ঢাকা ১১:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

বরিশালের বিপ্লবী দেবেন ঘোষ

  • আপডেট সময় : ০৭:৫৭:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

আমিনুর রহমান খোকন

 

আমাদের বাড়ি কাউনিয়া জানকি সিংহ রোডের অনতিদূরে কাউনিয়া ক্লাব রোডে নিজদের পৈত্রিক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ। আমি আমার ছোটবেলা থেকে দেবেন ঘোষকে দেখেছি। কথা বলেছি। অনেক গল্প হতো সেই পুরনো দিনের ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের রাজনীতি নিয়ে। দেবেন ঘোষ আমাদের গর্ব। আমি অনেক সময়ই বলতাম আমাদের পাড়া কাউনিয়ায় একজন বিপ্লবী, স্বদেশি আন্দোলনের নেতার বাস। আসলে দেবেন ঘোষকে কাউনিয়া বা বরিশালে আটকে রাখা যায়নি। তিনি তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জন্য একজন বিপ্লবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ মূলত অশ্বিনী কুমার দত্তের ও বরিশালের শঙ্করমঠের প্রতিষ্ঠাতা সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় (প্রজ্ঞানন্দ) সাথে বিপ্লবী কাজে জড়িয়ে পড়েন ও অনুপ্রেরণা লাভ করেন। দেবেন্দ্রনাথ ঘোষকে ‘বিপ্লবী দেবেন ঘোষ’ হতে জীবনে ২৬ বছরের মতো জেল খাটতে হয়েছে। ১৮৯০ সালে তিনি বরিশাল নগরীর কাউনিয়ার নিজ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল জীবনেই তিনি সশস্ত্র বিপ্লবী দল ‘অনুশীলন’ দলে যোগ দেয়ায় স্কুল থেকে বিতাড়িত হন। ১৯১৩ সালে বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি জড়িয়ে পড়েন। পরে ব্রিটিশ, পাকিস্তান এমনকি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তাকে জেলে নিক্ষেপ করা হয়। রাস্ট্রভাষা আন্দোলনেও তিনি সমর্থন জানিয়ে জেল খাটেন। ১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টর সময় এমপিএ নির্বাচিত হন। তিনি সর্বমোট তিনি ২৬ বছর জেল খাটেন। বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করলে তিনি বাকশালে যোগদান করেন। তিনি বহু সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ১১ জানুয়ারী ভোর রাতে তিনি ১০৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

গত ১১ জানুয়ারি ছিল তার মৃত্যুদিবস। বরিশালে তাকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়। তার মৃত্যুতে পরিবারের পক্ষ ও বিপ্লবী দেবেন ঘোষ স্মৃতি রক্ষা কমিটির উদ্যোগে বরিশাল মহাশ্মশানে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া বিকেলে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বৃত্তি প্রদান কর্মসূচি নেয়া হয়।
অগ্নিযুগের বিপ্লবী দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ। তার বাবার নাম নিবারন চন্দ্র ঘোষ। মায়ের নাম রাজলক্ষ্মী ঘোষ। বিপ্লবী দেবেন ঘোষ একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিক। বিপ্লবী নেতা দেবেন ঘোষ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের শুরু থেকেই নিয়মিত মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের কাছে যেতেন। তাকে দাদু বলে ডাকতনে। তখন দেবেন বাবু বিএম স্কুলে পড়তেন।

অশ্বিনী কুমার দত্তের আরেক বিপ্লবী সহযোগী সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় (বিএম স্কুলের শিক্ষক/উজিরপুর স্কুলের শিক্ষক) যার ডাকনাম হয় প্রজ্ঞানন্দ। উজিরপুরে প্রজ্ঞানন্দের পৈত্রিক বাড়ি। এবং উজিরপুর সদরের বিএম মডেল ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ওখানেই ২ বছর শিক্ষকতা করেন। প্রজ্ঞানন্দ ১৯১০ সালে প্রায় সাড়ে ৩ একর জমির উপর শংকর মঠ নামে এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করার কারণ হিসেবে জানা যায়, সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ভারতবর্ষ স্বাধীনতা আন্দোলনে এখান থেকেই রাজনৈতিক চেতনায় যুব সম্প্রদায়কে উজ্জীবিত করার কাজ করতেন। এ মঠে দেবেন ঘোষ মাঝে মাঝে গমন করতেন। সতীশ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকেও অনুপ্রাণিত হন। এবং বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়ান।

কলাম লেখক
আমিনুর রহমান খোকন
কাউনিয়া, বরিশাল
০১৭১১১২৭১৭১

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনার মুক্তি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে ২৭ বিশিষ্ট নারীর স্মারকলিপি

