশল এখন আর শুধু সীমান্ত রক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি জলবায়ু নিরাপত্তা, সাইবার প্রতিরোধ, তথ্যযুদ্ধ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জন-সম্পৃক্ত নেতৃত্বের সমন্বিত প্রয়াস। এই পুরো কাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এখন সময় এসেছে- তার বাস্তববাদী, স্বনির্ভর এবং সমন্বিত প্রতিরক্ষা দর্শনকে বাস্তবতায় রূপান্তরিত করবার।

লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