ঢাকা ০১:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

বাঁকা চোখে দেখে নারীর সাইকেল চালানো

  • আপডেট সময় : ০৫:১৪:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৬০ বার পড়া হয়েছে

নারী ও কন্যাশিশু ডেস্ক: বাংলাদেশের নারীর সাইকেল চালানোর ইতিহাস বেশ পুরনো। এ বিষয়ে আফরোজা চৈতি বলেন, আজ থেকে ৩০ বছর আগে আমার ফুপাতো বোনকে দেখেছি, সাইকেল চালিয়ে গ্রামের স্কুলে যেতে। এক সময় আমার বোনের বিয়ে হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ির সবাই তার সাইকেল চালানোটাকে সুনজরে না দেখলেও দুলাভাই এ বিষয়ে বেশ সহযোগী ছিলেন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে তখন নারীর সাইকেল চালানো, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে খুব বেশি সুনজরে দেখা হতো না। তিনি বলেন, সাইকেল চালানোটা আমার কাছে এক বড় বিজয় ছিল! আমার বয়স তখন ৪০ ছুঁই ছুঁই। আমরা তিন বন্ধু সিদ্ধান্ত নিলাম, সাইকেল চালানো শিখব।
আফরোজা চৈতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমমেট ও সহপাঠী লুসি তৃপ্তি গোমেজকে দেখলাম, তিনি সাইকেল চালানো বেশ রপ্ত করে ফেলেছেন। কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে তিনি কাজ করছেন। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সাইকেল র‌্যালি করার পরিকল্পনা করছিলেন তারা। ব্যক্তিগত অনেক বিষয় নিয়ে আমি তখন মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত। আমাকে লুসি আমন্ত্রণ জানালেন র‌্যালিতে অংশ নিতে। আমি বললাম, আমি তো সাইকেল চালাতে পারি না। তিনি আমার কথা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললেন, আমি শিখিয়ে দেব! আমি খুবই সন্দিহান হয়ে বললাম, আমি কি পারব? তিনি সাহস দিলেন। লুসির মতে, সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় জরুরিÑ ইচ্ছাশক্তি, সাহস ও সুস্থতা। তিনি বলেন, একপর্যায়ে কক্সবাজারের বাসে চড়ে বসি। সাইকেল র‌্যালি শুরু হতে আরও সাত দিন। লুসি প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে ও অফিস শেষে আমায় সাইকেল চালানো শেখান। আমি লুসির উৎসাহ আর প্রশিক্ষণে মাত্র পাঁচ দিনে সাইকেল চালানো রপ্ত করে ফেললাম। সাইকেল চালানো কি শুধুই একটা শখ? না; বরং সাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে আমি জীবনবোধ ও জীবনের আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলাম। নিজের ভেতরে আরও একজন আমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম যে অনবরত আমাকে পিঠ চাপড়ে বলে গেছে, আরে তুমি তো যোদ্ধা, ফাইটার, তুমি পারবে! আমি যেদিন আমার চল্লিশের পথে এসে সাইকেল নিয়ে পুরো রাউন্ড দিলাম, সেদিন কী এক জেতার আনন্দে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। সাইকেল চালানোর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আপনি কখনও পেছনে বা ডানে বামে মনোযোগ দেবেন না। এ বিষয়টির একটি গভীর অর্থ আছে। সেটা হলো জীবনে চলার পথে কখনো পেছন ফিরে দেখতে নেই, কখনো কারো কথায় মনোবল হারাতে নেই।
আফরোজা চৈতি বলেন, এখন অনেক ধরনের সাইক্লিং গ্রুপ তৈরি হয়েছে, যারা সাইকেল নিয়ে ম্যারাথন বা বিদেশ ভ্রমণেও যাচ্ছেন। আমাদের সাইকেল টিমে লুসি আরেকজনকে সাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যিনি বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার স্বামীকে হারিয়ে ট্রমাটাইজ হয়ে সিভিয়ার ডিপ্রেশনে চলে যান। তাকে যখন সাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তখন শুরুতে তিনি না করলেও যখন সত্যিই সাইকেল চালানো শিখে গেলেন, তখন তিনি নিজেকে অন্য রূপে আবিষ্কার করতে পারলেন। তার ডিপ্রেশন কেটে অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করলেন। মাইলের পর মাইল সাইকেল চালানোটা তার মনের হিলিং জার্নির ক্ষেত্রে অনেকটা সহায়ক হয়ে উঠল। তিনি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও স্বাধীন হয়ে উঠলেন।
নারীদের অনেকেই আজ সাইকেল চালানো শিখতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এবং এ প্রজন্মের অনেক নারী স্বচ্ছন্দে সাইকেল চালিয়ে কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন। একটি দারুণ পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে, এটা ইতিবাচক বিষয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর সাইকেল চালানোর বিষয়টি শুধু দক্ষতার বিষয় নয়; বরং এটি কোনো কোনো নারীর জীবনে একটি বড় স্বপ্নপূরণ। তার আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তা জড়িত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইকেল চালানোর সময় ধৈর্য, একাত্মতা, মনোযোগ বৃদ্ধি, সহনশীল মনোভাব তৈরি হয়।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাঁকা চোখে দেখে নারীর সাইকেল চালানো

