নিজস্ব প্রতিবেদক: রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেট দিয়ে বইমেলায় প্রবেশ করতেই কানে এলো ছোট্ট শিশুর কান্নার আওয়াজ। ভেতরে প্রবেশ করে জানা গেলো, তার নাম মাহফুজা। সিমিমপুর না দেখে বাসায় যাবে না সে। বাবা-মা তাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছে না এবারের বইমেলায় সিসিমপুরের পরিবেশনা নেই।
প্রতি বছর বইমেলায় শিশুপ্রহরে সিসিমপুরকে কেন্দ্র করে থাকে আলাদা উত্তেজনা। শিশুপ্রহরে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশুরা বাবা-মায়ের সঙ্গে সিসিমপুর দেখতে আসে। বই কেনার পাশাপাশি সিসিমপুরই যেন পুরো শিশুপ্রহর মাতিয়ে রাখে। সামনে জায়গা না পেলে বাবার কাঁধে উঠে, মায়ের কোলে বসে সিসিমপুরের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ এর প্রথম শিশুপ্রহরে মাহফুজার মতোই অনেক শিশুকে ফিরে যেতে হয়েছে। কারণ এবারের বইমেলায় সিসিমপুরের পরিবেশনা নেই।
বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, ফাঁকা পড়ে আছে সিসিমপুরের স্টেজ বানানো সেই জায়গাটি। সেখানে বসেনি কোনো বইয়ের স্টলও। বইমেলায় ঢুকেই শিশুরা প্রথমে সেদিকে গেলেও ফিরে আসতে হচ্ছে হতাশ হয়ে। শুধু বই কিনেই ফিরে যেতে হচ্ছে শিশুদের। অনেকেই আবার মাহফুজার মতো কান্নাও করছে সিসিমপুর দেখতে না পেয়ে।
আজিমপুর থেকে আসা মাহফুজার বাবা বলেন, গত বছর বইমেলায় আমরা মাহফুজাকে নিয়ে এসেছিলাম। সেবার ও আরও ছোট ছিল। তবে সিসিমপুর দেখে অনেক আনন্দ পেয়েছিল। এ বছর বইমেলার কথা শোনার পর থেকেই সে সিসিমপুর দেখার জন্য বলছিল। সে জন্যই নিয়ে এসেছি। কিন্তু এসে জানতে পারলাম এবার সিসিমপুর আসবে না।
বখশীবাজার থেকে আসা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, গত বছর আমি দুইবার সিসিমপুর দেখতে এসেছিলাম। আমার অনেক ভালো লেগেছিল। কিন্তু এ বছর সেটি নাই। এ জন্য এবারের মেলা ভালো লাগছে না। দুইটা বই কিনেছি, এখন বাসায় যাবো।
ছোট্ট ছেলে ইরফানকে নিয়ে মেলায় এসেছেন তার বাবা-মা। ইরফানের বাবা বলেন, ইরফানের বয়স পাঁচ বছর। এ বছরই ওকে নিয়ে প্রথম বইমেলায় আসলাম। মূলত সিসিমপুর দেখাতে নিয়ে এসেছিলাম। সিসিমপুর না থাকায় একটু খারাপ লাগছে। তবে বইমেলা ঘুরতে ভালো লাগছে। ইরফানও খুশি।
এদিকে এ বছর সিসিমপুর না থাকার বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন বইমেলার সদস্য সচিব সরকার আমিন। তিনি বলেন, সিসিমপুর এবার আবেদনই করেনি। যে কারণে এ বছর সিসিমপুর থাকবে না। তবে শিশুপ্রহরে শিশুরা মেলায় আসবে ঘুরবে বই কিনবে।
সকাল থেকেই মোমো, ঝালমুড়ির দোকান: এদিকে বই মেলার শিশুচত্বর সংলগ্ন এই গেটের বাইরে সকাল ৯টা থেকেই বসেছে একাধিক মোমো, ভাজা-পোড়া ও ঝালমুড়ি-ফুসকার দোকান। শিশুপ্রহরকে কেন্দ্র করেই সকাল থেকে ভাসমান এ দোকানগুলো বসানো হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। তবে রয়েছে পুলিশ ও আনসারের ভয়। কিছু সময় পরপরই দোকানগুলো তুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
মোমো বিক্রেতা শাহ পরান বলেন, এ বছর মানুষ একটু কম। প্রথম সপ্তাহের কারণেও হতে পারে। তবে শিশুপ্রহর ছাড়াও অন্যান্য দিনও বিকাল থেকে আমরা দোকান বসাই। মোমোর দোকান সবচেয়ে বেশি হওয়ায় উপার্জন কম। ১৫-২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারলে পাঁচ হাজার মতো লাভ থাকে।
ঝালমুড়ি বিক্রেতা শাহজাহান মিয়া বলেন, বিক্রি মোটামুটি হচ্ছে। তবে সকালে মানুষ কম আসছে। বিকালে বেশি মানুষ দেখা যায়, তখন বিক্রিও ভালো হয়। দিনে ১০ হাজার টাকা মতো বিক্রি হয়। [সৌজন্যে বাংলা ট্রিবিউন]