আজাদুর রহমান, বগুড়া: বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় ঘুষ-দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। এতে অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ উত্তোলনের নামে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন শাজাহানপুর উপজেলার রহিমাবাদ দক্ষিণপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী জমির মালিক ফাতেমা বিবির স্বামী ফুল মাহমুদ।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন, শাজাহানপুর উপজেলার রহিমাবাদ দক্ষিণপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী জমির মালিকের পক্ষে তার স্বামী ফুল মাহমুদ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে তিনি জানান, তার স্ত্রী ফাতেমা বিবির নামে নিবন্ধিত ও দখলীয় জমি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হয়। ওই জমির ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় এলএ শাখার সার্ভেয়ার ফিরোজ আহমেদ প্রথমে মাঠপর্যায়ে তদন্তে গিয়ে ফাতেমা বিবির মালিকানা ও দখল নিশ্চিত করেন। পরে ফুল মাহমুদকে অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়ে ক্ষতিপূরণের অর্থ ছাড়ের জন্য ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।
ফুল মাহমুদ আরো জানান, ৫২২ নং প্রসেস এর একটি নোটিশ যার মিস কেস নং ৩৫৫/২০২১, এল এ কেস নং ০৬/সাসেক/২০১৯ এর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কানুনগো ফজলুর রহমান ও সার্ভেয়ার আব্দুল খালেক এবং সার্ভেয়ার শফিকুল ইসলামকে বলা হলেও, সরেজমিনে সার্ভেয়ার ফিরোজ তদন্ত করতে আসেন। এবং পরবর্তীতে সার্ভেয়ার ফিরোজ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখায় উপস্থিত হতে বলেন। সেখানে গেলে তিনি স্বয়ং উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ ঘুষ দাবি করেন। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ফিরোজ আহমেদ বিভিন্ন অজুহাত তৈরি করে জমিতে অংশীদার জাহির করতে শুরু করেন। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে জমির মালিকানা প্রমাণ হওয়ার পরও প্রশাসনিকভাবে দুর্নীতিবাজ মহল প্রভাব খাটিয়ে হয়রানি করছে। ফুল মাহমুদ ও ফাতেমা বিবি এ ব্যাপারে প্রশাসনের শীর্ষপর্যায়ের নজরদারি, স্বচ্ছ তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান। তারা বলেন, আমরা আশা করি জেলা প্রশাসক অফিসের সৎ কর্মকর্তারা এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, নয়তো সাধারণ মানুষ সরকারের উন্নয়নকে অভিশাপ মনে করবে।
সংবাদ সম্মেলনের পর বাস্তব চিত্র অনুসন্ধানে জানা যায়, এলএ শাখার সার্ভেয়ার খালেক গড়ে তুলেছেন এক দালাল চক্র। তিনি আমিনুল সহ একাধিক দালালের মাধ্যমে এলএ শাখার বিভিন্ন মামলায় ঘুষ বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। আর এই দালাল চক্রের হাত দিয়ে ভুক্তভোগী জমি মালিক গণের নিকট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।
তদন্তে উঠে এসেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার এক জমি মালিকের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকার বিপরীতে ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি এবং পরবর্তীতে দালাল আমিনুলের মাধ্যমে সেই টাকা আদায় করে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে। এমনকি শেরপুর উপজেলার একটি অধিগ্রহণ ফাইলে দুই পক্ষের চলমান মামলা থাকা সত্ত্বেও সার্ভেয়ার খালেক ওই ফাইল পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য এক পক্ষের নিকট নগদ চার লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। এই টাকা ১ লাখ পঞ্চাশ হাজার ও দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা করে দুই বারে নিজেই গ্রহণ করেন খালেক। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে এসব অভিযোগের তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
রিয়াজ/সানা/আপ্র/১১/১১/২০২৫
























