ঢাকা ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুল বানানের ছড়াছড়ি

  • আপডেট সময় : ০১:২৫:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৬৪ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, অফিস আদেশ ও বিভিন্ন চিঠিতে বানানের বেহাল দশা তৈরি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর নামই ভুল লেখা হয়েছে একাধিক স্থানে।
অধিকাংশ বিজ্ঞপ্তি, অফিস আদেশ, চিঠিসহ বিভিন্ন স্থানে “ভুল বাংলা বানান’ লেখা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, গত ৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিজ্ঞপ্তি, অফিস আদেশ ও চিঠিতে ভুল বাংলা বানান দেখা গেছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রায় ১০০ নোটিশের অধিকাংশেও বানান ভুল ছিল।
গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৫টির বেশি ভুল বানান ছিল। এ ক্ষেত্রে শুধু বাংলা নয়, ইংরেজি বানান ভুলেরও নজির রয়েছে।
গত বছরের ২৫ নভেম্বর প্রকাশিত বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী অধ্যাপক বানান লেখা হয়েছে ‘সহকারি’, মার্কশিট লেখা হয়েছে ‘মার্কশীট’, প্রমাণপত্র বানান লেখা হয়েছে ‘প্রমানপত্র’, ডিগ্রির জায়গায় ‘ডিগ্রী’ এবং চাকরি বানান লেখা হয়েছে ‘চাকুরী’।
একই বছরের ১২ ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বানান লেখা হয়েছে ‘শেখ মুজিবুর রহমারন’। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিটিতে রয়েছে আরও অসংখ্য ভুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ইংরেজিতে লেখা বঙ্গবন্ধুর নামের বানানও ভুল লেখা হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে- বাকি বানান লেখা হয়েছে ‘বাকী’, শ্রেণিকে ‘শ্রেণী’ ও গৃহীতকে ‘গৃহিত’ লেখা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সজিবুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেককিছু অনুসরণ করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা বানানের ভুল প্রয়োগ করে। এটি কাম্য নয়।”
এ থেকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেরিয়ে আসতে না পারে তাহলে তাহলে দেশের ক্ষতি হবে বলে মনে করেন এ শিক্ষার্থী।
পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (ইএসডি) বিভাগের শিক্ষার্থী শফিউল কায়েস বলেন, “সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী একজন শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী যখন ভুল বানান ব্যবহার করেন তখন অন্যরাও ভুল শিক্ষা পায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে যে মন্তব্য করেন তাতে অসংখ্য ভুল বানান থাকে। সেটি নিজ দায়িত্বে আমাদের সংশোধন করা উচিত। সঠিক বানান জানা গুরুত্বপূর্ণ।”
বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তার বলেন, “বাঙালি হিসেবে নিজেদের ভাষা এবং শব্দের উপরে আমাদের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় একাডেমিক পরিধিভুক্ত বানানের ব্যাপারে সচেতন হতে পারি। কিন্তু প্রশাসনিক বিষয়ে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না। তবুও যখন ভুল চোখে পড়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের জানানোর চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে সচেতনতার বিকল্প কিছু নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মো. রাজিউর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখন কোনো বিজ্ঞপ্তি বা অফিস আদেশ দেওয়া হয় তখন তা সর্বসাধারণের জন্য থাকে। এক্ষেত্রে যারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন, বানানের বিষয়ে তাদের সচেতন হওয়া দরকার।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. মোরাদ হোসেন জানালেন, বিষয়টি তাদের নজরে এসছে। অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে কিছু ভুল নজর এড়িয়ে যায়। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ভুল তো ভুলই, ভুলের কোনো মাশুল নেই। ভুল না করে প্রয়োজনে দেখে দেখে সঠিক বানান লেখা উচিত। অনেক সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় বানান ভুল করে পরে আবার ক্ষমা চায়। এগুলো দুঃখজনক। “তাছাড়া বাংলা একাডেমি বানান সংশোধন করলেও অনেকে পুরানো নিয়ম অনুসরণ করেন। এক্ষেত্রে সর্বশেষ তথ্য নিয়ে বানান লেখা উচিত।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুল বানানের ছড়াছড়ি

