ঢাকা ০৩:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

বরী আবহাওয়া বৃষ্টিপাতে ভোগান্তি উপকূলীয় জনপদে

  • আপডেট সময় : ০১:৫৭:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৩৫ বার পড়া হয়েছে

দেশের খবর ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে টানা বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। ভারী বৃষ্টির কারণে গতকাল শনিবার শহর অনেকটা জনশূন্য হয়ে পড়ে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বের হতে দেখা যায়নি। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরঃ
টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত ভোলার জনজীবন
ভোলা সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ভোলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। ভারী বৃষ্টির কারণে শনিবার সকাল থেকে ব্যস্ততম ভোলা জেলা শহরের সদর রোড অনেকটা জনশূন্য হয়ে পড়ে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বের হতে দেখা যায়নি। বেলা গড়িয়ে দুপুরেও সড়কে কয়েকটি অটোরিকশা ছাড়া তেমন কোনো যানবাহন দেখা যায়নি। এদিকে, বৈরী আবহাওয়ায় শুক্রবার রাতে সাগর মোহনায় ঝড়ের কবলে পড়ে ৮ জেলে নিয়ে একটি মাছ ধরার ট্রলার এখনো নিখোঁজ রয়েছে, যার খোঁজ এখনও মেলেনি। এতে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে জেলে পরিবারগুলো। অন্যদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে পানি জমে আমন ধানের মাঠের ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বৃষ্টিপাতের এ ধারা রোববার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের আমন ধান চাষি কৃষক মো. ছিদ্দিক মিয়া জানান, আমি ৩২ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় এক একর জমিতে আমনের চারা (রোপা) লাগিয়েছিলাম। আগস্টে অতি জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে সব চারা পচে গেছে। পরে আবার চারা কিনে জমিতে লাগাইছি। এখন আবার জমিতে বৃষ্টির পানি জমে গেছে, জমি থেকে যদি পানি দ্রুত না নামে তাহলে দ্বিতীয় দফায় সব শেষ হইয়া যাইব। ভোলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল তিনটা থেকে শনিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ অবস্থা আজ রবিবার পর্যন্ত চলার সম্ভাবনা রয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত
মাদারীপুর সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জেলার আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আব্দুর রহিম সান্টু গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানায়, শনিবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বৃষ্টির সঙ্গে বাড়ে বাতাসের তীব্রতা। বৈরী আবহাওয়ায় স্থবিরতা বিরাজ করছে জনজীবনে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকে। জীবিকার তাগিদে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হয়েছেন রিকশাচালক, শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষ। রিকশাচালক মো. সিদ্দিক বলেন, জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হলেও তেমন কোনো লোকজন রাস্তায় না থাকায় মাত্র দেড়শ টাকা আয় করেছি। সেটি দিয়ে চাল কিনবো নাকি পরিবারের অন্য খরচ করবো বুঝতে পারছি না। আবহাওয়া কর্মকর্তা আব্দুর রহিম সান্টু বলেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ পরিবর্তন হচ্ছে। তবে,পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে রোববারও (১৫ সেপ্টেম্বর) বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। গতকাল শনিবার বিকেল ৩ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। নিম্নচাপের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে। ফলে সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত এবং নদী বন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এদিকে, বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকা কিংবা প্রতিবন্ধকতার কারণে নিচু সড়কে পানি জমে যায়। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
বাড়ছে পানি, বিদ্যুৎহীন, নেটওয়ার্ক বিপর্যয়
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, একটানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর বন্যা-পরবর্তী জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পড়েছে গাছপালা। কয়েকটি স্থানে ঘর ভেঙে পড়ারও খবর পাওয়া গেছে। বিদ্যুতের লাইনে গাছ ভেঙে পড়ায় ও খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জেলায় বিদ্যুৎহীন ৮০ ভাগের বেশি মানুষ। অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যয়। বন্যা-পরবর্তী জলাবদ্ধতায় এখনো ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি বলে জানায় জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার ভোর থেকে জেলায় থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে ঝড়ো বাতাস। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার বিকেল তিনটা পর্য্যন্ত) ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘূরে দেখা গেছে, বন্যাপরবর্তী তিন সপ্তাহের বেশি সময় জেলার কবিরহাট, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় স্থায়ী হয় জলাবদ্ধতা। