প্রত্যাশা ডেস্ক : কলকাতার এক কনসার্টে গান গাওয়ার পরপরই অসুস্থ হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বলিউডের তারকা গায়ক কৃষ্ণকুমার কুনাথ, শ্রোতাদের কাছে তিনি কে কে নামে পরিচিত।
কনসার্ট শেষে হোটেলে ফেরা মাত্রই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। কে কের বয়স হয়েছিল ৫৪। এই গায়কের জন্ম দিল্লিতে ১৯৬৮ সালে। তিনি হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগুসহ নানা ভাষায় গাইতেন। ১৯৯৯ সালে তার গানের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ হলেও তার আগেই তিনি বলিউড সিনেমায় গান গেয়ে নাম কুড়ান। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- হাম দিল দে চুকে সনমের ‘তাড়াপ তাড়াপ, দেবদাসের ‘ডোলা রে’, ও লামহে সিনেমার ‘ক্যায়া মুঝে প্যায়ার হ্যায়’, ওম শান্তি ওম সিনেমার ‘আঁখোমে মে তেরি’, বাঁচনা এক হাসিনো সিনেমার ‘খুদা জানে’, আশিকী-২ সিনেমার ‘পিয়া আযে না’ ইত্যাদি। গানের জন্য পাঁচ বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতেন তিনি।
ভিড়ে ঠাসা মঞ্চে ঘামছিলেন কে কে, অপমৃত্যুর মামলা : দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চ ছিল ভিড়ে ঠাসা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র কাজ করছিল না, তীব্র গরমে মুখ ও কপাল বারবার রুমাল দিয়ে মুছছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী কৃষ্ণকুমার কুনাথ; কনসার্ট থেকেই ছুটলেন হাসপাতালে, তারপর সব শেষ।
ভক্ত-শ্রোতাদের কাছে কে কে নামে পরিচিত ছিলেন ৫৪ বছর বয়সী এই শিল্পী। তার এমন মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত পুরো ভারতের সংগীত ও চলচ্চিত্র অঙ্গন।
এনডিটিভি জানিয়েছে, কে কের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর নজরুল মঞ্চের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঝটপট মঞ্চ ত্যাগ করেছিলেন এই শিল্পী। সেসময় তাকে অসুস্থ দেখাচ্ছিল। বুকে ব্যথা অনুভব করায় হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল তাকে, পথেই তার মৃত্যু হয়। কে কের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। ওই ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা করেছে কলকাতার পুলিশ। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এনডিটিভি জানিয়েছে, তার মৃত্যু নিয়ে অনুষ্ঠান স্থল নজরুল মঞ্চের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের ভাষ্য, সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র কাজ করছিল না। ভেতরে ছিল অসহনীয় গরম। কলকাতায় নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানে কে কে।কলকাতায় নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানে কে কে।আনন্দ বাজার পত্রিকা লিখেছে, নানা রকমের আলোর ঝলকানি ছিল নজরুল মঞ্চে। সেখানে গান গাইতে উঠে কে কে বার বার রুমালে মুখ-কপাল ও মাথা রুমাল দিয়ে মুছছিলেন। একাধিক বার বোতল থেকে পানিও পান করেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, মুখের ঘাম মোছার জন্য কে কে বিরতিও নেন। সেসময় দর্শক সারি থেকে বলতে শোনা যায়, ‘বোহিত জিয়াদা গরম হ্যায়’।
এক পর্যায়ে কে কে একজনের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন, যা দেখে মনে হয়, তিনি সম্ভবত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কথা বলছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার মৃত্যু ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে। নজরুল মঞ্চের বদ্ধ অডিটরিয়াম কনসার্টের সময় ছিল ভিড়ে ঠাসা। টুইটারে একজন লিখেছেন, “কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে কিংবদন্তীকে চলে যেতে হয়েছে।”
নজরুল মঞ্চের ধারণক্ষমতা প্রায় ২ হাজার ৪০০। কিন্তু একটি কলেজের আয়োজনে ওই কনসার্টে প্রায় ৭ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা পোস্টে দাবি করা হচ্ছে। ভিডিওতে একটি সিঁড়িতে একদল ছাত্রকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র হাতে দেখা যায়। অনেকেই সেই ভিডিও শেয়ার করে আয়োজকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ৫৪ বছর বয়সী এই গায়ক অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে সিএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ বা কে কে ‘পাল’ এবং ‘ইয়ারন’ এর মত গানের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৯০ এর দশকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এ গানগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। প্রায়ই স্কুল ও কলেজের বিদায় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শোনা যায় এসব গান।
জীবদ্দশায় কে কে তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দ্য মেসমেরাইজার-এ বলেছেন, “একজন শিল্পী যখন মঞ্চে থাকে, তখন একটি নির্দিষ্ট শক্তি থাকে। কারও অবস্থা যাই হোক না কেন, একবার মঞ্চে উঠলে আমি সবকিছু ভুলে যাই এবং কেবল গেয়ে যাই।”
হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগুসহ নানা ভাষায় গাইতেন তিনি। ১৯৯৯ সালে তার গানের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ হলেও তার আগেই বলিউড সিনেমায় গেয়ে নাম কুড়ান তিনি। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- হাম দিল দে চুকে সনমের ‘তাড়াপ তাড়াপ, দেবদাসের ‘ডোলা রে’, ও লামহে সিনেমার ‘ক্যায়া মুঝে প্যায়ার হ্যায়’, ওম শান্তি ওম সিনেমার ‘আঁখোমে মে তেরি’, বাঁচনা এক হাসিনো সিনেমার ‘খুদা জানে’, আশিকী-২ সিনেমার ‘পিয়া আযে না’ ইত্যাদি। গানের জন্য পাঁচ বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন তিনি।
মোদি-অমিত-মমতার শোক : কেকের মৃত্যুতে ইতোমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও শোক জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া এই গায়কের মৃত্যুতে শোকাহত শ্রেয়া ঘোষাল, কুমার শানু, অরিজিৎ সিং, আন্নু মালিকসহ বলিউডের বহু তারকা। কলকাতায় শো করতে এসে মারা গেছেন বলিউড গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নত। গানের জগতে যিনি সংক্ষেপে কেকে নামে পরিচিত। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বলিউড, টলিউড ও ভারতের দক্ষিণী সিনেমার বহু তারকা।
বলিউডের বিখ্যাত গায়ক মারা গেলেন কলকাতায়
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