ঢাকা ০৬:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

বঙ্গবন্ধুর ডাকে রাজপথে নামা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি

  • আপডেট সময় : ০২:০৩:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : বাঙালির মুক্তির সনদ ছয়দফা নিয়ে ১৯৬৬ সালে যখন আলোচনা তুঙ্গে, পাবনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সেসময়ই প্রথম দেখা; আলাপের শেষে সদ্য এসএসসি পাশ তরুণ সাহাবুদ্দিনকে ‘তুই’ সম্বোধন করে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘মাঠে আয়’, সেই থেকে শুরু।
পরের ছয় দশকে ছাত্ররাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, আইন পেশা, বিচারকের দায়িত্ব, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সামলানোর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের পর বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) তার জন্ম। ছোটবেলা কেটেছে পাবনা শহরেই। শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন চতুর্থ শ্রেণিতে। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাসের পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হয়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে।
এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি পান।
ছাত্রলীগ, মুক্তিযুদ্ধ, কারাবরণ: কলেজ জীবনে প্রবেশের আগেই ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাবনায় তার সাক্ষাতের কথা এক লেখায় তুলে ধরেছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত পাতায় প্রকাশিত সেই লেখায় ওই দিনের ঘটনা বর্ণনায় তিনি লিখেছিলেন, “ছয় দফার প্রচারণা চালাতে (টাউন হলে জনসভার মাধ্যমে) এদিন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব বগা মিয়ার বাসায় এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেখানেই প্রথম দেখা। ভাতিজা সুবাদে বঙ্গবন্ধু ও তার সহকর্মী আমাদের প্রিয় চাচা জনাব এম মনসুর আলী, এম এইচ কামারুজ্জামানসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বগা চাচা।
“সেই পরিচয়েই বঙ্গবন্ধুর স্বভাবসুলভ আদরের ‘তুই’ সম্বোধন। সবশেষ বলেছিলেন- ‘মাঠে (সভাস্থল) আয়।’ সদ্য এসএসসি পাস করেছি, পরিচয়ে তখনও কলেজের তকমা পাইনি। রাজনীতির কতটুকুই বা বুঝি? কিন্তু ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি র্দীঘদেহী এই মানুষটির স্নেহমাখা ‘মাঠে আয়’ স্বরে কী যে লুকিয়ে ছিল! তা আজও ভুলতে পারি না।”
ছাত্রলীগের যুক্ত হওয়ার পর এডওয়ার্ড কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থেকে ছয় বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের পদে থাকা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ছাত্রলীগের সক্রিয় কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে আসেন।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন।
১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের পর সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। শুরুর দিকে পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি। বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এরমধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও তিনি ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক সাহাবুদ্দিন। বিচারক জীবনের ইতি টানার পর আবারও তিনি আইন পেশায় ফেরেন। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থাকার মধ্যে সরকার তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব দেয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।
সাংবাদিকতা ও অন্যান্য: ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর উপর হামলা হয়। সে সময়ের ‘হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের’ মতো ঘটনার পরবর্তীতে সরকার ক্ষমতায় গিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে আওয়ামী লীগ। ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে সাংবাদিকতা পেশাতেও যুক্ত ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। বিচার বিভাগে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৮০ থেকে দুই বছর দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতা করেন তিনি। পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরিতেও তিনি সদস্য ছিলেন।
রাজনীতি, বঙ্গবন্ধু এবং নীতি নির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নিয়মিত কলামও লিখতেন। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু জেএমসি বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি হিসাবে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। এ ব্যাংকের অডিট কমিটিরও সদস্য তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এক ছেলের বাবা। তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা যুগ্ম সচিব ছিলেন। তিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগে অধ্যাপনার পাশাপাশি ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
কেন রাষ্ট্রপতি পদে আ.লীগের পছন্দ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে?বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আপসহীন, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এবং অতীত কর্মজীবনে নিষ্ঠা-সততা- দক্ষতার কারণে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সম্মুখসারির এই যোদ্ধাকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। আইন বিষয়ে দক্ষ চুপ্পু দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন দলটির নেতারা। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের দেওয়া সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের আলোকে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেরা ব্যক্তিকেই বেছে নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান এমপি এবং আবদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে একটি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, তারা নির্বাচন কমিশনে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন। এছাড়া রোববার সকালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনেও উপস্থিত ছিলেন তারা।
