ঢাকা ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫

বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান

  • আপডেট সময় : ০৪:৪২:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

রোববার আগারগাঁওয়ে বিডা কার্যালয়ে চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানকে দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। আমাদের ডাইনামিক জনশক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য আদর্শ গন্তব্য হিসেবে উপনীত হয়েছে। তারপরও আমরা যুগ যুগ ধরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছি।

রোববার (১ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডা কার্যালয়ে চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বেশকিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হলেও সেগুলো খালি পড়ে ছিল। অনেক ক্ষেত্রে সেখানে গবাদি পশু চড়ানোর কাজ হতো। ব্যাপক আকারে দুর্নীতি, স্বৈরচারতন্ত্র বিনিয়োগকারীদের বিমুখ করেছে। লাখ লাখ তরুণের নেতৃত্বে হওয়া জুলাই গণঅভভ্যুত্থান সেই দিনগুলোর ইতি টেনেছে। তারা নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইতিহাসে আমরা এই সুযোগ পেয়েছি, সুতরাং অনুগ্রহ করে আপনারা এই ইতিহাসের অংশ হন। আমাদের সঙ্গে এই দেশের ইতিহাসের অংশ হন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি বেইজিং সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্টকে চীনা কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কারণ, আমরা এই দেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত এবং অর্থনীতির একটা হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। চীনের প্রেসিডেন্ট তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আমি সম্মানিত বোধ করছি। আমি আশা করি নাই, এতো দ্রুত এতো বড় একটা প্রতিনিধিদল দেশে আসবে। চীনা কোম্পানিরা বিশ্বের প্রধান ম্যানুফেকচারিং প্রতিষ্ঠান এবং আমরা আপনাদের অংশীদার হতে চাই। আপনাদের বড় আকারে বিনিয়োগ আমাদের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন করতে পারে। আমাদের লাখ লাখ তরুণের দক্ষতা কাজে লাগাতে প্রচুর কর্মসংস্থানের প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশ একটি রূপান্তরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে আমাদের সরকার প্রথমেই সংস্কার কাজ শুরু করেছে। আমাদের নীতিগত সংস্কার বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এবং কর্মসংস্থান তৈরি করার জন্য সাজানো হয়েছে।

তিনি বলেন, পাট নিয়ে আলাপ বাংলাদেশের জন্য অনেক আবেগি বিষয়। এই দেশ প্রাকৃতিক এই আঁশ বিপুল আকারে উৎপাদন করে। যখন আপনারা পাট এবং পাটজাত পণ্য নিয়ে কথা বলেন তখন এটি এই দেশের জন্য অনেক বড় বিষয়। আমরা পাটের মধ্যে একটা ভবিষ্যৎ দেখতে পারি কারণ পাট দিয়ে এতদিন শুধু বস্তা তৈরি করা হতো। বিশ্বের একটি প্রাকৃতিক আঁশকে আমরা সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা একসঙ্গে পাট নিয়ে একটি নতুন সূচনা করতে পারি এটিকে অর্থনীতিতে তার সঠিক জায়গায় স্থাপন করে। পাটের মতো আরো অনেক পণ্য আছে যেগুলো বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। জামদানির মতো আরো অনেক পণ্য আছে যেগুলো থেকে আরো অনেক ভিন্ন পণ্য তৈরি করা যায়। কিন্তু এটি শুধু শাড়ি বানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য মসলিনকেও এভাবে ফিরিয়ে আনা যায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আকাশ ছুঁতে পারার মতো একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করতে হবে। এই সক্ষমতা আমাদের আছে।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ১০ মাস আগে গঠন হওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের কাজের ফল ইতোমধ্যে পাওয়া শুরু হয়েছে। এপ্রিলে আমরা একটি সফল বিজনেস সামিত আয়োজন করেছি। পাঁচ দিনের এই মিলনমেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন কোম্পানি এখানে এসেছিল। এখন আবার পুনরায় চীন থেকে একটি বড় ব্যবসায়ী দল এসেছে। বিনিয়োগ সম্মেলনে একটি চীনা টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান একাই ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভভ্যুথানের পরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পুনর্গঠন করেছে। এখানে আমরা প্রাইভেট সেক্টর থেকে মেধাবিদের নিয়ে এসেছি। নতুন এই সংস্থা আপনাদের বিনিয়োগের যাত্রায় সহযোগিতা করবে। আমি চীনা বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাই বাংলাদেশকে নিজেদের ঘর হিসেবে তৈরি করুন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান

