বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীরা সবসময়ই সন্তান, স্বামী ও সংসারের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন। তবে বঙ্গমাতা যেভাবে ঘরে-বাইরে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে সহযোগিতা করে সাহস ও শক্তি জুগিয়েছেন, আজকের নারীদের সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। ভোগ-বিলাসই জীবন নয়, দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা এবং ত্যাগের মাধ্যমে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাঝেও রয়েছে সার্থকতা।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য- আমার মা কখনোই এটা লাগবে, ওটা লাগবে বলেননি। এটা না হলে ঘর ছেড়ে চলে যাবো বলেও হুমকি দেননি। যখন যে অবস্থায় ছিলেন, মানিয়ে নিয়েছেন। স্বামীর পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন, ঘর সামলেছেন। কোনো কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াননি, বরং সাপোর্ট দিয়েছেন। এমনকি আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন। জীবনের পাশাপাশি মরণেও স্বামীর সঙ্গী হয়ে চলে গেছেন। মা বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে সাহস ও শক্তি জুগিয়েছিলেন বলেই আজকের এ সাফল্য, স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র গঠন সম্ভব হয়েছে। আমার দেশের নারীসমাজ যেন আমার মায়ের আদর্শ ধারণ করে চলে। চাওয়া-পাওয়া ও বিলাসিতাই জীবন নয়, ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করাই জীবনের পরম সার্থকতা।
এ বিষয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, মায়েরা সবসময় স্বামী-সন্তানদের ও সংসারের জন্য সেক্রিফাইস করেন। তবে বঙ্গমাতা যেভাবে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, যেভাবে জাতির পিতার লড়াই-সংগ্রামে সবসময় পাশে থেকেছেন, আর্থিক সংস্থান করেছেন এবং একই সঙ্গে ছেলে-মেয়ে ও সংসারে সময় দিয়েছেন, সেটা বিরল। বঙ্গবন্ধু কখনো দুই মাসের বেশি সময় জেলের বাইরে থাকতে পারেননি। ফলে পরিবারের পুরো দেখভাল বঙ্গমাতাকেই করতে হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দল পরিচালনায়ও ভূমিকা রেখেছেন। এ থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে, একজন স্ত্রী স্বামীকে সব দিক থেকে সহযোগিতা করে এগিয়ে নিতে পারেন। বঙ্গবন্ধু তো নিজেই বলেছিলেন- স্ত্রী পাশে ছিলেন বলেই তিনি বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা বা একটি জাতিরাষ্ট্রের গঠন করতে পেরেছেন।
আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, ঘরণী হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গমাতা দেশের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সবাইকেই তা থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার। আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী। এ বিশাল অংশকে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। বঙ্গমাতা যেমন ঘরে-বাইরে কাজ করতেন, উৎসাহ জোগাতেন, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে রাজনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতেন, প্রত্যেক নারীর তার সেই নীতি-আদর্শ অনুসরণ করা উচিত।
দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, বঙ্গমাতা একজন আদর্শ নারী। যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে যে সাহস ও শক্তি, সবকিছুর পেছনে ছিলেন বঙ্গমাতা। বাংলাদেশের কেন, সমগ্র বিশ্বের নারীদের কাছে তিনি একজন আদর্শ নারীর উদাহরণ। সবসময় স্বামীর পাশে থেকে দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা এবং ত্যাগের যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করে গেছেন, তা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী, বাঙালির লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনের নেপথ্যের প্রেরণাদাত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট ফরিদপুরের তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল রেণু। বাবার নাম শেখ জহুরুল হক ও মা হোসনে আরা বেগম। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আপসহীন লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে শুধু বাঙালি জাতির পিতাই হননি, বিশ্ব বরেণ্য রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছিলেন। এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তারই সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
বঙ্গমাতার জীবন: কেমন হওয়া উচিত মায়েদের জীবনাচার
জনপ্রিয় সংবাদ