ঢাকা ০৮:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে ভাইফোঁটা দেওয়া হয় যে কারণে

  • আপডেট সময় : ০৪:৪১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
  • ৩২ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: সনাতন ধর্মে ভাইবোনের মধুর খুনসুটি ও দায়িত্বশীলতাকে উদযাপন করার দিনটি হলো ভাইফোঁটা। সংস্কৃতিতে এটি ‘ভ্রাতৃদ্বিতীয়া’ নামে পরিচিত, যার অর্থ হলো ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় দ্বিতীয়া তিথি পালন করার অনুষ্ঠান।

আজ (২৩ অক্টোবর) সেই দ্বিতীয়া তিথি – ভাইফোঁটার দিন। এটি পশ্চিম ভারতে ভাইদুজ, মহারাষ্ট্রে ভাইবিজ, এবং নেপালে ভাইটিকা নামে পরিচিত।

কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে, অর্থাৎ কালী পূজার দুই দিন পর এই উৎসব পালিত হয়। এই দিন বোনেরা ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন, আর ভাই তার বোনকে আজীবন রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন।

সনাতন ধর্মের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, সূর্যদেব ও সংজ্ঞার সন্তান ছিলেন যমরাজ ও যমুনা। দীর্ঘদিন পর কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে মৃত্যুর দেবতা যম তার বোন যমুনার বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যান। যমুনা তাকে সাদরে বরণ করে ফোঁটা দেন এবং আপ্যায়ন করেন। যম বোনের এই ভ্রাতৃস্নেহে অভিভূত হয়ে আশীর্বাদ দিয়েছিলেন – যে বোন এই দিনে ভাইকে ফোঁটা দেবে, তার ভাই দীর্ঘজীবী হবে। এই কাহিনি থেকেই ভাইফোঁটার সূচনা বলে মনে করা হয়।

আরেকটি পৌরাণিক কাহিনী হলো, নরকাসুর বধের পর শ্রীকৃষ্ণ আহত অবস্থায় দ্বারকায় ফিরে এসেছিলেন। বোন সুভদ্রা সেই সময় তাকে ফোঁটা দিয়ে বিজয় তিলক পরিয়ে মিষ্টিমুখ করান। সেই থেকেই বোনেরা ভাইয়ের বিজয়, সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ুর জন্য ফোঁটা দিয়ে থাকেন।

এসব পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি বর্তমানে ভাইফোঁটার আচারকে সম্প্রীতির একটি চিরন্তন উৎসব হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে।

ভাইফোঁটা দেওয়ার নিয়ম
এই রীতিতে বোন প্রথমে গোসল করে নতুন পোশাক পরে, পবিত্র মনে ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা দেন। চন্দন কাঠ ঘষে দই মিশিয়ে কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে এ ফোঁটা দেওয়া হয়। ফোঁটা দেওয়ার সময় বলা হয় – ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দিল যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।’

এরপর চলে আশীর্বাদের পালা। আশীর্বাদের সময় ধান ও দূর্বার শিষ ব‍্যবহৃত হয়। এছাড়া পূজার থালিতে শঙ্খ, প্রদীপ, মধু নেওয়া হয়। সঙ্গে মিষ্টিমুখ ও উপহার তো থাকেই। দিনে বা রাতে বিশেষ খাবারের আয়োজনও করা হয়ে থাকে।

বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে দেওয়া হয় কেন
বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুলকে সনাতনধর্মীরা মহাশূন‍্যের প্রতীক মনে করেন। সনাতনশাস্ত্রের মতে, পাঁচটি আঙুল পঞ্চভূতের প্রতীক। এই পঞ্চভূত হলো ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব‍্যোম। কনিষ্ঠ আঙুল প্রতীক ‘ব্যোম’ বা আকাশ তত্ত্ব। যার অর্থ অসীমতা। তাই ভাইফোঁটা দেওয়া হয় বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে, যাতে ভাইবোনের সম্পর্ক আকাশের মতই অসীম ও অটুট থাকে।

ভাইফোঁটা শুধু রীতি নয়, এটি ভাইবোনের মধ্যে ভালোবাসা, স্নেহ এবং আশীর্বাদের প্রতীক। এই দিন পরিবারের বন্ধন দৃঢ় হয়, সম্পর্ক মধুর হয়। সমাজে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে পড়ে।

সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

এসি/আপ্র/২৩/১০/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে ভাইফোঁটা দেওয়া হয় যে কারণে

আপডেট সময় : ০৪:৪১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: সনাতন ধর্মে ভাইবোনের মধুর খুনসুটি ও দায়িত্বশীলতাকে উদযাপন করার দিনটি হলো ভাইফোঁটা। সংস্কৃতিতে এটি ‘ভ্রাতৃদ্বিতীয়া’ নামে পরিচিত, যার অর্থ হলো ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় দ্বিতীয়া তিথি পালন করার অনুষ্ঠান।

আজ (২৩ অক্টোবর) সেই দ্বিতীয়া তিথি – ভাইফোঁটার দিন। এটি পশ্চিম ভারতে ভাইদুজ, মহারাষ্ট্রে ভাইবিজ, এবং নেপালে ভাইটিকা নামে পরিচিত।

কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে, অর্থাৎ কালী পূজার দুই দিন পর এই উৎসব পালিত হয়। এই দিন বোনেরা ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন, আর ভাই তার বোনকে আজীবন রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন।

সনাতন ধর্মের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, সূর্যদেব ও সংজ্ঞার সন্তান ছিলেন যমরাজ ও যমুনা। দীর্ঘদিন পর কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে মৃত্যুর দেবতা যম তার বোন যমুনার বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যান। যমুনা তাকে সাদরে বরণ করে ফোঁটা দেন এবং আপ্যায়ন করেন। যম বোনের এই ভ্রাতৃস্নেহে অভিভূত হয়ে আশীর্বাদ দিয়েছিলেন – যে বোন এই দিনে ভাইকে ফোঁটা দেবে, তার ভাই দীর্ঘজীবী হবে। এই কাহিনি থেকেই ভাইফোঁটার সূচনা বলে মনে করা হয়।

আরেকটি পৌরাণিক কাহিনী হলো, নরকাসুর বধের পর শ্রীকৃষ্ণ আহত অবস্থায় দ্বারকায় ফিরে এসেছিলেন। বোন সুভদ্রা সেই সময় তাকে ফোঁটা দিয়ে বিজয় তিলক পরিয়ে মিষ্টিমুখ করান। সেই থেকেই বোনেরা ভাইয়ের বিজয়, সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ুর জন্য ফোঁটা দিয়ে থাকেন।

এসব পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি বর্তমানে ভাইফোঁটার আচারকে সম্প্রীতির একটি চিরন্তন উৎসব হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে।

ভাইফোঁটা দেওয়ার নিয়ম
এই রীতিতে বোন প্রথমে গোসল করে নতুন পোশাক পরে, পবিত্র মনে ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা দেন। চন্দন কাঠ ঘষে দই মিশিয়ে কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে এ ফোঁটা দেওয়া হয়। ফোঁটা দেওয়ার সময় বলা হয় – ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দিল যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।’

এরপর চলে আশীর্বাদের পালা। আশীর্বাদের সময় ধান ও দূর্বার শিষ ব‍্যবহৃত হয়। এছাড়া পূজার থালিতে শঙ্খ, প্রদীপ, মধু নেওয়া হয়। সঙ্গে মিষ্টিমুখ ও উপহার তো থাকেই। দিনে বা রাতে বিশেষ খাবারের আয়োজনও করা হয়ে থাকে।

বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে দেওয়া হয় কেন
বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুলকে সনাতনধর্মীরা মহাশূন‍্যের প্রতীক মনে করেন। সনাতনশাস্ত্রের মতে, পাঁচটি আঙুল পঞ্চভূতের প্রতীক। এই পঞ্চভূত হলো ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব‍্যোম। কনিষ্ঠ আঙুল প্রতীক ‘ব্যোম’ বা আকাশ তত্ত্ব। যার অর্থ অসীমতা। তাই ভাইফোঁটা দেওয়া হয় বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে, যাতে ভাইবোনের সম্পর্ক আকাশের মতই অসীম ও অটুট থাকে।

ভাইফোঁটা শুধু রীতি নয়, এটি ভাইবোনের মধ্যে ভালোবাসা, স্নেহ এবং আশীর্বাদের প্রতীক। এই দিন পরিবারের বন্ধন দৃঢ় হয়, সম্পর্ক মধুর হয়। সমাজে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে পড়ে।

সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

এসি/আপ্র/২৩/১০/২০২৫