ঢাকা ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

বহুবিধ নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীরা

  • আপডেট সময় : ০৫:১৭:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৭১ বার পড়া হয়েছে

নারী ও কন্যাশিশু ডেস্ক: বাসাবাড়িতে কাজ করা নারীদের আমরা বুয়া, ঝি, খালা, বেটি হিসেবে চিনি বা জানি। মূলত তারা গৃহপরিচারিকা। দেশের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ির কাজের নারীকে নানা নামে সম্বোধন করা হয়। বাসাবাড়িতে কাজ করা এই নারীদের জীবন-জীবিকায় রয়েছে নানা প্রভাব। কেউ নিজের ঘর-সংসার সামলাতে অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করেন। আবার কেউ নিজের স্বামী কিংবা পিতা-মাতা ও সন্তানের কাছে কোনো আশ্রয় না থাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবন চালিয়ে থাকেন। তবে কাজের বুয়ারা নিজেরাও অনেকে বাড়ির মালিকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকে। আবার বুয়ারাও নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যতিক্রমও আছে।
বাসায় কাজ করা বুয়া দুই ধরনের হয়Ñ ছুটা বুয়া ও বান্ধা বুয়া। ছুটা বুয়ারা সাধারণত দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শুধু একটি নির্দিষ্ট বাসাতেই না, অনেক বাসাতে কাজ করে। তাদের কাজ করার ব্যাপারটা নির্দিষ্ট পরিমাণ। চুক্তিতে কিংবা ঘণ্টা চুক্তিতে কিংবা টাকার পরিমাণের চুক্তিতে হয়। আর বান্ধা বুয়ারা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বাসাতেই সারাদিন ধরে কাজ করে থাকে। কেউ কেউ দিন রাত বাসাবাড়িতে থাকার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। তাদের চুক্তি একবারে মাসকাবার হয়। দেখা যায় মাস শেষে ছুটা বুয়াদের আয় বান্ধা বুয়াদের চেয়ে অনেক বেশি হয়। তবে এক সময় বান্ধা বুয়ারা প্রতিটি দিন রাত মালিকের চোখের সামনে থাকতে থাকতে ধীরে ধীরে পরিবারের সদস্যদের মতোই হয়ে যায়।
ঢাকাসহ সারাদেশে এই বান্ধা বুয়াগুলো বেশিরভাগ ১৮ বছরের নিচের মেয়েরা আর ৪০ বছরের বেশি নারীরাই হয়। আর ছুটা বুয়াদের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। কাজ করাটা ছুটা বুয়াদের যেমন নিজ ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে (ভালো লাগলে করবে, ভালো না লাগলে করবে না) সেখানে বান্ধা বুয়াদের অনেক সময় অসুস্থ শরীরেও ছুটি হয় না, কাজ করাই লাগে।
কিশোরী মেয়েরা অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের হাতে নানাভাবে ও পর্যায়ে নিগৃহীত হয়। অনেক সময় জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে হয়- তারা এ সমাজে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে জন্মায়নি।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাসায় যারা কাজ করে, বিশেষ করে নারীরা; তারা জীবনের একেবারে শেষ দিকে অর্থাৎ মৃত্যুর সময় একেবারে একাকী হয়ে যায়। এর কারণ অনেক। যেমন ধরুন, কাজের বুয়ারা সারাজীবন মানুষের বাড়ি কাজ করে যে আয় করে, সেই আয় দিয়ে নিজের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে।
