নিজস্ব প্রতিবেদক : এবারের অমর একুশে বইমেলার আয়োতন বাড়ার পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে। ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের স্মৃতিতে আগামীকাল ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার শুরু হতে যাচ্ছে এই মেলা। ভাষা শহীদ-ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর শহীদ, আহত ও অংশগ্রহণকারী সকলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল শনিবার বিকাল ৩টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরে বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটি। লিখিত বক্তব্যে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব সরকার আমিন বলেন, এবারের বইমেলায় মোট ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১ হাজার ৮৪ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি এবং ইউনিট ছিল ৯৪৬টি। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার মোট প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৭টি, যার মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি। গত বছরও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৭টি ছিল। লিটল ম্যাগাজিন চত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় করা হয়েছে। সেখানে ১৩০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশুচত্বরে ৭৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১২০ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর শিশুচত্বরে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১০৯ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে, তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বাহির-পথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির-গেইটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্ল্যান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট চারটি প্রবেশ ও বাহির-পথ থাকবে। খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা-ঘেঁষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবাও অব্যাহত থাকবে। মন্দির-গেইটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে শিশুচত্বর, যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্খিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলা একাডেমির তিনটি প্যাভিলিয়ন এবং শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য একটি স্টল থাকবে। ৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশ উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকবে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এছাড়া ২০২৪ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছর মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ৪৩টি ও পুর্নমুদ্রিত ৪১টি বই। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বইমেলার সর্বশেষ প্রস্তুতি বিষয়ে বক্তব্য দেন বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব সরকার আমিন। এছাড়া একাডেমির সচিব মো. সেলিম রেজা, জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) জি এম মিজানুর রহমান এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান ড্রিমার ডংকির সিএমও রাকিব হাসান রাজ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বইমেলায় শেখ মুজিবের বই
এ বছর অমর একুশে বইমেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভেলিয়ন ও শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত বই রাখা হবে কিনা বিষয়ে বাংলা একাডেমির কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে একাডেমির সচিব ড. সেলিম রেজাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বইমেলায় বেড়েছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