ঢাকা ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

বইবন্ধুদের স্পর্শে হেসে উঠুক বই

  • আপডেট সময় : ১০:০২:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

তুষার আবদুল্লাহ : ২০২১-এর বইমেলায় একদিনের জন্যও যাইনি। কারণ ছিল, যে মেলায় শিশু- কিশোরদের ডাকতে পারবো না, সেখানে আমিও যাবো না। বিদ্যায়তন বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের মেলায় ডেকে আনা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য মনে হয়নি । মেলাও জমেনি। এবার বিদ্যায়তন খুলে দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। সুলভ হয়েছে টিকা। ওমিক্রন কমতির দিকে, মেলা একটু পিছিয়ে এনে শুরু করা হলো। প্রথম তিনদিন মেলা পাঠক সমাগম কমছিল।
প্রথম ছুটির দিন শুক্রবার থেকেই মেলা জমে উঠতে শুরু করে। বিকেলে যেন একুশের বই আপন রূপে ফিরে দুই বছর পর। মেলা আরও ছড়িয়েছে। স্বাধীনতা স্তম্ভের দুই দিকেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্টল। কেমন যেন অগোছালো লাগলো মেলা। তারচেয়ে ২০২০ এর মেলাকে খানিকটা সুবিন্যস্ত মনে হয়েছিল। এবার খাপছাড়া লেগেছে, বন্ধু প্রকাশক, পাঠক, লেখকদের অনেকের দেখার সঙ্গে, আমার দেখারও মিল খুঁজে পেলাম। তারপরও আনন্দ মেলা তার রূপ ফিরে পেতে যাচ্ছে। অবশ্য সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় ছিল- শিশু কিশোরদের হাতে বই দেখেছি, হাসি দেখেছি তাদের চোখে মুখে।
তবে পাঠক ও দর্শকরা যতটা না বইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তার চেয়ে বেশি মেতে ছিলেন মোবাইল নিয়ে। শুধু সেলফি তোলা নয়, সকলেই যেন একেকটি টিভি রিপোর্টার। ফেসবুক লাইভ করছেন। সক্রিয় ইউটিউবারদের দল। অনলাইন পত্রিকা, টেলিভিশন। মূলধারার টেলিভিশনেরও লাইভের শেষ নেই। লাইভের যন্ত্রণায় মেলা মাঠে পাঠক দর্শকদের স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। টেলিভিশন লাইভের জন্য আলাদা একটি জায়গা করে দেওয়ার কথা ভাবতে পারে বাংলা একাডেমি।