আপডেট সময় : ০১:২৫:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, অফিস আদেশ ও বিভিন্ন চিঠিতে বানানের বেহাল দশা তৈরি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর নামই ভুল লেখা হয়েছে একাধিক স্থানে।
অধিকাংশ বিজ্ঞপ্তি, অফিস আদেশ, চিঠিসহ বিভিন্ন স্থানে “ভুল বাংলা বানান’ লেখা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, গত ৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিজ্ঞপ্তি, অফিস আদেশ ও চিঠিতে ভুল বাংলা বানান দেখা গেছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রায় ১০০ নোটিশের অধিকাংশেও বানান ভুল ছিল।
গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৫টির বেশি ভুল বানান ছিল। এ ক্ষেত্রে শুধু বাংলা নয়, ইংরেজি বানান ভুলেরও নজির রয়েছে।
গত বছরের ২৫ নভেম্বর প্রকাশিত বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী অধ্যাপক বানান লেখা হয়েছে ‘সহকারি’, মার্কশিট লেখা হয়েছে ‘মার্কশীট’, প্রমাণপত্র বানান লেখা হয়েছে ‘প্রমানপত্র’, ডিগ্রির জায়গায় ‘ডিগ্রী’ এবং চাকরি বানান লেখা হয়েছে ‘চাকুরী’।
একই বছরের ১২ ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বানান লেখা হয়েছে ‘শেখ মুজিবুর রহমারন’। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিটিতে রয়েছে আরও অসংখ্য ভুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ইংরেজিতে লেখা বঙ্গবন্ধুর নামের বানানও ভুল লেখা হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে- বাকি বানান লেখা হয়েছে ‘বাকী’, শ্রেণিকে ‘শ্রেণী’ ও গৃহীতকে ‘গৃহিত’ লেখা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সজিবুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেককিছু অনুসরণ করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা বানানের ভুল প্রয়োগ করে। এটি কাম্য নয়।”
এ থেকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেরিয়ে আসতে না পারে তাহলে তাহলে দেশের ক্ষতি হবে বলে মনে করেন এ শিক্ষার্থী।
পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (ইএসডি) বিভাগের শিক্ষার্থী শফিউল কায়েস বলেন, “সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী একজন শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী যখন ভুল বানান ব্যবহার করেন তখন অন্যরাও ভুল শিক্ষা পায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে যে মন্তব্য করেন তাতে অসংখ্য ভুল বানান থাকে। সেটি নিজ দায়িত্বে আমাদের সংশোধন করা উচিত। সঠিক বানান জানা গুরুত্বপূর্ণ।”
বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তার বলেন, “বাঙালি হিসেবে নিজেদের ভাষা এবং শব্দের উপরে আমাদের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় একাডেমিক পরিধিভুক্ত বানানের ব্যাপারে সচেতন হতে পারি। কিন্তু প্রশাসনিক বিষয়ে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না। তবুও যখন ভুল চোখে পড়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের জানানোর চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে সচেতনতার বিকল্প কিছু নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মো. রাজিউর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখন কোনো বিজ্ঞপ্তি বা অফিস আদেশ দেওয়া হয় তখন তা সর্বসাধারণের জন্য থাকে। এক্ষেত্রে যারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন, বানানের বিষয়ে তাদের সচেতন হওয়া দরকার।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. মোরাদ হোসেন জানালেন, বিষয়টি তাদের নজরে এসছে। অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে কিছু ভুল নজর এড়িয়ে যায়। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ভুল তো ভুলই, ভুলের কোনো মাশুল নেই। ভুল না করে প্রয়োজনে দেখে দেখে সঠিক বানান লেখা উচিত। অনেক সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় বানান ভুল করে পরে আবার ক্ষমা চায়। এগুলো দুঃখজনক। “তাছাড়া বাংলা একাডেমি বানান সংশোধন করলেও অনেকে পুরানো নিয়ম অনুসরণ করেন। এক্ষেত্রে সর্বশেষ তথ্য নিয়ে বানান লেখা উচিত।”