ওই শিক্ষিত ছেলেমেয়েগুলো যখন পুরোপুরি শিক্ষিত হয় অর্থাৎ পড়াশোনার অধ্যায় শেষ করে তখন ওই নারীদের নিজের মা বলে পরিচয় দিতে অনেকেই লজ্জাবোধ করে। কারণ বাসায় কাজ করা একজনকে নিজের বন্ধুবান্ধবের সামনে কীভাবে পরিচয় করিয়ে দেবে, এ ভাবনাটিই মূলত তাকে লজ্জিত করে তোলে। ফলে এক সময় তারা নিজেদের মা থেকেই আলাদা হয়ে যায়, হয় বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় নয়তো বিয়ে করে ঘরজামাই হয়ে যায় অথবা বিয়ে করে বউকে নিয়ে আলাদা করে বসবাস করতে থাকে। জীবনে আর কোনোদিন আর তারা তাদের মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে না এমনকি তার মৃত্যুর সময়ও না।
আবার বাসায় কাজ করা নারীদের অনেকের স্বামী কোনো কাজ না করে নিজের বউয়ের আয় খেতে থাকে। আবার অনেকেই এই আয় দিয়ে মাদক, জুয়া, নারীবাজি ইত্যাদি করতে থাকে। এই নারীগুলো স্বামীকে বাধাও দিতে পারে না, কারণ বাধা দিতে গেলেই তাদের মারধরের শিকার হতে হয়।
আমরা কে না জানি, নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে পারিবারিক নির্যাতন সমাজের অন্য স্তরের পরিবার থেকে অনেক বেশি। মারধরের হাত থেকে বাঁচার জন্য, তালাকের ভয়ে এই কাজের বুয়ারা সারাজীবন পুরুষ মানুষের সব অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য করে। তবুও দেখা যায় পুরুষ মানুষ নিজেদের বউকে ছেড়ে অন্য কোনো নারীর হাত ধরে এক সময় পালিয়ে যায়। আবার অনেক সময় উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতে গিয়ে এই পুরুষ মানুষ স্ত্রীর মৃত্যুর অনেক আগেই নিজেরা মারা যায়। ফলে নারীগুলো একা হয়েই যায়। আবার এই নারীদের আত্মীয়স্বজনরাও এক সময় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে।
যারা আজীবন নিজের পারিবারিক জীবনের সুখ ভুলে গিয়ে আরেকজন মানুষের সুখের জন্য কাজ করে, তাদের নিজের শেষ সময়টুকুতেও ন্যায্য সুখটুকু পায় না।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বহুবিধ নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীরা

আপডেট সময় : ০৫:১৭:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নারী ও কন্যাশিশু ডেস্ক: বাসাবাড়িতে কাজ করা নারীদের আমরা বুয়া, ঝি, খালা, বেটি হিসেবে চিনি বা জানি। মূলত তারা গৃহপরিচারিকা। দেশের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ির কাজের নারীকে নানা নামে সম্বোধন করা হয়। বাসাবাড়িতে কাজ করা এই নারীদের জীবন-জীবিকায় রয়েছে নানা প্রভাব। কেউ নিজের ঘর-সংসার সামলাতে অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করেন। আবার কেউ নিজের স্বামী কিংবা পিতা-মাতা ও সন্তানের কাছে কোনো আশ্রয় না থাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবন চালিয়ে থাকেন। তবে কাজের বুয়ারা নিজেরাও অনেকে বাড়ির মালিকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকে। আবার বুয়ারাও নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যতিক্রমও আছে।
বাসায় কাজ করা বুয়া দুই ধরনের হয়Ñ ছুটা বুয়া ও বান্ধা বুয়া। ছুটা বুয়ারা সাধারণত দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শুধু একটি নির্দিষ্ট বাসাতেই না, অনেক বাসাতে কাজ করে। তাদের কাজ করার ব্যাপারটা নির্দিষ্ট পরিমাণ। চুক্তিতে কিংবা ঘণ্টা চুক্তিতে কিংবা টাকার পরিমাণের চুক্তিতে হয়। আর বান্ধা বুয়ারা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বাসাতেই সারাদিন ধরে কাজ করে থাকে। কেউ কেউ দিন রাত বাসাবাড়িতে থাকার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। তাদের চুক্তি একবারে মাসকাবার হয়। দেখা যায় মাস শেষে ছুটা বুয়াদের আয় বান্ধা বুয়াদের চেয়ে অনেক বেশি হয়। তবে এক সময় বান্ধা বুয়ারা প্রতিটি দিন রাত মালিকের চোখের সামনে থাকতে থাকতে ধীরে ধীরে পরিবারের সদস্যদের মতোই হয়ে যায়।
