প্রত্যাশা ডেস্ক: সোমবার ((২৮ এপ্রিল) একদিনে দেশের ৯ জেলায় বজ্রপাতে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লায় ৪ জন, কিশোরগঞ্জে ৩ জন এবং সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, চাঁদপুর, যশোর, হবিগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরিয়তপুরে একজন করে মারা গেছেন।
প্রতিনিধিদের খবরে জানা গেছে, কুমিল্লার দুই উপজেলায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো একজন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে বজ্রপাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন কৃষক ও একজন কৃষাণী।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে কুমিল্লার বরুড়া ও মুরাদনগর উপজেলায় পৃথক দুইটি ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কোরবানপুর পূর্ব পাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, উপজেলার দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূইয়ার ছেলে জুয়েল ভূইয়া (৩৫) ও কোরবানপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া (কালীবাড়ি) এলাকার মৃত বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৬০)।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, ওই সময় তারা মাঠে কাজ করছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম মেম্বার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়েছি। তাদের পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে একই দিনে দুপুরের দিকে বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগুচ্ছ গ্রামে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন, ওই এলাকার মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং একই এলাকার আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুজনই উপজেলার বড় হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। হালকা মেঘলা আবহাওয়ায় তারা মাঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। আকস্মিক বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। বরুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী নাজমুল হক বলেন, ২ কিশোর ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যাওয়ার খবর স্থানীয়ভাবে জানতে পেরেছি। হঠাৎ এই মর্মান্তিক ঘটনায় দুই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
কিশোরগঞ্জে নিহত ৩: কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে বজ্রপাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন কৃষক ও একজন কৃষাণী। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলার মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে খড় শুকাতে গিয়ে ফুলেছা বেগম (৬৫) নামে এক কৃষাণী বজ্রপাতে নিহত হন। এছাড়া সকাল ১০টার দিকে জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর হাওরে ধান কাটার সময় ইন্দ্রজিৎ দাস (৩৬) ও কলমা হাওরে ধান কাটার সময় স্বাধীন মিয়া (১৪) নামের দুই কৃষক নিহত হন। নিহত কৃষাণী ফুলেছা বেগম (৬৫) মিঠামইনে উপজেলার রাণীগঞ্জ কেওয়ারজোড় এলাকার মৃত আশরাফ আলীর স্ত্রী। এছাড়া ইন্দ্রজিৎ দাস (৩৬) অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর গ্রামের মৃত যতীন্দ্র দাসের ছেলে এবং স্বাধীন মিয়া (১৪) একই উপজেলার খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে।
মিঠামইন থানার উপপরিদর্শক অর্পন বিশ্বাস জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ির পাশে ধানের খড় শুকাচ্ছিলেন ফুলেছা বেগম। এসময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন জানান, সোমবার সকাল ১০টার দিকে কৃষক ইন্দ্রজিৎ দাস বাড়ির পাশে হালালপুর হাওরে ধান কাটছিলেন। এসময় বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই কৃষক ইন্দ্রজিৎ দাসের মৃত্যু হয়। একই সময় উপজেলার খয়েরপুর হাওরে কৃষক স্বাধীন মিয়া ধান কাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হন।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় বজ্রপাতে রিমন তালুকদার (২২) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রিমন তালুকদার শাল্লা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতোই সকালে গরুকে ঘাস খাওয়াতে বাড়ির পাশের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে যান রিমন। এ সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে তিনি নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই বজ্রপাতের শিকার হন। ঘটনাস্থলেই রিমন ও তার সঙ্গে থাকা গবাদিপশুর মৃত্যু হয়।
নেত্রকোণা: নেত্রকোণার মদনে আরাফাত মিয়া (১০) নামে এক মাদরাসার ছাত্র মারা গেছেন। সোমবার ভোর ৬টার দিকে উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামে নিজ বাড়ির সামনেই বজ্রপাতে মৃত্যু হয় তার। আরাফাত উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে। মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অলিদুজ্জামান জানান, আরাফাত নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থীর বজ্রপাতে মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
চাঁদপুর: কালবৈশাখী ঝড়ে চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতের বিকট শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে বিশকা রানী সরকার (৪৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার উত্তর কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের নাহারে গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বিশকা রানী সরকার চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৩নং ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের পূর্বপাড়া মন্দির ওয়ালা বাড়ির হরিপদ সরকারের স্ত্রী। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বেলা সাড়ে ১১টায় তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন ধানের জমিতে কাজ করছিলেন। ওই সময় আকাশে মেঘ করে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতের শুনে স্ত্রী বিশকা রানী সরকার মাটিতে পড়ে যান। পরে তার স্বামী হরিদাস সরকার তাকে উদ্ধার করে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিশকা রানী সরকারকে মৃত ঘোষণা করেন।
কচুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, মৃত বিশকা রানী সরকারের শরীরে বজ্রপাতের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় নাই। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে । মৃতদেহ নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। এ মৃত্যু নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ না থাকায় সামাজিকভাবে সৎকারের জন্য অনুমতি প্রদান করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে বজ্রপাতে আতঙ্কিত হয়ে মারা যেতে পারেন। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, ওই গৃহবধূ বজ্রপাতের বিকট আওয়াজে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত ডাক্তাররা। তবে এ নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
হবিগঞ্জ: সকালে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দুর্বাসা দাস (৩৫) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। আহতরা হলেন, তার ভাই ভূষণ দাস (৩৪), বোন সুধন্য দাস (২৮) ও একই উপজেলার বাগহাতা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ মিয়া (১৩)।
শরীয়তপুর: জেলার ভেদরগঞ্জে গরুর জন্য ঘাস আনতে গিয়ে বজ্রপাতে সেফালী বেগম (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের বেপারী কান্দি এলাকার এলাকার সোহরাব হোসেন বেপারীর স্ত্রী।
মাদারীপুর: জেলার রাজৈরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে কাজল বাড়ৈ (৪০) নামে আরেক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের জ্ঞান বাড়ৈর ছেলে।
যশোর (বেনাপোল): বিকেলে জেলার শার্শায় বজ্রপাতে আমির হোসেন (৪০) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছে। আমির হোসেন শার্শা উপজেলার বেড়ী-নারায়ণপুর গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে।