ঢাকা ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বন্যায় কমেছে আমনের আবাদ, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকে

  • আপডেট সময় : ০৮:২৩:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • ৪১ বার পড়া হয়েছে

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : কৃষকরা যখন আমন ধানের আবাদের প্রস্তুতি নেয়, ঠিক তখনই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয় লক্ষ্মীপুর জেলা। পানিতে তলিয়ে আমনের বীজতলা ও ক্ষেতে থাকা রোপা আমনের চারা পচে যায়। দীর্ঘ সময় ফসলি ক্ষেতে বন্যার পানি থাকায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জেলার প্রায় ৪৫ শতাংশ জমিতে আমনের আবাদ করা সম্ভব হয়নি। ফলে চলতি মৌসুমে আমনের যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্ধেকে নেমে আসবে। এ অবস্থায় চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা। সংকট দেখা দেবে চালের। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষকেরা ভুগবেন খাদ্য সংকটে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী বন্যার পানির কারণে জেলায় ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি আমন আবাদের বাইরেই রয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৮৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ২ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বন্যায় ক্ষতির কারণে এ মৌসুমে এক লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন চাল কম উৎপাদন হবে। বন্যার পানিতে ক্ষতির বাইরে থাকা অবশিষ্ট ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। বন্যা, জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে দুই হাজার ৫৩৬ দশমিক ৮০ হেক্টর জমির বীজতলা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। যা মোট বীজতলার ৭০ ভাগের বেশি। এতে ৬৩ হাজার ৪২০ জন কৃষকের ২৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যার শুরুতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমিতে। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে ৭ হাজার ৬১০ দশমিক ৭০ হেক্টর জমির রোপা আমন। যা আবাদ করা মোট জমির ৫৩ ভাগ। এতে ৩১ হাজার ৭০৬ জন কৃষকের ৮৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় আমনে ৯ হাজার ৭২০ জন কৃষকের এক কোটি দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলার পশ্চিম দিঘলী গ্রামের কৃষক মমিন উল্যা বলেন, বন্যার শুরুতে আমাদের সব বীজতলা ও ক্ষেতের রোপা আমন পচে গেছে। আমার বাড়ির আশেপাশে প্রায় ৫০ একর জমিতে আমন ধানের আবাদ হতো। জমিগুলোয় এখনো বুক পরিমাণ পানি। দুই একর জমিতে আমি আমন ধান করি৷ উৎপাদিত ধান দিয়েই নিজের সংসার চলে। আবার কিছু ধান বিক্রি করে আবাদের খরচ উঠাই। কিন্তু এবার ধান আবাদ হয়নি। খাব কি সে চিন্তায় আছি।
একই এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেড় মন ধানের বীজতলা করি। বন্যার শুরুতে পানি উঠে বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। ধানের জমিগুলোয় অথৈ পানি থাকায় আবাদ সম্ভব হয়নি। চরশাহী এলাকার কৃষক কামাল হোসেন, আবদুর রহান ও শহীদ উল্যা জানান, বন্যার কারণে তাদের আমনের বীজতলা এবং রোপা আমন নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো কৃষকও এক শতাংশ জমিতে আমনের আবাদ করার সুযোগ পায়নি। বন্যা সব শেষ করে দিয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন, বন্যায় আমনের বীজতলা ও রোপা আমন নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৬ হাজার কৃষকের মাঝে আমন ধানের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তাদের অ্যাকাউন্টে ১ হাজার টাকা করে সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বন্যায় কমেছে আমনের আবাদ, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকে

আপডেট সময় : ০৮:২৩:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : কৃষকরা যখন আমন ধানের আবাদের প্রস্তুতি নেয়, ঠিক তখনই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয় লক্ষ্মীপুর জেলা। পানিতে তলিয়ে আমনের বীজতলা ও ক্ষেতে থাকা রোপা আমনের চারা পচে যায়। দীর্ঘ সময় ফসলি ক্ষেতে বন্যার পানি থাকায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জেলার প্রায় ৪৫ শতাংশ জমিতে আমনের আবাদ করা সম্ভব হয়নি। ফলে চলতি মৌসুমে আমনের যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্ধেকে নেমে আসবে। এ অবস্থায় চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা। সংকট দেখা দেবে চালের। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষকেরা ভুগবেন খাদ্য সংকটে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী বন্যার পানির কারণে জেলায় ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি আমন আবাদের বাইরেই রয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৮৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ২ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বন্যায় ক্ষতির কারণে এ মৌসুমে এক লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন চাল কম উৎপাদন হবে। বন্যার পানিতে ক্ষতির বাইরে থাকা অবশিষ্ট ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। বন্যা, জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে দুই হাজার ৫৩৬ দশমিক ৮০ হেক্টর জমির বীজতলা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। যা মোট বীজতলার ৭০ ভাগের বেশি। এতে ৬৩ হাজার ৪২০ জন কৃষকের ২৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যার শুরুতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমিতে। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে ৭ হাজার ৬১০ দশমিক ৭০ হেক্টর জমির রোপা আমন। যা আবাদ করা মোট জমির ৫৩ ভাগ। এতে ৩১ হাজার ৭০৬ জন কৃষকের ৮৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় আমনে ৯ হাজার ৭২০ জন কৃষকের এক কোটি দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলার পশ্চিম দিঘলী গ্রামের কৃষক মমিন উল্যা বলেন, বন্যার শুরুতে আমাদের সব বীজতলা ও ক্ষেতের রোপা আমন পচে গেছে। আমার বাড়ির আশেপাশে প্রায় ৫০ একর জমিতে আমন ধানের আবাদ হতো। জমিগুলোয় এখনো বুক পরিমাণ পানি। দুই একর জমিতে আমি আমন ধান করি৷ উৎপাদিত ধান দিয়েই নিজের সংসার চলে। আবার কিছু ধান বিক্রি করে আবাদের খরচ উঠাই। কিন্তু এবার ধান আবাদ হয়নি। খাব কি সে চিন্তায় আছি।
একই এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেড় মন ধানের বীজতলা করি। বন্যার শুরুতে পানি উঠে বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। ধানের জমিগুলোয় অথৈ পানি থাকায় আবাদ সম্ভব হয়নি। চরশাহী এলাকার কৃষক কামাল হোসেন, আবদুর রহান ও শহীদ উল্যা জানান, বন্যার কারণে তাদের আমনের বীজতলা এবং রোপা আমন নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো কৃষকও এক শতাংশ জমিতে আমনের আবাদ করার সুযোগ পায়নি। বন্যা সব শেষ করে দিয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন, বন্যায় আমনের বীজতলা ও রোপা আমন নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৬ হাজার কৃষকের মাঝে আমন ধানের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তাদের অ্যাকাউন্টে ১ হাজার টাকা করে সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।