আপডেট সময় : ০৪:৪২:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানকে দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। আমাদের ডাইনামিক জনশক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য আদর্শ গন্তব্য হিসেবে উপনীত হয়েছে। তারপরও আমরা যুগ যুগ ধরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছি।

রোববার (১ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডা কার্যালয়ে চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বেশকিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হলেও সেগুলো খালি পড়ে ছিল। অনেক ক্ষেত্রে সেখানে গবাদি পশু চড়ানোর কাজ হতো। ব্যাপক আকারে দুর্নীতি, স্বৈরচারতন্ত্র বিনিয়োগকারীদের বিমুখ করেছে। লাখ লাখ তরুণের নেতৃত্বে হওয়া জুলাই গণঅভভ্যুত্থান সেই দিনগুলোর ইতি টেনেছে। তারা নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইতিহাসে আমরা এই সুযোগ পেয়েছি, সুতরাং অনুগ্রহ করে আপনারা এই ইতিহাসের অংশ হন। আমাদের সঙ্গে এই দেশের ইতিহাসের অংশ হন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি বেইজিং সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্টকে চীনা কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কারণ, আমরা এই দেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত এবং অর্থনীতির একটা হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। চীনের প্রেসিডেন্ট তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আমি সম্মানিত বোধ করছি। আমি আশা করি নাই, এতো দ্রুত এতো বড় একটা প্রতিনিধিদল দেশে আসবে। চীনা কোম্পানিরা বিশ্বের প্রধান ম্যানুফেকচারিং প্রতিষ্ঠান এবং আমরা আপনাদের অংশীদার হতে চাই। আপনাদের বড় আকারে বিনিয়োগ আমাদের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন করতে পারে। আমাদের লাখ লাখ তরুণের দক্ষতা কাজে লাগাতে প্রচুর কর্মসংস্থানের প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশ একটি রূপান্তরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে আমাদের সরকার প্রথমেই সংস্কার কাজ শুরু করেছে। আমাদের নীতিগত সংস্কার বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এবং কর্মসংস্থান তৈরি করার জন্য সাজানো হয়েছে।

তিনি বলেন, পাট নিয়ে আলাপ বাংলাদেশের জন্য অনেক আবেগি বিষয়। এই দেশ প্রাকৃতিক এই আঁশ বিপুল আকারে উৎপাদন করে। যখন আপনারা পাট এবং পাটজাত পণ্য নিয়ে কথা বলেন তখন এটি এই দেশের জন্য অনেক বড় বিষয়। আমরা পাটের মধ্যে একটা ভবিষ্যৎ দেখতে পারি কারণ পাট দিয়ে এতদিন শুধু বস্তা তৈরি করা হতো। বিশ্বের একটি প্রাকৃতিক আঁশকে আমরা সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা একসঙ্গে পাট নিয়ে একটি নতুন সূচনা করতে পারি এটিকে অর্থনীতিতে তার সঠিক জায়গায় স্থাপন করে। পাটের মতো আরো অনেক পণ্য আছে যেগুলো বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। জামদানির মতো আরো অনেক পণ্য আছে যেগুলো থেকে আরো অনেক ভিন্ন পণ্য তৈরি করা যায়। কিন্তু এটি শুধু শাড়ি বানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য মসলিনকেও এভাবে ফিরিয়ে আনা যায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আকাশ ছুঁতে পারার মতো একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করতে হবে। এই সক্ষমতা আমাদের আছে।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ১০ মাস আগে গঠন হওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের কাজের ফল ইতোমধ্যে পাওয়া শুরু হয়েছে। এপ্রিলে আমরা একটি সফল বিজনেস সামিত আয়োজন করেছি। পাঁচ দিনের এই মিলনমেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন কোম্পানি এখানে এসেছিল। এখন আবার পুনরায় চীন থেকে একটি বড় ব্যবসায়ী দল এসেছে। বিনিয়োগ সম্মেলনে একটি চীনা টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান একাই ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভভ্যুথানের পরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পুনর্গঠন করেছে। এখানে আমরা প্রাইভেট সেক্টর থেকে মেধাবিদের নিয়ে এসেছি। নতুন এই সংস্থা আপনাদের বিনিয়োগের যাত্রায় সহযোগিতা করবে। আমি চীনা বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাই বাংলাদেশকে নিজেদের ঘর হিসেবে তৈরি করুন।