স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক : প্রতি বছরে একজন রোগী হাজার টাকাতেই (৯-১০ ডলার) উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের মানসম্মত চিকিৎসা নিতে পারবেন। ব্রিটিশ একটি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার বরাত দিয়ে বুধবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভস’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) প্রোগ্রাম, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) ও রিজলভ টু সেভ লাইভস।
বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অলাভজনক সংস্থা রিজলভ টু সেভ লাইভস-এর সহযোগিতায় ২০১৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ (এনএইচএফবি) যৌথভাবে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার উদ্দেশ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা, চিকিৎসা প্রদান ও ফলোআপ কার্যক্রম শক্তিশালী করা। রিজলভ টু সেভ লাইভস-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর সাবেক পরিচালক ডা. টম ফ্রিইডেন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে অসংখ্য জীবন বাঁচানোসহ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। সাধারণ ওষুধের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ৪৯ শতাংশের রোগটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর মাত্র ৩৫ শতাংশ চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং ১৪ শতাংশ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এনসিডিসি ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের যৌথ পরিচালনায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এরইমধ্যে দেশের ৫১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হার্টস টেকনিক্যাল প্যাকেজ-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কর্মসূচির আওতায় চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত নিবন্ধিত ১ লাখ রোগীর মধ্যে ৫৮ শতাংশই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। কর্মসূচিটি বিশ্বে প্রচলিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করেই সাজানো হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসায় সহজ ট্রিটমেন্ট প্রটোকলের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট ওষুধ, প্রয়োগ মাত্রা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, টিমভিত্তিক সেবা ও টাস্ক শেয়ারিং, সাশ্রয়ী মূল্যের এবং ভালো মানের ওষুধ সরবরাহ চালু রাখা, রোগী-কেন্দ্রিক সেবা প্রদান, সহজে গ্রহণ করা যায় এমন ওষুধের ব্যবস্থা, বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান ও নিয়মিত ফলোআপ এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে রোগীদের খোঁজ রাখা। বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ণ, শারীরিক পরিশ্রম কম এমন জীবনাচরণ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ এবং আরও অনেক কারণে বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপের বোঝা আগামী বছরগুলোতে বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বছরে হাজার টাকাতেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