নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য নিয়েই কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সোমবার ‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে তিনি যুক্ত হন। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা বন্দি করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি আটক হওয়ার আগেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। এরপর বিশ্ব জনমতের চাপে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিলে তিনি ১০ জানুয়ারি মুক্ত স্বদেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধুর ভাষণটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “এই ভাষণটা ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা।
“এই ভাষণটা ছিল স্বাধীন রাষ্ট্র কাঠামো কী রকম হবে, স্বাধীন রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, স্বাধীন রাষ্ট্র কীভাবে কোন আদর্শে চলবে, সেই আদর্শই তিনি এই ভাষণে দিয়েছিলেন। একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা জাতির পিতার সেই ভাষণে ছিল।”
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ যে বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা বঙ্গবন্ধু সেদিন দিয়েছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। “আমাদের এটাই আজকে লক্ষ্য, যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলা। আজকের দিনে সেই প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।”
পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দি থাকা অবস্থায় যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, তখনও যে তিনি নির্ভয় ছিলেন, সে কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
“তিনি ভাষণে এটাও বলেছিলেন, যখন তাকে ফাঁসি দেওয়ার নির্দেশ হয়, একটি দাবি তিনি শুধু করেছিলেন যে আমাকে তোমরা মেরে ফেলতে পার, কিন্তু আমার লাশটা আমার বাঙালির কাছে পৌঁছে দিও। আমার বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও। পাকিস্তানি কারাগারে তার উপর নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছিল, যা কেউ কখনও জানতে পারেনি। জাতির পিতা মৃত্যুকে কখনও ভয় করেননি, জয় করেছিলেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি (বঙ্গবন্ধু) প্রিয় স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন। ফিরে আসাটা আমাদের জন্য যে কত প্রয়োজনীয় ছিল.. কারণ এই বাংলাদেশ তিনি স্বাধীন করেছিলেন, তার যেই স্বপ্ন বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবেন।”
সেই স্বপ্ন পূরণে যে যাত্রা বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সেই অগ্রযাত্রাই ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
“এই আঘাতটা শুধু একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা না।এই আঘাতটা ছিল একটা স্বাধীন দেশের আদর্শকে হত্যা করা, চেতনাকে হত্যা করা।”
“সেটাই আপনারা দেখতে পাবেন ১৫ই আগস্টের পর থেকে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা এভাবেই রাষ্ট্রটা চালিয়েছিল। সেখানে ১৫ই অগাস্টের খুনি, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী, তারাই ক্ষমতায় বসেছিল। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কোনো চেষ্টা তারা করেনি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটাই, যে আদর্শের জন্য তিনি দেশ স্বাধীন করেছেন, যে লক্ষ্য নিয়ে তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম অত্যাচার বারবার সহ্য করেছেন, নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, যেই মানুষগুলোর জন্য সেই মানুষগুলোর ভাগ্য গড়া এটাই আমাদের লক্ষ্য।”
আওয়ামী লীগের উপর আস্থা রাখায় দেশের জনগণের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ টেলিভিশনের শহীদ মনিরুল আলম মিলনায়তন প্রান্তে থেকে এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণেই পথ চলছি: শেখ হাসিনা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

























