ঢাকা ০৪:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বঙ্গবন্ধুর খুনির মেয়েকে নিয়োগ দিলো কারা?

  • আপডেট সময় : ১০:২৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জুন ২০২২
  • ১১০ বার পড়া হয়েছে

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) : গুলশান ক্লাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনির মেয়েকে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় আমি বিস্মিত এবং শঙ্কিতও বটে। কারণ আর সব নিয়োগের মতো এটি স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। এর পেছনে কারা আছেন? কী উদ্দেশ্য তাদের? কেন জেনেশুনে বঙ্গবন্ধুর খুনির পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ঘটনাটি গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।
এখন যদি কেউ বলেন এটা তারা জানতেন না, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এসব কথা অগ্রহণযোগ্য। কারণ কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আগে তার জীবনবৃত্তান্ত নেওয়া হয়। তার বাবা ও মায়ের নাম, ঠিকানা সবই সেখানে থাকে। তারা কি সেগুলো দেখেননি? কারা এই নিয়োগ দিল? তাদের উদ্দেশ্য কী, এটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ তারা জেনেশুনেই এই খুনিদের পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, সাতচল্লিশের ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িক চেতনায় এখনো আবদ্ধ হয়ে আছেন একশ্রেণির মানুষ। সেই চেতনাধারীদের দ্বারাই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হয়েছেন। এই পাকিস্তানপন্থী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনাধারীরা সমাজে, রাষ্ট্রে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। ব্যবসা, বাণিজ্য, মিডিয়ায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিপুল বিত্ত-বৈভবেরও মালিক হয়েছে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো স্বাধীনতার যে চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যেন কোনোভাবেই বাস্তবায়িত হতে না পারে।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করে উৎসাহ দিয়েছে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করে তাদের অপকর্মের স্বীকৃতি দিয়েছে। যাতে আরও মানুষ এভাবে উৎসাহিত হয়। যখন কিছু একটা করে মানুষ পুরস্কৃত হয় তখন আরও মানুষ উৎসাহিত হয়।
স্বাধীনতাবিরোধী ও বঙ্গবন্ধু আদর্শকে বিলীন করার চেতনাধারীরা আমাদের রাষ্ট্রের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তারা খুনি বা তাদের পরিবারকে উৎসাহিত করছেন, পুরস্কৃত করছেন যাতে সমাজে নতুন প্রজন্মের মধ্যে এ ধরনের চেতনা ছড়িয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় গুলশান ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর একজন স্বঘোষিত খুনি কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদের মেয়ে খন্দকার মেহনাজ রশিদকে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
যারা এ কাজ করেছেন তারা খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। তাদেরও জবাবদিহিতা এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ এটাও কিন্তু খুনের সমতুল্য কাজ হয়েছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের মিডিয়ায় যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রতি সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা তৈরির জন্য কাজ করেছে, তাদের কর্তা ব্যক্তিরাও স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। এই সরকারের সময়ই পেয়েছেন। ২০০৯ সালের শেষদিকে যখন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের রায় হচ্ছে তখন তথাকথিত মিডিয়া কর্নেল (অব.) রশিদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। সহানুভূতি তৈরিতে কাজ করেছে। তারা পুরস্কৃত হয়েছে। যেখানে মানুষ দেখে যে এসব করে আমরা পুরস্কৃত হচ্ছি, মানুষ তো সেদিকেই ঝুকবে? গুলশান ক্লাবে মেহনাজ রশিদকে যারা নিয়োগ দিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। তাদের উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, বাংলাদেশকে পাকিস্তানী রাষ্ট্র বানাতে হবে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভুলে যেতে হবে, সাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই চক্রের বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই উদ্দেশ্য থেকে যে যেভাবে পারছে যার যার জায়গা থেকে কাজটি করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে যেন স্বাধীনতাবিরোধীরা এ ধরনের কাজ করতে না পারে, সে জন্য গুলশান ক্লাবের ঘটনাটিকে হালকাভাবে না নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বঙ্গবন্ধুর খুনির মেয়েকে নিয়োগ দিলো কারা?