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এসব উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নের বাড়ির উঠোন ও সড়কে হাঁটুপানি, কোথাও তার চেয়ে বেশি পানি ছিল। এক মাস ধরে দূর্ভোগে কয়েক লাখ মানুষ। চাটখিল বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, গত আগস্ট মাস থেকে আমরা পানিবন্দি। মাঝে কিছুটা সময় রোদ থাকলেও কয়েক রাত বৃষ্টি হওয়ায় পানি বাড়া-কমার মধ্যে ছিল। এরই মধ্যে শুক্রবার বিকেল থেকে হালকা বৃষ্টি ও রাত থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে পানি বেড়ে আগের জায়গায় উঠেছে। ফলাহারী গ্রামের মাহফুজুর রহমানের বাড়ির উঠোন থেকে গত মঙ্গলবার পানি নেমে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে শনিবার সকালে আবার উঠোনে পানি উঠেছে। একই সাথে ঝড়ো বাতাসে বাড়ির পাশের একটি গাছ উপড়ে বিদ্যুতের লাইনের ওপর পড়ায় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে এখনো বিদ্যুৎ নেই (শনিবার বিকেলে সাড়ে তিনটা)। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে কারও সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ সাদ্দাম হোসেন নামের একজন জানান, এক সপ্তাহ আগে মাইজদীর প্রতিটি এলাকা থেকে পানি নেমে যায়। কিন্তু গত রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে জজকোর্ট সড়ক, টাউন হল মোড়, সার্কেট হাউজ সড়ক, লক্ষ্মীনারায়ণপুর সড়ক, রেডক্রিসেন্ট ও প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সষ্টি হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় ৮-১০ ইঞ্চি বা কোথাও তারও বেশি পানি জমেছে। সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবিলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মঞ্জুর আলম জানান, শনিবার ভোরে ঝড়ো বাতাসে ওই ওয়ার্ডের হেদায়েত মিয়ার ঘরের পাশে থাকা বড় একটি গাছ ভেঙে তার ঘরের ওপর পড়ে। এতে তার ঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় সবাই ঘরের ভিতরে ঘুমে থাকলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া ইউনিয়নে ঝড়ে গাছপালার অনেক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা-পরবর্তী জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যুতের লাইনের আশপাশের গাছপালার গোড়ার মাটি সরে যায়। এ কারণে ঝড়ো বাতাসে গাছ পড়ে বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে আমাদের মাঠকর্মীরা সংযোগ সচল করার কাজ করছেন। তবে এখনো বেশির ভাগ লাইন সচল করা যায়নি।’ জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, বন্যা-পরবর্তী জলাবদ্ধতায় এখনো ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি। চালু থাকা ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৩৮ হাজার ২৭১ জন বন্যাকবলিত মানুষ। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারি ১২৪টি ও বেসরকারি ১৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত আছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বরী আবহাওয়া বৃষ্টিপাতে ভোগান্তি উপকূলীয় জনপদে

আপডেট সময় : ০১:৫৭:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশের খবর ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে টানা বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। ভারী বৃষ্টির কারণে গতকাল শনিবার শহর অনেকটা জনশূন্য হয়ে পড়ে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বের হতে দেখা যায়নি। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরঃ
টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত ভোলার জনজীবন
ভোলা সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ভোলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। ভারী বৃষ্টির কারণে শনিবার সকাল থেকে ব্যস্ততম ভোলা জেলা শহরের সদর রোড অনেকটা জনশূন্য হয়ে পড়ে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বের হতে দেখা যায়নি। বেলা গড়িয়ে দুপুরেও সড়কে কয়েকটি অটোরিকশা ছাড়া তেমন কোনো যানবাহন দেখা যায়নি। এদিকে, বৈরী আবহাওয়ায় শুক্রবার রাতে সাগর মোহনায় ঝড়ের কবলে পড়ে ৮ জেলে নিয়ে একটি মাছ ধরার ট্রলার এখনো নিখোঁজ রয়েছে, যার খোঁজ এখনও মেলেনি। এতে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে জেলে পরিবারগুলো। অন্যদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে পানি জমে আমন ধানের মাঠের ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বৃষ্টিপাতের এ ধারা রোববার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের আমন ধান চাষি কৃষক মো. ছিদ্দিক মিয়া জানান, আমি ৩২ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় এক একর জমিতে আমনের চারা (রোপা) লাগিয়েছিলাম। আগস্টে অতি জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে সব চারা পচে গেছে। পরে আবার চারা কিনে জমিতে লাগাইছি। এখন আবার জমিতে বৃষ্টির পানি জমে গেছে, জমি থেকে যদি পানি দ্রুত না নামে তাহলে দ্বিতীয় দফায় সব শেষ হইয়া যাইব। ভোলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল তিনটা থেকে শনিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ অবস্থা আজ রবিবার পর্যন্ত চলার সম্ভাবনা রয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত
মাদারীপুর সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জেলার আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আব্দুর রহিম সান্টু গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানায়, শনিবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বৃষ্টির সঙ্গে বাড়ে বাতাসের তীব্রতা। বৈরী আবহাওয়ায় স্থবিরতা বিরাজ করছে জনজীবনে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকে। জীবিকার তাগিদে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হয়েছেন রিকশাচালক, শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষ। রিকশাচালক মো. সিদ্দিক বলেন, জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হলেও তেমন কোনো লোকজন রাস্তায় না থাকায় মাত্র দেড়শ টাকা আয় করেছি। সেটি দিয়ে চাল কিনবো নাকি পরিবারের অন্য খরচ করবো বুঝতে পারছি না। আবহাওয়া কর্মকর্তা আব্দুর রহিম সান্টু বলেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ পরিবর্তন হচ্ছে। তবে,পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে রোববারও (১৫ সেপ্টেম্বর) বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। গতকাল শনিবার বিকেল ৩ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। নিম্নচাপের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে। ফলে সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত এবং নদী বন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এদিকে, বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকা কিংবা প্রতিবন্ধকতার কারণে নিচু সড়কে পানি জমে যায়। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
বাড়ছে পানি, বিদ্যুৎহীন, নেটওয়ার্ক বিপর্যয়
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, একটানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর বন্যা-পরবর্তী জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পড়েছে গাছপালা। কয়েকটি স্থানে ঘর ভেঙে পড়ারও খবর পাওয়া গেছে। বিদ্যুতের লাইনে গাছ ভেঙে পড়ায় ও খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জেলায় বিদ্যুৎহীন ৮০ ভাগের বেশি মানুষ। অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যয়। বন্যা-পরবর্তী জলাবদ্ধতায় এখনো ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি বলে জানায় জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার ভোর থেকে জেলায় থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে ঝড়ো বাতাস। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার বিকেল তিনটা পর্য্যন্ত) ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘূরে দেখা গেছে, বন্যাপরবর্তী তিন সপ্তাহের বেশি সময় জেলার কবিরহাট, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় স্থায়ী হয় জলাবদ্ধতা। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এসব উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নের বাড়ির উঠোন ও সড়কে হাঁটুপানি, কোথাও তার চেয়ে বেশি পানি ছিল। এক মাস ধরে দূর্ভোগে কয়েক লাখ মানুষ। চাটখিল বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, গত আগস্ট মাস থেকে আমরা পানিবন্দি। মাঝে কিছুটা সময় রোদ থাকলেও কয়েক রাত বৃষ্টি হওয়ায় পানি বাড়া-কমার মধ্যে ছিল। এরই মধ্যে শুক্রবার বিকেল থেকে হালকা বৃষ্টি ও রাত থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে পানি বেড়ে আগের জায়গায় উঠেছে। ফলাহারী গ্রামের মাহফুজুর রহমানের বাড়ির উঠোন থেকে গত মঙ্গলবার পানি নেমে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে শনিবার সকালে আবার উঠোনে পানি উঠেছে। একই সাথে ঝড়ো বাতাসে বাড়ির পাশের একটি গাছ উপড়ে বিদ্যুতের লাইনের ওপর পড়ায় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে এখনো বিদ্যুৎ নেই (শনিবার বিকেলে সাড়ে তিনটা)। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে কারও সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ সাদ্দাম হোসেন নামের একজন জানান, এক সপ্তাহ আগে মাইজদীর প্রতিটি এলাকা থেকে পানি নেমে যায়। কিন্তু গত রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে জজকোর্ট সড়ক, টাউন হল মোড়, সার্কেট হাউজ সড়ক, লক্ষ্মীনারায়ণপুর সড়ক, রেডক্রিসেন্ট ও প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সষ্টি হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় ৮-১০ ইঞ্চি বা কোথাও তারও বেশি পানি জমেছে। সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবিলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মঞ্জুর আলম জানান, শনিবার ভোরে ঝড়ো বাতাসে ওই ওয়ার্ডের হেদায়েত মিয়ার ঘরের পাশে থাকা বড় একটি গাছ ভেঙে তার ঘরের ওপর পড়ে। এতে তার ঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় সবাই ঘরের ভিতরে ঘুমে থাকলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া ইউনিয়নে ঝড়ে গাছপালার অনেক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা-পরবর্তী জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যুতের লাইনের আশপাশের গাছপালার গোড়ার মাটি সরে যায়। এ কারণে ঝড়ো বাতাসে গাছ পড়ে বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে আমাদের মাঠকর্মীরা সংযোগ সচল করার কাজ করছেন। তবে এখনো বেশির ভাগ লাইন সচল করা যায়নি।’ জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, বন্যা-পরবর্তী জলাবদ্ধতায় এখনো ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি। চালু থাকা ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৩৮ হাজার ২৭১ জন বন্যাকবলিত মানুষ। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারি ১২৪টি ও বেসরকারি ১৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত আছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।