নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেট-সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যার সময় পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে অনেক সড়ক কেটে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু সড়ক বন্যায় ভেঙে গেছে। বন্যায় ভেঙে যাওয়া ও কেটে ফেলা সড়কে নতুন করে উড়াল সড়ক, কালভার্ট অথবা ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। এসব স্থানে নতুন করে পুনরায় সড়ক নির্মাণ করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। গতকাল মঙ্গলবার শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত একনেক সভা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও মৌলভীবাজারের অনেক সড়ক কেটে ফেলা হয়েছে পানি বের করার জন্য। এছাড়া কিছু সড়ক ভেঙে গেছে। তাই এসব সড়কের জায়গায় নতুন করে সড়ক নির্মাণ করা যাবে না। এসব জায়গায় সেতু, উড়াল সড়ক অথবা কালভার্ট নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। সড়ক সেতু ভেঙে গেছে। হাওর বা প্লাবন এলাকায় সড়ক নয় ব্রিজ অথবা কালভার্ট করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পানি চলাচলে যেন বাধা সৃষ্টি না হয়। সিলেট এলাকায় পুনর্বাসনের জন্য নতুন করে প্রকল্প নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক এলাকায় তাই পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ প্রকল্প নেওয়া হবে। একনেক সভায় নিয়ে আসা হবে। আর কোথায় ওভারপাস বা আন্ডারপাস দরকার তা খুঁজে বের করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নৌরুটে কালভার্ট নয়, ব্রিজ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বন্যায় মৃত বেড়ে ৮৬, রোগে ভুগছেন ৭৭৩১ : সারাদেশে বন্যা ও বন্যায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে সিলেট বিভাগেরই ৫৩ জন। এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে ২৮ জন এবং রংপুর বিভাগে এ পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেছেন। গত ১৭ জুন থেকে গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জুন) পর্যন্ত সময়ে তাদের মৃত্যু হয়। বন্যাকবলিত এলাকায় সৃষ্ট দুর্ঘটনা এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা মারা গেছেন। বন্যায় জেলাভিত্তিক মৃত্যুতে সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে সুনামগঞ্জ। ১৭ মে থেকে ২৮ জুনের মধ্যে এ জেলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিলেট জেলায় মারা গেছেন ১৮ জন। এছাড়া হবিগঞ্জে চারজন ও মৌলভীবাজারে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
নেত্রকোনায় ও জামালপুরে বন্যা ও বন্যায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯ জন করে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ময়মনসিংহে মারা গেছেন পাঁচজন। এছাড়া শেরপুরে পাঁচজন, কুড়িগ্রামে চারজন ও লালমনিরহাটে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে মঙ্গলবার (২৮ জুন) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এত বলা হয়েছে, রোববার পর্যন্ত বন্যাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৮৯০ জন। গতকাল মঙ্গলবার তা বেড়ে ৭ হাজার ৭৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ দুদিনে এক হাজার ৮৪১ জন। বন্যার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ২৪৪ জন। এতে মৃত্যু হয়েছে একজনের। আরটিআই (চোখের রোগ) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১১ জন। তবে এতে কারও মৃত্যুর খবর নেই। বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। সাপের দংশনের শিকার হয়েছেন ১০ জন। তাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে সেতু-উড়াল সড়ক নির্মাণের নির্দেশ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