আপডেট সময় : ১০:২৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জুন ২০২২

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) : গুলশান ক্লাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনির মেয়েকে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় আমি বিস্মিত এবং শঙ্কিতও বটে। কারণ আর সব নিয়োগের মতো এটি স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। এর পেছনে কারা আছেন? কী উদ্দেশ্য তাদের? কেন জেনেশুনে বঙ্গবন্ধুর খুনির পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ঘটনাটি গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।
এখন যদি কেউ বলেন এটা তারা জানতেন না, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এসব কথা অগ্রহণযোগ্য। কারণ কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আগে তার জীবনবৃত্তান্ত নেওয়া হয়। তার বাবা ও মায়ের নাম, ঠিকানা সবই সেখানে থাকে। তারা কি সেগুলো দেখেননি? কারা এই নিয়োগ দিল? তাদের উদ্দেশ্য কী, এটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ তারা জেনেশুনেই এই খুনিদের পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, সাতচল্লিশের ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িক চেতনায় এখনো আবদ্ধ হয়ে আছেন একশ্রেণির মানুষ। সেই চেতনাধারীদের দ্বারাই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হয়েছেন। এই পাকিস্তানপন্থী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনাধারীরা সমাজে, রাষ্ট্রে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। ব্যবসা, বাণিজ্য, মিডিয়ায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিপুল বিত্ত-বৈভবেরও মালিক হয়েছে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো স্বাধীনতার যে চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যেন কোনোভাবেই বাস্তবায়িত হতে না পারে।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করে উৎসাহ দিয়েছে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করে তাদের অপকর্মের স্বীকৃতি দিয়েছে। যাতে আরও মানুষ এভাবে উৎসাহিত হয়। যখন কিছু একটা করে মানুষ পুরস্কৃত হয় তখন আরও মানুষ উৎসাহিত হয়।
স্বাধীনতাবিরোধী ও বঙ্গবন্ধু আদর্শকে বিলীন করার চেতনাধারীরা আমাদের রাষ্ট্রের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তারা খুনি বা তাদের পরিবারকে উৎসাহিত করছেন, পুরস্কৃত করছেন যাতে সমাজে নতুন প্রজন্মের মধ্যে এ ধরনের চেতনা ছড়িয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় গুলশান ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর একজন স্বঘোষিত খুনি কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদের মেয়ে খন্দকার মেহনাজ রশিদকে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
যারা এ কাজ করেছেন তারা খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। তাদেরও জবাবদিহিতা এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ এটাও কিন্তু খুনের সমতুল্য কাজ হয়েছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের মিডিয়ায় যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রতি সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা তৈরির জন্য কাজ করেছে, তাদের কর্তা ব্যক্তিরাও স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। এই সরকারের সময়ই পেয়েছেন। ২০০৯ সালের শেষদিকে যখন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের রায় হচ্ছে তখন তথাকথিত মিডিয়া কর্নেল (অব.) রশিদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। সহানুভূতি তৈরিতে কাজ করেছে। তারা পুরস্কৃত হয়েছে। যেখানে মানুষ দেখে যে এসব করে আমরা পুরস্কৃত হচ্ছি, মানুষ তো সেদিকেই ঝুকবে? গুলশান ক্লাবে মেহনাজ রশিদকে যারা নিয়োগ দিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। তাদের উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, বাংলাদেশকে পাকিস্তানী রাষ্ট্র বানাতে হবে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভুলে যেতে হবে, সাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই চক্রের বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই উদ্দেশ্য থেকে যে যেভাবে পারছে যার যার জায়গা থেকে কাজটি করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে যেন স্বাধীনতাবিরোধীরা এ ধরনের কাজ করতে না পারে, সে জন্য গুলশান ক্লাবের ঘটনাটিকে হালকাভাবে না নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক