ময়মনসিংহ সংবাদদাতা: ভারতের গারো পাহাড়ের পাদদেশ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এখনো ৩৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ফলে খাবার সংকটে থাকা পরিবারগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য। হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ জানান, বন্যা দুর্গত উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্েয ইতোমধ্যে ভূবনকূড়া, জুবলী, কৈচাপুর, সদর, গাজীরভিটা ও পৌর এলাকার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে ধারা, ধূরাইল, নড়াইল, সাখুয়াই, আমতৈল ও বিলডোরাসহ অপর ৬টি ইউনিয়নে। এতে ওইসব এলাকায় বতর্মানে ১৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, উপজেলার মোট ৭টি ইউনিয়নের মধ্েয গামারীতলা, ঘোঁষগাঁও এবং দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নে কমেছে বন্যার পানি। তবে সদর, গোয়াতলা, পোড়াকানদলিয়া ও বাগবেড়সহ ৪টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি থাকায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দি। এছাড়াও নতুন করে ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর, ছনধরা ও সদর ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম আরিফুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি ভাটির দিকে নেমে আসায় বর্তমানে ফুলপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৫ হাজার একশ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১৭ হাজার। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন জানান, বন্যা দুর্গত এলাকায় পানিবন্দিদের উদ্ধার কাজের পাশাপাশি দুর্গতদের মাঝে চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। এসব এলাকায় ইতোমধ্যে ৬৩ মেট্রিক টন চাল, ৭ লাখ নগদ টাকা এবং দুই হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। অপরদিকে বন্যার কারণে মৎস্য খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৭ হাজার ৮০ জন মৎস্যচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ২১৭ লাখ, ভেসে গেছে ৫ হাজার ৬২৪ লাখ টাকার মাছ ও ১৪৯ লাখ টাকার রেনু পোনা ভেসে গেছে। এছাড়াও জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, জেলার তিনটি উপজেলার মধ্েয ধোবাউড়া উপজেলায় ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। হালুয়াঘাটে তলিয়ে গেছে ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ধান এবং ৭৫ হেক্টর সবজি ফসল। একই অবস্থা ফুলপুরেও। এই উপজেলায় ৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর ধান এবং ৬২ হেক্টর সবজি ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
দুর্গতদের পাশে সেনাবাহিনী
বন্যাকবলিত ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলা পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ সময় দুর্গম এলাকার পানিবন্দি পরিবারগুলোতে ত্রাণ বিতরণ করেন তারা। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের রাউতি ও বতিহালা গ্রামে এই ত্রাণ বিতরণ করা হয়। লেফটেন্যান্ট কর্নেল লেনিনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে এই ত্রাণ বিতরণ করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে হালুয়াঘাট উপজেলার ধুরাইল ও কৈচাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পানিবন্দি নারী ও শিশুদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার ধোবাউড়া উপজেলার দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ধোবাউড়া উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া, বাঘবেড়, সদর ও গোয়াতলা চার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার পরিবারের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি। তবে উপজেলার অন্য তিনটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। আশা করছি দ্রুত এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।