নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্পদ আহরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার ইতোমধ্যে সেই লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং আরও অনেক কিছু বাংলাদেশকে করতে হবে।
গতকাল রোববার মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ৪১তম ব্যাচের ক্যাডেটদের ‘মুজিববর্ষ’ পাসিং আউট প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।
চট্টগ্রামের মেরিন ফিশারিজ একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডের এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার সমুদ্র সম্পদের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ‘ব্লু- ইকোনমি’ নীতিমালা ঘোষণা করেছে এবং ওই সম্পদ ব্যবহার করে অর্থনীতিকে আরো গতিশীল, শক্তিশালী ও মজবুত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
“আমাদের বঙ্গোপসাগর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যে বিশাল সম্পদ রয়েছে সেই সম্পদ আমাদের আহরণ করতে হবে। এখানে যেমন মৎস্য সম্পদ আছে তেমনি অন্যান্য সামুদ্রিক সম্পদও আছে। সেগুলো আহরণ করে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে পারব- এটাই আমি আশা করি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাছে ভাতে বাঙালি, কাজেই এই মাছ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। যে সম্পদ আমাদের শুধু পুষ্টি জোগায় না, এই সম্পদ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করেও আমারা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। সেজন্য মৎস্য উৎপাদনে আমরা গবেষণা করে যাচ্ছি এবং অনেক সাফল্যও পেয়েছি। কিন্তু সমুদ্র সম্পদ আহরণে আমাদের এখনো অনেক কাজ করতে হবে এবং আমরা সেটা করব বলেই বিশ্বাস করি।”
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি যেমন ‘সফলভাবে’ বাস্তবায়ন করেছে, তেমনি এসডিজিও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
“করোনার কারণে এই অগ্রগতি কিছুটা বাধার সম্মুখীন হলেও অর্থনৈতিকভাবে আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করে এসডিজি-১৪ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।”
প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে ক্যাডেটদের কুচকাওয়াজ দেখেন। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেন, “আমি চাইব, তোমরা সবসময় সাহসের সাথে কাজ করবে এবং তোমাদের লব্ধ জ্ঞান এক্ষেত্রে আরো বেশি সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
“আমি আশা করি, আমাদের সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তোমাদের ভূমিকা থাকবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তোমরাই হবে আগামীর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের কর্ণধার।”
জাতির পিতার পরিকল্পনায় চট্টগ্রামমে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মেরিন ফিশারিজ একাডেমি’।
এ বছর একাডেমির ৪১তম ব্যাচে নটিক্যাল বিভাগে ৩৩ জন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩১ জন এবং মেরিন ফিশারিজ বিভাগে ২০ জন ক্যাডেটসহ মোট ৮৪ জন নারী ও পুরুষ ক্যাডেট তাদের কোর্স শেষ করলেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম কৃতি ক্যাডেটদের মাঝে পদক বিতরণ করেন। সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে ‘বেস্ট অলরাউন্ডার গোল্ড মেডাল’ পান ক্যাডেট এইচ এম বেনজীর আহমেদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ একাডেমি হতে প্রশিক্ষিত হয়ে তোমরা গভীর সমুদ্রের অকুতোভয় নাবিক হতে চলেছ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস-কঠোর অধ্যবসায়, কঠিন পরিশ্রম এবং প্রগাঢ় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত এই জ্ঞান তোমাদের ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
“তোমরা শিক্ষাঙ্গনের ক্ষুদ্র বলয় ছেড়ে পেশাগত জীবনের বৃহত্তর অঙ্গনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ। আমি আশা করি, সদা পরিবর্তনশীল এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ আধুনিক এ বিশ্বে টিকে থাকার জন্য ইতোমধ্যে তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান দ্বারা নিজেদেরকে তৈরি করে নিতে পারবে। কর্ম জীবনে উন্নতির প্রধান ভিত্তি হলো কঠোর পরিশ্রম, সময়ানুবর্তিতা, সততা, কর্মদক্ষতা, মূল্যবোধ এবং দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠা এবং দেশপ্রেম।” শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মেরিন ফিশারিজ একডেমির কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়।
বঙ্গোপসাগরের ‘বিশাল সম্পদ’ আহরণে জোর প্রধানমন্ত্রীর
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