বরিশালের বিপ্লবী দেবেন ঘোষ

আপডেট সময় : ০৭:৫৭:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

আমিনুর রহমান খোকন

 

আমাদের বাড়ি কাউনিয়া জানকি সিংহ রোডের অনতিদূরে কাউনিয়া ক্লাব রোডে নিজদের পৈত্রিক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ। আমি আমার ছোটবেলা থেকে দেবেন ঘোষকে দেখেছি। কথা বলেছি। অনেক গল্প হতো সেই পুরনো দিনের ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের রাজনীতি নিয়ে। দেবেন ঘোষ আমাদের গর্ব। আমি অনেক সময়ই বলতাম আমাদের পাড়া কাউনিয়ায় একজন বিপ্লবী, স্বদেশি আন্দোলনের নেতার বাস। আসলে দেবেন ঘোষকে কাউনিয়া বা বরিশালে আটকে রাখা যায়নি। তিনি তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জন্য একজন বিপ্লবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ মূলত অশ্বিনী কুমার দত্তের ও বরিশালের শঙ্করমঠের প্রতিষ্ঠাতা সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় (প্রজ্ঞানন্দ) সাথে বিপ্লবী কাজে জড়িয়ে পড়েন ও অনুপ্রেরণা লাভ করেন। দেবেন্দ্রনাথ ঘোষকে ‘বিপ্লবী দেবেন ঘোষ’ হতে জীবনে ২৬ বছরের মতো জেল খাটতে হয়েছে। ১৮৯০ সালে তিনি বরিশাল নগরীর কাউনিয়ার নিজ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল জীবনেই তিনি সশস্ত্র বিপ্লবী দল ‘অনুশীলন’ দলে যোগ দেয়ায় স্কুল থেকে বিতাড়িত হন। ১৯১৩ সালে বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি জড়িয়ে পড়েন। পরে ব্রিটিশ, পাকিস্তান এমনকি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তাকে জেলে নিক্ষেপ করা হয়। রাস্ট্রভাষা আন্দোলনেও তিনি সমর্থন জানিয়ে জেল খাটেন। ১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টর সময় এমপিএ নির্বাচিত হন। তিনি সর্বমোট তিনি ২৬ বছর জেল খাটেন। বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করলে তিনি বাকশালে যোগদান করেন। তিনি বহু সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ১১ জানুয়ারী ভোর রাতে তিনি ১০৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

গত ১১ জানুয়ারি ছিল তার মৃত্যুদিবস। বরিশালে তাকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়। তার মৃত্যুতে পরিবারের পক্ষ ও বিপ্লবী দেবেন ঘোষ স্মৃতি রক্ষা কমিটির উদ্যোগে বরিশাল মহাশ্মশানে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া বিকেলে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বৃত্তি প্রদান কর্মসূচি নেয়া হয়।
অগ্নিযুগের বিপ্লবী দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ। তার বাবার নাম নিবারন চন্দ্র ঘোষ। মায়ের নাম রাজলক্ষ্মী ঘোষ। বিপ্লবী দেবেন ঘোষ একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিক। বিপ্লবী নেতা দেবেন ঘোষ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের শুরু থেকেই নিয়মিত মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের কাছে যেতেন। তাকে দাদু বলে ডাকতনে। তখন দেবেন বাবু বিএম স্কুলে পড়তেন।

অশ্বিনী কুমার দত্তের আরেক বিপ্লবী সহযোগী সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় (বিএম স্কুলের শিক্ষক/উজিরপুর স্কুলের শিক্ষক) যার ডাকনাম হয় প্রজ্ঞানন্দ। উজিরপুরে প্রজ্ঞানন্দের পৈত্রিক বাড়ি। এবং উজিরপুর সদরের বিএম মডেল ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ওখানেই ২ বছর শিক্ষকতা করেন। প্রজ্ঞানন্দ ১৯১০ সালে প্রায় সাড়ে ৩ একর জমির উপর শংকর মঠ নামে এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করার কারণ হিসেবে জানা যায়, সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ভারতবর্ষ স্বাধীনতা আন্দোলনে এখান থেকেই রাজনৈতিক চেতনায় যুব সম্প্রদায়কে উজ্জীবিত করার কাজ করতেন। এ মঠে দেবেন ঘোষ মাঝে মাঝে গমন করতেন। সতীশ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকেও অনুপ্রাণিত হন। এবং বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়ান।

কলাম লেখক
আমিনুর রহমান খোকন
কাউনিয়া, বরিশাল
০১৭১১১২৭১৭১