আপডেট সময় : ০৫:১৪:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নারী ও কন্যাশিশু ডেস্ক: বাংলাদেশের নারীর সাইকেল চালানোর ইতিহাস বেশ পুরনো। এ বিষয়ে আফরোজা চৈতি বলেন, আজ থেকে ৩০ বছর আগে আমার ফুপাতো বোনকে দেখেছি, সাইকেল চালিয়ে গ্রামের স্কুলে যেতে। এক সময় আমার বোনের বিয়ে হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ির সবাই তার সাইকেল চালানোটাকে সুনজরে না দেখলেও দুলাভাই এ বিষয়ে বেশ সহযোগী ছিলেন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে তখন নারীর সাইকেল চালানো, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে খুব বেশি সুনজরে দেখা হতো না। তিনি বলেন, সাইকেল চালানোটা আমার কাছে এক বড় বিজয় ছিল! আমার বয়স তখন ৪০ ছুঁই ছুঁই। আমরা তিন বন্ধু সিদ্ধান্ত নিলাম, সাইকেল চালানো শিখব।
আফরোজা চৈতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমমেট ও সহপাঠী লুসি তৃপ্তি গোমেজকে দেখলাম, তিনি সাইকেল চালানো বেশ রপ্ত করে ফেলেছেন। কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে তিনি কাজ করছেন। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সাইকেল র‌্যালি করার পরিকল্পনা করছিলেন তারা। ব্যক্তিগত অনেক বিষয় নিয়ে আমি তখন মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত। আমাকে লুসি আমন্ত্রণ জানালেন র‌্যালিতে অংশ নিতে। আমি বললাম, আমি তো সাইকেল চালাতে পারি না। তিনি আমার কথা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললেন, আমি শিখিয়ে দেব! আমি খুবই সন্দিহান হয়ে বললাম, আমি কি পারব? তিনি সাহস দিলেন। লুসির মতে, সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় জরুরিÑ ইচ্ছাশক্তি, সাহস ও সুস্থতা। তিনি বলেন, একপর্যায়ে কক্সবাজারের বাসে চড়ে বসি। সাইকেল র‌্যালি শুরু হতে আরও সাত দিন। লুসি প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে ও অফিস শেষে আমায় সাইকেল চালানো শেখান। আমি লুসির উৎসাহ আর প্রশিক্ষণে মাত্র পাঁচ দিনে সাইকেল চালানো রপ্ত করে ফেললাম। সাইকেল চালানো কি শুধুই একটা শখ? না; বরং সাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে আমি জীবনবোধ ও জীবনের আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলাম। নিজের ভেতরে আরও একজন আমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম যে অনবরত আমাকে পিঠ চাপড়ে বলে গেছে, আরে তুমি তো যোদ্ধা, ফাইটার, তুমি পারবে! আমি যেদিন আমার চল্লিশের পথে এসে সাইকেল নিয়ে পুরো রাউন্ড দিলাম, সেদিন কী এক জেতার আনন্দে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। সাইকেল চালানোর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আপনি কখনও পেছনে বা ডানে বামে মনোযোগ দেবেন না। এ বিষয়টির একটি গভীর অর্থ আছে। সেটা হলো জীবনে চলার পথে কখনো পেছন ফিরে দেখতে নেই, কখনো কারো কথায় মনোবল হারাতে নেই।
আফরোজা চৈতি বলেন, এখন অনেক ধরনের সাইক্লিং গ্রুপ তৈরি হয়েছে, যারা সাইকেল নিয়ে ম্যারাথন বা বিদেশ ভ্রমণেও যাচ্ছেন। আমাদের সাইকেল টিমে লুসি আরেকজনকে সাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যিনি বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার স্বামীকে হারিয়ে ট্রমাটাইজ হয়ে সিভিয়ার ডিপ্রেশনে চলে যান। তাকে যখন সাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তখন শুরুতে তিনি না করলেও যখন সত্যিই সাইকেল চালানো শিখে গেলেন, তখন তিনি নিজেকে অন্য রূপে আবিষ্কার করতে পারলেন। তার ডিপ্রেশন কেটে অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করলেন। মাইলের পর মাইল সাইকেল চালানোটা তার মনের হিলিং জার্নির ক্ষেত্রে অনেকটা সহায়ক হয়ে উঠল। তিনি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও স্বাধীন হয়ে উঠলেন।
নারীদের অনেকেই আজ সাইকেল চালানো শিখতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এবং এ প্রজন্মের অনেক নারী স্বচ্ছন্দে সাইকেল চালিয়ে কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন। একটি দারুণ পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে, এটা ইতিবাচক বিষয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর সাইকেল চালানোর বিষয়টি শুধু দক্ষতার বিষয় নয়; বরং এটি কোনো কোনো নারীর জীবনে একটি বড় স্বপ্নপূরণ। তার আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তা জড়িত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইকেল চালানোর সময় ধৈর্য, একাত্মতা, মনোযোগ বৃদ্ধি, সহনশীল মনোভাব তৈরি হয়।