ঢাকা ০২:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫

বন্যার মধ্যে সুরমার চরে আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করল সেনাবাহিনী

  • আপডেট সময় : ০১:৩৫:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : হাওরে বেড়াতে গিয়ে বন্যায় আটকা পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ৮০ জনকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সুরমা নদীর চর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গতকাল রোববার সকালে এক বার্তায় জানায়, শিক্ষার্থীসহ যারা লঞ্চ নষ্ট হয়ে আটকা পড়েছিলেন, তাদের উদ্ধার করে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন উদ্ধার হওয়ার পর ফেইসবুকে নিজেদের শেয়ার করে নিরাপদে থাকার কথা জানিয়েছেন।
তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শোয়াইব আহমেদ রোববার বেলা ১১টার দিকে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সবাই নিরাপদে আছি এখন। সেনাবাহিনী আমাদের উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ ক্যাম্পে নিয়ে এসেছে।“
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানেই তাদের ঢাকায় ফেরার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান এই শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২১ শিক্ষার্থী গত ১৪ জুন টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণে যান। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে শহরের ‘পানসী রেস্তোরাঁয় আশ্রয় নেন তারা।
সেখানে বিদ্যুৎ, খাবার, সুপেয় পানিসহ নানা সংকটের কথা জানিয়ে তারা উদ্ধারের আর্তি জানিয়েছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে শুক্রবার বিকালে ‘পানসী’রেস্তোরাঁ থেকে তাদের জেলা পুলিশ লাইনসে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক। এরপর শনিবার দুপুর ২টার দিকে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনস থেকে কপোতাক্ষ অনির্বাণ ট্যুরিজম বোট নামে একটি লঞ্চে করে সিলেট শহরের দিকে রওনা দেন ওই শিক্ষার্থীরা। লঞ্চে তার সঙ্গী হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ১৭ জন এবং জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
সব মিলিয়ে ওই লঞ্চে যাত্রী ছিলেন প্রায় ৮০ জন। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেলে দোয়ারাবাজার সংলগ্ন সুরমা নদীর চরে আটকা পড়েন সবাই। তারেক রহমান নামে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী রাত ১২ টার দিকে ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “মাত্রই ফোনে নেট কানেকশন পেলাম। সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট আসার পথে আমাদের লঞ্চটা বাজেভাবে আটকে গেছে। যে কোনো সময় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। গত তিনদিনের ভয়ানক পরিস্থিতিতে আমরা এতটাই ট্রমাটাইজড যে মানসিকভাবে আমরা মারাত্মক বিপর্যস্ত।
“প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝে এই মুহূর্তে কোনো রেসকিউ টিম আসতেও পারতেছে না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন আর যে যেভাবে পারেন আমাদের সাহায্য করেন।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ রাত দেড়টার দিকে জানান, লঞ্চে আটকা পড়া যাত্রীদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর একটি দল রওনা হয়েছিল। কিন্তু নদীতে প্রবল স্রোত, বৃষ্টি আর অন্ধকারে পথ খুঁজে পেতে সমস্যা হওয়ায় অর্ধেক পথ থেকে তাদের ফিরে যেতে হয়।
“আইএসপিআরের ডিরেক্টর আমাকে মেসেজ দিয়েছেন, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর টিম গিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করবে। উদ্ধারের জন্য ৪- ৫টি স্পিডবোট রেডি করা আছে বলে জানিয়েছে।”
এরপর সকালে সেনাবাহিনীর একটি দল পাঁচটি স্পিডবোট নিয়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থেকে প্রথমে ৩০ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ ক্যাম্পে নিয়ে যান। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও উদ্ধার করে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানায় আইএসপিআর।
অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ রোববার দুপুর ১২টার দিকে বলেন, “সিলেটের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল হামিদুল হক এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শওকত কিছুক্ষণ আগে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা আমাকে জানালেন, শিক্ষার্থীরা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় নেমে গাড়িতে করে সিলেট সেনানিবাসের পথে রওনা হয়েছে।“ সেনবাহিনী শিক্ষার্থীদের সিলেট থেকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করবে বলে জানান তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যার মধ্যে সুরমার চরে আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করল সেনাবাহিনী