যখন থেকে সামাজিক যোগাযোগের লেখা মলাট হয়ে মেলায় প্রবেশ করতে শুরু করলো তখন থেকেই, প্রকাশিত বইয়ের মান আরেক ধাপ নি¤œগামী হতে শুরু করে। কারণ এর আগেই শুরু হয় ডলার, দিনারের বিনিময়ে বইয়ের প্রকাশ। এবং বিভিন্ন দফতরের বিশেষ ব্যক্তিদের লেখক হওয়া। প্রকাশকরা তাদের ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ বই বের করেন। এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। তবে দুই এক জন অবশ্যই এই কাতারে যোগ্য লেখকও আছেন। তারা ব্যতিক্রম। প্রকাশকরা এখন ঝুঁকে পড়ছেন বেশি ছোট পর্দার নায়িকা, গায়ক, গায়িকা , অভিনেতাদের বই ছাপাতে। ইউটিউবে কার ফলোয়ার, সাবস্ক্রাইবার কত, এ অংক কষে বই ছাপা হচ্ছে। মলাটের ভেতর কী আছে, সেটি দেখার দরকার নেই। তারকার নাম ও মুখ বেচে বই পাঠকের হাতে গুঁজে দেওয়া হচ্ছে। ফলে মেলা জুড়ে লেখক বিরল। টিভি, সিনেমা আর ইউটিউবের তারকার ভরা। এরাই ছুটছেন টিভি ক্যামেরার দিকে। লাইভে গিয়ে বই বেচার দৌড়।
পত্রিকা ও টেলিভিশন থেকে কে বইমেলা কভার করবেন, এনিয়ে বরাবরই বার্তাকক্ষকে মুশকিলে পড়তে দেখেছি। টিভিতে এই সংকট আরও প্রবল। কারণ গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে বই মনষ্কতা কমে যাচ্ছে। সমকালীন সাহিত্য, লেখালেখি নিয়ে জানাশোনা কম। একটু আধটু পড়েন যারা, তারা জনপ্রিয় ধারার বইয়ের খোঁজ খবরই রাখেন। লেখক, প্রকাশকদের সম্পর্কে জানার চৌহুদ্দি কম। ফলে লাইভে বা রিপোর্টে বইমেলা নিয়ে সাংবাদিকতা হচ্ছে তা শুধুই কাভারিজম। কতিপয় মৌসুমি লেখকের অনুরোধ রক্ষা করা ছাড়া কিছু নয়। বইমেলা বা বইয়ের প্রকাশনা যেখানে এসে পৌঁছেছে, তাতে বাংলা একাডেমির তেমন ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। বইয়ের মান রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে প্রকাশকদের। নবীন ও তরুণ প্রকাশকরা এক্ষেত্রে বরাবরই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছেন। অভিজ্ঞ প্রকাশকদেরও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। তারল্যের বিনিময়ে বই প্রকাশ থেকে সরে আসতে হবে। মতলবের প্রকাশনা করা যাবে না। গুরুত্ব দিতে হবে সম্পাদনা পরিষদ তৈরির দিকে। বইমেলা ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে না। এমন পূর্বাভাস পাওয়া গেলো। বইমেলা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পর্যন্ত চলবে। আনন্দের খবর। বিদ্যায়তন খুলে যাচ্ছে। বই বন্ধুদের ভিড় বাড়বে মেলায়। বইবন্ধুদের স্পর্শে হেসে উঠুক বই।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বইবন্ধুদের স্পর্শে হেসে উঠুক বই