সাবেক সরকারি কর্মকর্তা চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কেন পছন্দ করা হয়েছে এমনটি জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তিনি যুবক বয়সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
চুপ্পুর রাজনৈতিক জীবনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের আগেই তিনি দেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের পরেও তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। যার কারণে পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর তাকে তিন বছর কারাবরণ করতে হয়। অনেক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হন তিনি।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু খুবই মেধাবী উল্লেখ করে ফারুক খান বলেন, জেল থেকে বের হয়ে তিনি লেখাপড়া শেষ করে যোগ্যতার স্বাক্ষর থেকে বিসিএস জুডিসিয়াল সার্ভিসে যুক্ত হন। কর্মজীবনে তিনি সততা, দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবেও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠা ও সম্মান নিয়ে। পরবর্তীতে তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদেরও সদস্য করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ১৯৯৮ সালে আমার নেতৃত্বে একটি টিম কয়েকটি দেশের সংসদের কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য পাঠানো হয়। ওই টিমে তিনিও (চুপ্পু) সদস্য ছিলেন। আমরা ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট পরিদর্শন করি। তখন থেকে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। ওই সফরে আমি তার দক্ষতার প্রমাণ পেয়েছি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে একজন অমায়িক, ভদ্র ও মার্জিত মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি বেস্ট চয়েজ। তিনি একজন ভালো রাষ্ট্রপতি হবেন। ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবী ও সাবেক জজ হওয়ায় আইনগত বিষয়ে তিনি দক্ষতার সাক্ষর রাখবেন। দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি অনুগত্য, দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত দক্ষতা ও অতীতের কর্মময় জীবনের কারণেই তাকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি এটা বেস্ট চয়েজ।
সভাপতিম-লির সদস্য আবদুর রহমান মনে করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আপসহীন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সম্মুখসারির যোদ্ধা, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাসের কারণেই সবার মতামতের ভিত্তিতে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দিয়েছেন।
তিনি বলেন, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে জেলা ছাত্রনেতা। জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ৭৫ পরবর্তী সময়ে তিনি তিন বছর কারাভোগ করেছেন। কর্মজীবনে বিভিন্ন সময়ে যেসব দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন তা তিনি সততা, নিষ্ঠা ও যোগ্যতার সঙ্গে পালন করেছেন। তিনি একজন সজ্জন। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আমাদের দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সবার মতামত নিয়ে তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বঙ্গবন্ধুর ডাকে রাজপথে নামা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি

আপডেট সময় : ০২:০৩:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : বাঙালির মুক্তির সনদ ছয়দফা নিয়ে ১৯৬৬ সালে যখন আলোচনা তুঙ্গে, পাবনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সেসময়ই প্রথম দেখা; আলাপের শেষে সদ্য এসএসসি পাশ তরুণ সাহাবুদ্দিনকে ‘তুই’ সম্বোধন করে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘মাঠে আয়’, সেই থেকে শুরু।
পরের ছয় দশকে ছাত্ররাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, আইন পেশা, বিচারকের দায়িত্ব, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সামলানোর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের পর বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) তার জন্ম। ছোটবেলা কেটেছে পাবনা শহরেই। শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন চতুর্থ শ্রেণিতে। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাসের পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হয়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে।
এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি পান।
ছাত্রলীগ, মুক্তিযুদ্ধ, কারাবরণ: কলেজ জীবনে প্রবেশের আগেই ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাবনায় তার সাক্ষাতের কথা এক লেখায় তুলে ধরেছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত পাতায় প্রকাশিত সেই লেখায় ওই দিনের ঘটনা বর্ণনায় তিনি লিখেছিলেন, “ছয় দফার প্রচারণা চালাতে (টাউন হলে জনসভার মাধ্যমে) এদিন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব বগা মিয়ার বাসায় এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেখানেই প্রথম দেখা। ভাতিজা সুবাদে বঙ্গবন্ধু ও তার সহকর্মী আমাদের প্রিয় চাচা জনাব এম মনসুর আলী, এম এইচ কামারুজ্জামানসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বগা চাচা।
“সেই পরিচয়েই বঙ্গবন্ধুর স্বভাবসুলভ আদরের ‘তুই’ সম্বোধন। সবশেষ বলেছিলেন- ‘মাঠে (সভাস্থল) আয়।’ সদ্য এসএসসি পাস করেছি, পরিচয়ে তখনও কলেজের তকমা পাইনি। রাজনীতির কতটুকুই বা বুঝি? কিন্তু ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি র্দীঘদেহী এই মানুষটির স্নেহমাখা ‘মাঠে আয়’ স্বরে কী যে লুকিয়ে ছিল! তা আজও ভুলতে পারি না।”
ছাত্রলীগের যুক্ত হওয়ার পর এডওয়ার্ড কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থেকে ছয় বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের পদে থাকা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ছাত্রলীগের সক্রিয় কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে আসেন।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন।