আপডেট সময় : ০১:৩৫:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : হাওরে বেড়াতে গিয়ে বন্যায় আটকা পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ৮০ জনকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সুরমা নদীর চর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গতকাল রোববার সকালে এক বার্তায় জানায়, শিক্ষার্থীসহ যারা লঞ্চ নষ্ট হয়ে আটকা পড়েছিলেন, তাদের উদ্ধার করে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন উদ্ধার হওয়ার পর ফেইসবুকে নিজেদের শেয়ার করে নিরাপদে থাকার কথা জানিয়েছেন।
তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শোয়াইব আহমেদ রোববার বেলা ১১টার দিকে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সবাই নিরাপদে আছি এখন। সেনাবাহিনী আমাদের উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ ক্যাম্পে নিয়ে এসেছে।“
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানেই তাদের ঢাকায় ফেরার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান এই শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২১ শিক্ষার্থী গত ১৪ জুন টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণে যান। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে শহরের ‘পানসী রেস্তোরাঁয় আশ্রয় নেন তারা।
সেখানে বিদ্যুৎ, খাবার, সুপেয় পানিসহ নানা সংকটের কথা জানিয়ে তারা উদ্ধারের আর্তি জানিয়েছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে শুক্রবার বিকালে ‘পানসী’রেস্তোরাঁ থেকে তাদের জেলা পুলিশ লাইনসে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক। এরপর শনিবার দুপুর ২টার দিকে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনস থেকে কপোতাক্ষ অনির্বাণ ট্যুরিজম বোট নামে একটি লঞ্চে করে সিলেট শহরের দিকে রওনা দেন ওই শিক্ষার্থীরা। লঞ্চে তার সঙ্গী হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ১৭ জন এবং জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
সব মিলিয়ে ওই লঞ্চে যাত্রী ছিলেন প্রায় ৮০ জন। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেলে দোয়ারাবাজার সংলগ্ন সুরমা নদীর চরে আটকা পড়েন সবাই। তারেক রহমান নামে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী রাত ১২ টার দিকে ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “মাত্রই ফোনে নেট কানেকশন পেলাম। সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট আসার পথে আমাদের লঞ্চটা বাজেভাবে আটকে গেছে। যে কোনো সময় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। গত তিনদিনের ভয়ানক পরিস্থিতিতে আমরা এতটাই ট্রমাটাইজড যে মানসিকভাবে আমরা মারাত্মক বিপর্যস্ত।
“প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝে এই মুহূর্তে কোনো রেসকিউ টিম আসতেও পারতেছে না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন আর যে যেভাবে পারেন আমাদের সাহায্য করেন।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ রাত দেড়টার দিকে জানান, লঞ্চে আটকা পড়া যাত্রীদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর একটি দল রওনা হয়েছিল। কিন্তু নদীতে প্রবল স্রোত, বৃষ্টি আর অন্ধকারে পথ খুঁজে পেতে সমস্যা হওয়ায় অর্ধেক পথ থেকে তাদের ফিরে যেতে হয়।
“আইএসপিআরের ডিরেক্টর আমাকে মেসেজ দিয়েছেন, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর টিম গিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করবে। উদ্ধারের জন্য ৪- ৫টি স্পিডবোট রেডি করা আছে বলে জানিয়েছে।”
এরপর সকালে সেনাবাহিনীর একটি দল পাঁচটি স্পিডবোট নিয়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থেকে প্রথমে ৩০ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ ক্যাম্পে নিয়ে যান। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও উদ্ধার করে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানায় আইএসপিআর।
অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ রোববার দুপুর ১২টার দিকে বলেন, “সিলেটের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল হামিদুল হক এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শওকত কিছুক্ষণ আগে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা আমাকে জানালেন, শিক্ষার্থীরা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় নেমে গাড়িতে করে সিলেট সেনানিবাসের পথে রওনা হয়েছে।“ সেনবাহিনী শিক্ষার্থীদের সিলেট থেকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করবে বলে জানান তিনি।