ঢাকাসহ সারাদেশে এই বান্ধা বুয়াগুলো বেশিরভাগ ১৮ বছরের নিচের মেয়েরা আর ৪০ বছরের বেশি নারীরাই হয়। আর ছুটা বুয়াদের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। কাজ করাটা ছুটা বুয়াদের যেমন নিজ ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে (ভালো লাগলে করবে, ভালো না লাগলে করবে না) সেখানে বান্ধা বুয়াদের অনেক সময় অসুস্থ শরীরেও ছুটি হয় না, কাজ করাই লাগে।
কিশোরী মেয়েরা অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের হাতে নানাভাবে ও পর্যায়ে নিগৃহীত হয়। অনেক সময় জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে হয়- তারা এ সমাজে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে জন্মায়নি।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাসায় যারা কাজ করে, বিশেষ করে নারীরা; তারা জীবনের একেবারে শেষ দিকে অর্থাৎ মৃত্যুর সময় একেবারে একাকী হয়ে যায়। এর কারণ অনেক। যেমন ধরুন, কাজের বুয়ারা সারাজীবন মানুষের বাড়ি কাজ করে যে আয় করে, সেই আয় দিয়ে নিজের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে।
ওই শিক্ষিত ছেলেমেয়েগুলো যখন পুরোপুরি শিক্ষিত হয় অর্থাৎ পড়াশোনার অধ্যায় শেষ করে তখন ওই নারীদের নিজের মা বলে পরিচয় দিতে অনেকেই লজ্জাবোধ করে। কারণ বাসায় কাজ করা একজনকে নিজের বন্ধুবান্ধবের সামনে কীভাবে পরিচয় করিয়ে দেবে, এ ভাবনাটিই মূলত তাকে লজ্জিত করে তোলে। ফলে এক সময় তারা নিজেদের মা থেকেই আলাদা হয়ে যায়, হয় বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় নয়তো বিয়ে করে ঘরজামাই হয়ে যায় অথবা বিয়ে করে বউকে নিয়ে আলাদা করে বসবাস করতে থাকে। জীবনে আর কোনোদিন আর তারা তাদের মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে না এমনকি তার মৃত্যুর সময়ও না।
আবার বাসায় কাজ করা নারীদের অনেকের স্বামী কোনো কাজ না করে নিজের বউয়ের আয় খেতে থাকে। আবার অনেকেই এই আয় দিয়ে মাদক, জুয়া, নারীবাজি ইত্যাদি করতে থাকে। এই নারীগুলো স্বামীকে বাধাও দিতে পারে না, কারণ বাধা দিতে গেলেই তাদের মারধরের শিকার হতে হয়।
আমরা কে না জানি, নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে পারিবারিক নির্যাতন সমাজের অন্য স্তরের পরিবার থেকে অনেক বেশি। মারধরের হাত থেকে বাঁচার জন্য, তালাকের ভয়ে এই কাজের বুয়ারা সারাজীবন পুরুষ মানুষের সব অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য করে। তবুও দেখা যায় পুরুষ মানুষ নিজেদের বউকে ছেড়ে অন্য কোনো নারীর হাত ধরে এক সময় পালিয়ে যায়। আবার অনেক সময় উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতে গিয়ে এই পুরুষ মানুষ স্ত্রীর মৃত্যুর অনেক আগেই নিজেরা মারা যায়। ফলে নারীগুলো একা হয়েই যায়। আবার এই নারীদের আত্মীয়স্বজনরাও এক সময় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে।
যারা আজীবন নিজের পারিবারিক জীবনের সুখ ভুলে গিয়ে আরেকজন মানুষের সুখের জন্য কাজ করে, তাদের নিজের শেষ সময়টুকুতেও ন্যায্য সুখটুকু পায় না।