১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের পর সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। শুরুর দিকে পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি। বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এরমধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও তিনি ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক সাহাবুদ্দিন। বিচারক জীবনের ইতি টানার পর আবারও তিনি আইন পেশায় ফেরেন। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থাকার মধ্যে সরকার তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব দেয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।
সাংবাদিকতা ও অন্যান্য: ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর উপর হামলা হয়। সে সময়ের ‘হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের’ মতো ঘটনার পরবর্তীতে সরকার ক্ষমতায় গিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে আওয়ামী লীগ। ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে সাংবাদিকতা পেশাতেও যুক্ত ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। বিচার বিভাগে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৮০ থেকে দুই বছর দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতা করেন তিনি। পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরিতেও তিনি সদস্য ছিলেন।
রাজনীতি, বঙ্গবন্ধু এবং নীতি নির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নিয়মিত কলামও লিখতেন। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু জেএমসি বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি হিসাবে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। এ ব্যাংকের অডিট কমিটিরও সদস্য তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এক ছেলের বাবা। তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা যুগ্ম সচিব ছিলেন। তিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগে অধ্যাপনার পাশাপাশি ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
কেন রাষ্ট্রপতি পদে আ.লীগের পছন্দ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে?বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আপসহীন, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এবং অতীত কর্মজীবনে নিষ্ঠা-সততা- দক্ষতার কারণে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সম্মুখসারির এই যোদ্ধাকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। আইন বিষয়ে দক্ষ চুপ্পু দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন দলটির নেতারা। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের দেওয়া সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের আলোকে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেরা ব্যক্তিকেই বেছে নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান এমপি এবং আবদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে একটি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, তারা নির্বাচন কমিশনে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন। এছাড়া রোববার সকালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনেও উপস্থিত ছিলেন তারা।
সাবেক সরকারি কর্মকর্তা চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কেন পছন্দ করা হয়েছে এমনটি জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তিনি যুবক বয়সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
চুপ্পুর রাজনৈতিক জীবনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের আগেই তিনি দেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের পরেও তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। যার কারণে পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর তাকে তিন বছর কারাবরণ করতে হয়। অনেক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হন তিনি।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু খুবই মেধাবী উল্লেখ করে ফারুক খান বলেন, জেল থেকে বের হয়ে তিনি লেখাপড়া শেষ করে যোগ্যতার স্বাক্ষর থেকে বিসিএস জুডিসিয়াল সার্ভিসে যুক্ত হন। কর্মজীবনে তিনি সততা, দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবেও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠা ও সম্মান নিয়ে। পরবর্তীতে তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদেরও সদস্য করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ১৯৯৮ সালে আমার নেতৃত্বে একটি টিম কয়েকটি দেশের সংসদের কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য পাঠানো হয়। ওই টিমে তিনিও (চুপ্পু) সদস্য ছিলেন। আমরা ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট পরিদর্শন করি। তখন থেকে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। ওই সফরে আমি তার দক্ষতার প্রমাণ পেয়েছি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে একজন অমায়িক, ভদ্র ও মার্জিত মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি বেস্ট চয়েজ। তিনি একজন ভালো রাষ্ট্রপতি হবেন। ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবী ও সাবেক জজ হওয়ায় আইনগত বিষয়ে তিনি দক্ষতার সাক্ষর রাখবেন। দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি অনুগত্য, দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত দক্ষতা ও অতীতের কর্মময় জীবনের কারণেই তাকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি এটা বেস্ট চয়েজ।
সভাপতিম-লির সদস্য আবদুর রহমান মনে করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আপসহীন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সম্মুখসারির যোদ্ধা, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাসের কারণেই সবার মতামতের ভিত্তিতে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দিয়েছেন।
তিনি বলেন, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে জেলা ছাত্রনেতা। জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ৭৫ পরবর্তী সময়ে তিনি তিন বছর কারাভোগ করেছেন। কর্মজীবনে বিভিন্ন সময়ে যেসব দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন তা তিনি সততা, নিষ্ঠা ও যোগ্যতার সঙ্গে পালন করেছেন। তিনি একজন সজ্জন। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আমাদের দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সবার মতামত নিয়ে তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন।