ঢাকা ০১:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে তারা কেমন সম্পর্ক চায়: জয়শঙ্কর

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-ফাইল ছবি

প্রত্যাশা ডেস্ক: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের ‘ভারতবিরোধী’ বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ আখ্যায়িত করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশকে ঠিক করতে হবে যে তারা ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়।

তিনি বলেছেন, আমরা খুব স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি— আপনারা আমাদের প্রতিবেশী, আমরা চাই পরিস্থিতি শান্ত হোক, আমরা চাই বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং অন্যান্য বিষয় এগিয়ে যাক; কিন্তু যদি ক্রমাগত এমন বার্তা বা সংকেত দেওয়া হয়, যেটা ভারতের প্রতি শত্রুতামূলক, সেটা নিশ্চয় আমাদের ভালো লাগবে না।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তার এমন মন্তব্য আসে।

জয়শঙ্কর বলেন, আমরা অবশ্যই আমাদের সব প্রতিবেশীর মঙ্গল চাই। বাংলাদেশের সাথে আমাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে; এটা বিশেষ এক সম্পর্ক, যা ১৯৭১ সাল থেকে চলে আসছে। কিন্তু গত বছর কিছু ঘটনা ঘটেছে, আপনারা সবাই জানেন। আমার মনে হয়, আমাদের জন্য বিষয়টা খুবই উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশের দুটি বিষয় ভারতের জন্য ‘খুবই উদ্বেগজনক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রথমত, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক হামলার ঘটনা; আমি মনে করি এটা আমাদের চিন্তাভাবনার ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলছে এবং এটা এমন একটা বিষয়, যা নিয়ে আমাদের কথা বলা উচিত এবং আমরা তা বলছি।

জয়শঙ্কর বলেন, দ্বিতীয়ত, তাদের নিজেদের রাজনীতি আছে, আপনি একমত হতে পারেন বা না হতে পারেন, দিন শেষে আমরা প্রতিবেশী। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা আমাদের সাথে কেমন সম্পর্ক চায়। কারণ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সদস্য যদি প্রতিদিন উঠে দাঁড়িয়ে সবকিছুর দোষ ভারতের ওপর চাপাতে থাকেন…আর কিছু কিছু বিষয়, আপনারা যদি খবরগুলো পড়েন, সম্পূর্ণ হাস্যকর।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি যদি প্রতিদিন সকালে উঠেই আপনাকে দোষারোপ করতে থাকি, তখন আপনি একা একা বলতে পারবেন না যে, ‘আমি আপনার সাথে ভালো সম্পর্ক চাই।’ তাহলে এই সিদ্ধান্তটা তাদেরই নিতে হবে যে তারা আমাদের সাথে কেমন সম্পর্ক চায়।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেফতার হলেও অধিকাংশই এখনও আত্মগোপনে।

এর মধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।

এরপর প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার।তবে ভারত এখনও তার জবাব দেয়নি।

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে। বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার পাশাপাশি দিল্লিতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এনেছে ইউনূস সরকার।

অপরদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভারত সরকার। পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ এবং ‘অতিরঞ্জিত প্রচারণার’ অভিযোগ বাংলাদেশ সরকার করেছে।

বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত ইস্যু এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক তলবের ঘটনাও ঘটেছে।

শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বিভিন্ন ভারত বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন, কোনো কোনো সময় সেগুলো বেশ হিংসাত্মক। এগুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বা দ্বিপক্ষীয় দরকষাকষিতে প্রভাব ফেলছে কিনা।

উত্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাণধীর জয়সওয়াল বলেন, হ্যাঁ, আমরা এ ধরনের বক্তব্যগুলো নজরে নিয়েছি, সেগুলো অবশ্যই ভালো কিছু নয়। কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে এর প্রভাব কী পড়বে, তা সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিরা তুলে ধরবেন।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশে উগ্র বাম কমিউনিস্টদের ভোট দিতে দেওয়া হয় ২৯ মিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে তারা কেমন সম্পর্ক চায়: জয়শঙ্কর

আপডেট সময় : ০৮:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের ‘ভারতবিরোধী’ বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ আখ্যায়িত করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশকে ঠিক করতে হবে যে তারা ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়।

তিনি বলেছেন, আমরা খুব স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি— আপনারা আমাদের প্রতিবেশী, আমরা চাই পরিস্থিতি শান্ত হোক, আমরা চাই বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং অন্যান্য বিষয় এগিয়ে যাক; কিন্তু যদি ক্রমাগত এমন বার্তা বা সংকেত দেওয়া হয়, যেটা ভারতের প্রতি শত্রুতামূলক, সেটা নিশ্চয় আমাদের ভালো লাগবে না।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তার এমন মন্তব্য আসে।

জয়শঙ্কর বলেন, আমরা অবশ্যই আমাদের সব প্রতিবেশীর মঙ্গল চাই। বাংলাদেশের সাথে আমাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে; এটা বিশেষ এক সম্পর্ক, যা ১৯৭১ সাল থেকে চলে আসছে। কিন্তু গত বছর কিছু ঘটনা ঘটেছে, আপনারা সবাই জানেন। আমার মনে হয়, আমাদের জন্য বিষয়টা খুবই উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশের দুটি বিষয় ভারতের জন্য ‘খুবই উদ্বেগজনক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রথমত, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক হামলার ঘটনা; আমি মনে করি এটা আমাদের চিন্তাভাবনার ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলছে এবং এটা এমন একটা বিষয়, যা নিয়ে আমাদের কথা বলা উচিত এবং আমরা তা বলছি।

জয়শঙ্কর বলেন, দ্বিতীয়ত, তাদের নিজেদের রাজনীতি আছে, আপনি একমত হতে পারেন বা না হতে পারেন, দিন শেষে আমরা প্রতিবেশী। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা আমাদের সাথে কেমন সম্পর্ক চায়। কারণ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সদস্য যদি প্রতিদিন উঠে দাঁড়িয়ে সবকিছুর দোষ ভারতের ওপর চাপাতে থাকেন…আর কিছু কিছু বিষয়, আপনারা যদি খবরগুলো পড়েন, সম্পূর্ণ হাস্যকর।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি যদি প্রতিদিন সকালে উঠেই আপনাকে দোষারোপ করতে থাকি, তখন আপনি একা একা বলতে পারবেন না যে, ‘আমি আপনার সাথে ভালো সম্পর্ক চাই।’ তাহলে এই সিদ্ধান্তটা তাদেরই নিতে হবে যে তারা আমাদের সাথে কেমন সম্পর্ক চায়।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেফতার হলেও অধিকাংশই এখনও আত্মগোপনে।

এর মধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।

এরপর প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার।তবে ভারত এখনও তার জবাব দেয়নি।

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে। বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার পাশাপাশি দিল্লিতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এনেছে ইউনূস সরকার।

অপরদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভারত সরকার। পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ এবং ‘অতিরঞ্জিত প্রচারণার’ অভিযোগ বাংলাদেশ সরকার করেছে।

বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত ইস্যু এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক তলবের ঘটনাও ঘটেছে।

শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বিভিন্ন ভারত বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন, কোনো কোনো সময় সেগুলো বেশ হিংসাত্মক। এগুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বা দ্বিপক্ষীয় দরকষাকষিতে প্রভাব ফেলছে কিনা।

উত্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাণধীর জয়সওয়াল বলেন, হ্যাঁ, আমরা এ ধরনের বক্তব্যগুলো নজরে নিয়েছি, সেগুলো অবশ্যই ভালো কিছু নয়। কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে এর প্রভাব কী পড়বে, তা সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিরা তুলে ধরবেন।