নিজস্ব প্রতিবেদক: দৈনিক কত পাঠ্যবই বিতরণ হচ্ছে সেটির সঠিক হিসাব রাখলেও কবে নাগাদ বিতরণ শেষ হবে সেই দিনক্ষণ বলতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনের প্রথম দিন শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমার কর্মকর্তারা অনেক তারিখ দিয়েছে, আমি কোনো তারিখ দেইনি। একবার বলেছিলাম আমি পরিষ্কার জানি না, সেটা সবাই বলেছে শিক্ষা উপদেষ্টাই যদি না জানে তাহলে কে জানবে।
আমি জানি না বলেছি এই কারণে যে আমি নির্দিষ্টভাবে কোনো তারিখ দিতে পারছি না। এখন আমি প্রত্যেক দিন কতগুলো বই ছাপা হচ্ছে এবং কতগুলো বই ডিস্টিবিউট হচ্ছে এগুলোর হিসাব প্রত্যেক দিন রাত্রে আমার কাছে আসে। এবং আমি গ্রাফ দেখে বলতে পারি কতদূর এগোচ্ছি।
পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও বিতরণ শুরু করতে দেরি হওয়ার কথা তুলে ধরে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমরা বলেছিলাম যে বিষয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হবে সেসব বিষয়ের বই ফেব্রুয়ারির শেষের মধ্যে চলে যাবে বলে আশা করছি। প্রান্তিক স্কুলগুলোতে যেন আগে বই যায় সে বিষয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছিলাম।
সব পাঠ্যবই কবে নাগাদ শিক্ষার্থীরা পাবেন এবং এবিষয়ে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, আমি বলেছি যেগুলো দরকারি বই, আর যেগুলো বছরের শেষে পরীক্ষা হবে সেগুলো এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত দেব।
অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের অনেক অনেক দুর্নীতি আছে। এগুলোতে একটু নজরদারি করতে বলেছি। শিক্ষকরা ঠিকমতো তাদের ভাতা পান না। স্কুল পরিদর্শকদের হেনস্থার শিকার হন। দুই পক্ষেরই দোষ থাকে এগুলো নজরদারি দরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের কারও নামে কোনো স্থাপনা নয়: ডিসিদের নিজ নিজ কর্মস্থলে বিশেষ বিশেষ কিছু নিদর্শন রেখে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার কথা তুলে ধরে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “যাতে অনেক পরেও সবাই বলতে পারে আপনি ওই শহরের প্রশাসক ছিলেন। এটা আমার ছোটকালের একটা অভিজ্ঞতা থেকে তাদের বললাম।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের নামে কোথাও কোন কিছু হবে না। এমনকি সরকারে যারা আছেন তারা কোথাও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতেও যাবেন না।”
বর্তমান সরকারের প্রধান দায়িত্বের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ সরকারের কাজ হল সবার দাবি-দাওয়া মেটানো না বরং একটা সুশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণ। একটা সুন্দর নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়া। সেক্ষেত্রে ডিসিরা সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারেন।
বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এখানে যারা ছিলেন তারা চলে গেছেন। চর দখলের মত নতুন প্রভাবশালীরা সেটা দখলের চেষ্টা করেছে।
আমরা পরিচালনা পর্ষদগুলো ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করেছিলাম। ডিসি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু আমরা এটাও বুঝি যে এতগুলো দায়িত্ব তাদের পক্ষে নেওয়া খুব কঠিন। এ কারণে আমরা তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছি যে বেসরকারি স্কুল কলেজের পরিচালনা পরিষদগুলো আবার শুরু করে দিতে।
এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়ে রাজনৈতিক চাপ প্রতিহত করে নিরপেক্ষভাবে স্থানীয় ভাল ও সৎ ব্যক্তি, গণ্যমান্য সরকারি চাকুরে বা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের যেন স্কুলগুলোর পরিচালনা পর্ষদে নেন।
শিক্ষকরা চাকরি পাওয়া ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও যেন হেনস্থার শিকার না হন, সেদিকে নজর দিতেও ডিসিদের নির্দেশনা দেন তিনি।
তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমরা একটি পরিপত্র দিয়েছি স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে কমপক্ষে বিএ পাস এবং কলেজের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি হতে হবে। এটাতে তাদের পক্ষে রাজনৈতিক চাপ ঠেকানো একটু সুবিধা হয়েছে।
এমপিভুক্ত স্কুল শিক্ষকদের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের জন্য যতটুকু করার আমি করার চেষ্টা করব। তাদের জন্য অনলাইনভিত্তিক বদলির একটি ব্যবস্থা করছি। তারা যে ভাতাগুলো পান তা আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে বাড়ানোর চেষ্টা করছি। বেসরকারি শিক্ষকদের ৬৭ বছরের অবসর ভাতা বকেয়া রয়ে গেছে। সেটা যাতে আগামী অর্থবছর থেকে একটি স্থায়ী সমাধান হয় আমরা সেই চেষ্টা করছি।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, কোথাও স্কুল আছে শিক্ষক নাই, কোথাও শিক্ষক আছে দালানকোঠা নাই। অবকাঠামোর কিছু ঘাটতি থাকলেও যাতে শিক্ষার মান উন্নয়ন হয় শিক্ষকরা আরেকটু ভালো সুযোগ সুবিধা পেতে পারেন সেদিকে চেষ্টা করব। আগামী বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে অন্যান্য বছরের থেকে আনুপাতিকভাবে বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা করব।