নিজস্ব প্রতিবেদক : তিনি কোন কেন্দ্রে কখন ভোট দেবেন, তা নিয়ে দিনভর আলোচনা চললো, সাংবাদিকরা অপেক্ষায় থাকলেন, শেষ পর্যন্ত ভোট শেষ হওয়ার ২০ মিনিট আগে সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান এলেন; বললেন, প্রথমবার ইভিএমে ভোট দিয়ে তার কতটা ভালো লেগেছে। একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, “প্রথমবার ইভিএমে ভোট দিয়ে কতটা আনন্দ পেলাম? আমার বউ যখন ‘কবুল’ বলেছিল, সেরকম আনন্দ হল ইভিএমে ভোট দিয়ে।”
শামীম ওসমান থাকেন শহরের জামতলায়, তাই তিনি নারায়ণগঞ্জ আদর্শ স্কুলের ভোটার। তবে এর আগে তিনি এনায়েতনগর এলাকায় ভোট দিয়েছেন। ফলে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। সাংবাদিকরা নারায়ণগঞ্জের ডিসি মোস্তাইন বিল্লাহর কাছে জানতে চাইলেন, শামীম ওসমান কোন এলাকার ভোটার? কিন্তু তিনিও সদুত্তর দিতে পারেননি। আগেরই শোনা গিয়েছিল শামীম ওসমান ভোট দেবেন দুপুরের পর। সাংবাদিকরা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু কোন কেন্দ্রে তিনি যাচ্ছেন, সেটাই বোঝা যাচ্ছিল না।
সব জল্পনাকল্পনা শেষে বিকাল ৩টা ২৯মিনিটে রিকশায় চড়ে আদর্শ স্কুল কেন্দ্রেই উপস্থিত হন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের এই সদস্য। এসেই বলেন, “ঠিক সময়ে এসেছি, আগে ভোট দিয়ে আসি।” ভোটার পরিচয় যাচাইয়ের পর গোপন কক্ষে গিয়ে বেশ সময় নিয়েই ভোট দেন শামীম। তারপর গোপন কক্ষ থেকে বেরিয়ে এক সহযোগীর সেলফি তোলার আব্দার মেটান। এর আগের নির্বাচন প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মেরে সেটা সবাইকে দেখিয়ে বাক্সে ফেলে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন এই সংসদ সদস্য। তবে এবার ইভিএমে সেই সুযোগ ছিল না।
নিরপেক্ষভাবে ভোট দিয়ে জনগণ খুশি: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে দাবি করে শামীম ওসমান বলেছেন, ‘নিরপেক্ষভাবে’ ভোট দিতে পেরে জনগণ খুশি হয়েছে। শেষ হওয়ার ২০ মিনিট আগে শহরের আদর্শ স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে একথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের এই স্থানীয় সংসদ সদস্য। শামীম ওসমান বলেন, “নিরপেক্ষভাবে ভোট দিতে পেরে জনগণ খুশি হয়েছে। জনগণ যদি খুশি থাকে, তাহলে সেটা সবচেয়ে সন্তুষ্টির কথা।
টানা দুই মেয়াদে নির্বাচিত মেয়র আওয়ামী লীগের এবারেরও প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম উচ্চারণ না করে তিনি বলেন, “আমি আশা করব এই নির্বাচনে আমি যাকে ভোট দিয়েছি, সেই নৌকা মার্কা যেন জয়লাভ করে।
“এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে পরিশ্রম করেছেন, আমার বিশ্বাস এটার রেজাল্ট আমরা পাব।” প্রার্থী নাকি প্রতীক কার পক্ষে কাজ করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম বলেন, “আমি সারাজীবন প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছি। নৌকার প্রার্থী হারবে না, যদি বলতে কোন কথা নাই।”
নারায়ণগঞ্জের যে কোনো নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমের জল্পনা-কল্পনা নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমাদের বুকে রক্তক্ষরণ হয়, যখন নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে কথা ওঠে আমরা শুনি যে নারায়ণগগঞ্জে এই হয়েছে, এই হবে, ওই হতে পারে। কিন্তু আপনারা দেখেন, জাতীয় নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন- কোনো নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে একটা ধাক্কাধাক্কি পর্যন্ত হয়নি। কোনো মানুষের মাথাও ফাটেনি।”
শামীম ওসমান বলেন, “নির্বাচনকে সংঘাতময় বলাটা একটা ফ্যাশন। কিছু মিডিয়া তো দেখলাম। এরা কোনদিকে যাবে, এটা বুঝতে পারছিল না। প্রার্থী নাকি প্রতীক- কাকে হারাবে? এরকম একটা অবস্থা হয়ত তারা চায়।
“কিন্তু নারায়ণগঞ্জে যারা আমরা আছি, একই মায়ের পেটের তিন সন্তান নির্বাচন করেছি, তখনও কিন্তু আমরা বলেছি, নির্বাচন সুষ্ঠু সুন্দরভাবে হবে। এর আগেও বলেছিলাম, তার আগেও বলেছিলাম। সুষ্ঠু সুন্দরভাবে কিন্তু হয়েছে।”
নারায়ণগঞ্জকে শান্তির শহর উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখানে দুই পাশে যেমন নদীর স্রোত আছে, মানুষের মনেও তেমন ভালবাসার স্রোত আছে।
“আমি শুধু একটা কথা বলতে চাই, নির্বাচনে জয়-পরাজয় আছে। একজন জিতবেন, আরেকজন হারবেন। দেশটা তো আমাদের সবার। আমাদের সবাইকে মিলে দেশটাকে গড়তে হবে।”
নির্বাচনের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় রিকশায় চড়ে তিনি কেন্দ্রে এসেছেন এবং ইভিএমে প্রথমবার ভোট দিয়ে ভাল লেগেছে বলে তিনি জানান।
বউ যখন বলেছিল কবুল, সেরকম আনন্দ হল ইভিএমে ভোট দিয়ে: শামীম ওসমান
ট্যাগস :
বউ যখন বলেছিল কবুল
জনপ্রিয় সংবাদ