আপডেট সময় : ১০:০২:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২

তুষার আবদুল্লাহ : ২০২১-এর বইমেলায় একদিনের জন্যও যাইনি। কারণ ছিল, যে মেলায় শিশু- কিশোরদের ডাকতে পারবো না, সেখানে আমিও যাবো না। বিদ্যায়তন বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের মেলায় ডেকে আনা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য মনে হয়নি । মেলাও জমেনি। এবার বিদ্যায়তন খুলে দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। সুলভ হয়েছে টিকা। ওমিক্রন কমতির দিকে, মেলা একটু পিছিয়ে এনে শুরু করা হলো। প্রথম তিনদিন মেলা পাঠক সমাগম কমছিল।
প্রথম ছুটির দিন শুক্রবার থেকেই মেলা জমে উঠতে শুরু করে। বিকেলে যেন একুশের বই আপন রূপে ফিরে দুই বছর পর। মেলা আরও ছড়িয়েছে। স্বাধীনতা স্তম্ভের দুই দিকেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্টল। কেমন যেন অগোছালো লাগলো মেলা। তারচেয়ে ২০২০ এর মেলাকে খানিকটা সুবিন্যস্ত মনে হয়েছিল। এবার খাপছাড়া লেগেছে, বন্ধু প্রকাশক, পাঠক, লেখকদের অনেকের দেখার সঙ্গে, আমার দেখারও মিল খুঁজে পেলাম। তারপরও আনন্দ মেলা তার রূপ ফিরে পেতে যাচ্ছে। অবশ্য সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় ছিল- শিশু কিশোরদের হাতে বই দেখেছি, হাসি দেখেছি তাদের চোখে মুখে।
তবে পাঠক ও দর্শকরা যতটা না বইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তার চেয়ে বেশি মেতে ছিলেন মোবাইল নিয়ে। শুধু সেলফি তোলা নয়, সকলেই যেন একেকটি টিভি রিপোর্টার। ফেসবুক লাইভ করছেন। সক্রিয় ইউটিউবারদের দল। অনলাইন পত্রিকা, টেলিভিশন। মূলধারার টেলিভিশনেরও লাইভের শেষ নেই। লাইভের যন্ত্রণায় মেলা মাঠে পাঠক দর্শকদের স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। টেলিভিশন লাইভের জন্য আলাদা একটি জায়গা করে দেওয়ার কথা ভাবতে পারে বাংলা একাডেমি।
যখন থেকে সামাজিক যোগাযোগের লেখা মলাট হয়ে মেলায় প্রবেশ করতে শুরু করলো তখন থেকেই, প্রকাশিত বইয়ের মান আরেক ধাপ নি¤œগামী হতে শুরু করে। কারণ এর আগেই শুরু হয় ডলার, দিনারের বিনিময়ে বইয়ের প্রকাশ। এবং বিভিন্ন দফতরের বিশেষ ব্যক্তিদের লেখক হওয়া। প্রকাশকরা তাদের ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ বই বের করেন। এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। তবে দুই এক জন অবশ্যই এই কাতারে যোগ্য লেখকও আছেন। তারা ব্যতিক্রম। প্রকাশকরা এখন ঝুঁকে পড়ছেন বেশি ছোট পর্দার নায়িকা, গায়ক, গায়িকা , অভিনেতাদের বই ছাপাতে। ইউটিউবে কার ফলোয়ার, সাবস্ক্রাইবার কত, এ অংক কষে বই ছাপা হচ্ছে। মলাটের ভেতর কী আছে, সেটি দেখার দরকার নেই। তারকার নাম ও মুখ বেচে বই পাঠকের হাতে গুঁজে দেওয়া হচ্ছে। ফলে মেলা জুড়ে লেখক বিরল। টিভি, সিনেমা আর ইউটিউবের তারকার ভরা। এরাই ছুটছেন টিভি ক্যামেরার দিকে। লাইভে গিয়ে বই বেচার দৌড়।
পত্রিকা ও টেলিভিশন থেকে কে বইমেলা কভার করবেন, এনিয়ে বরাবরই বার্তাকক্ষকে মুশকিলে পড়তে দেখেছি। টিভিতে এই সংকট আরও প্রবল। কারণ গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে বই মনষ্কতা কমে যাচ্ছে। সমকালীন সাহিত্য, লেখালেখি নিয়ে জানাশোনা কম। একটু আধটু পড়েন যারা, তারা জনপ্রিয় ধারার বইয়ের খোঁজ খবরই রাখেন। লেখক, প্রকাশকদের সম্পর্কে জানার চৌহুদ্দি কম। ফলে লাইভে বা রিপোর্টে বইমেলা নিয়ে সাংবাদিকতা হচ্ছে তা শুধুই কাভারিজম। কতিপয় মৌসুমি লেখকের অনুরোধ রক্ষা করা ছাড়া কিছু নয়। বইমেলা বা বইয়ের প্রকাশনা যেখানে এসে পৌঁছেছে, তাতে বাংলা একাডেমির তেমন ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। বইয়ের মান রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে প্রকাশকদের। নবীন ও তরুণ প্রকাশকরা এক্ষেত্রে বরাবরই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছেন। অভিজ্ঞ প্রকাশকদেরও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। তারল্যের বিনিময়ে বই প্রকাশ থেকে সরে আসতে হবে। মতলবের প্রকাশনা করা যাবে না। গুরুত্ব দিতে হবে সম্পাদনা পরিষদ তৈরির দিকে। বইমেলা ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে না। এমন পূর্বাভাস পাওয়া গেলো। বইমেলা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পর্যন্ত চলবে। আনন্দের খবর। বিদ্যায়তন খুলে যাচ্ছে। বই বন্ধুদের ভিড় বাড়বে মেলায়। বইবন্ধুদের স্পর্শে হেসে উঠুক বই।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী