ঢাকা ০৫:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

ফ্লোটিলার সবশেষ জাহাজটিও আটক করলো ইসরায়েল

  • আপডেট সময় : ০৩:১৪:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: অবরুদ্ধ গাজার উদ্দেশে ত্রাণবাহী বহরের একমাত্র জাহাজটিকেও আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উপকূলে এই ঘটনাটি ঘটে।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকালে একটি লাইভস্ট্রিম ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলি বাহিনী জোর করে জাহাজটিতে ওঠে।

পোল্যান্ডের পতাকাবাহী ‘ম্যারিনেট’ নামের ওই জাহাজটিতে ছয়জন ক্রু রয়েছেন বলে জানা গেছে। এটি ছিল গ্লোবাল সামুদ ফ্লোটিলার শেষ কার্যকর নৌযান। এক সময়ের ৪৪টি জাহাজ নিয়ে গঠিত বহরের সর্বশেষ জাহাজ।

এর আগে, বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাহাজটির ক্যাপ্টেন একটি ভিডিও বার্তায় জানান, কিছুক্ষণ আগে ইঞ্জিনে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে সেটি মেরামত করা হয়েছে এবং এখন জাহাজটি সম্পূর্ণ সচল রয়েছে। ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও জানিয়েছেন, ম্যারিনেট এখনো স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট সংযোগের মাধ্যমে যোগাযোগে রয়েছে। এর সঙ্গে সরাসরি লাইভস্ট্রিমও সচল রয়েছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ রিয়েলটাইমে পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন।

জাহাজটি ফিরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছে না বলেও জানানো হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত এক পোস্টে তারা লিখেন, ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। এটি সাহসের প্রতীক। এটি ভয়, অবরোধ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতিচ্ছবি।

পোস্টে আরও বলা হয়, গাজা একা নয়। ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।

উল্লেখ্য, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ ছিল একটি শান্তিপূর্ণ মানবিক মিশন, যার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের অবরোধ ভেঙে সরাসরি গাজার মানুষের কাছে ওষুধ ও খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। আগস্টের শেষ দিকে যাত্রা শুরু করা এই নৌবহরে ৪০টির বেশি বেসামরিক জাহাজ অংশ নেয়। এর মধ্যে ছিল আইনজীবী, চিকিৎসক, সংসদ সদস্য, মানবাধিকারকর্মীসহ নানা দেশের প্রতিনিধিরা।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ওই বহরের অধিকাংশ জাহাজকে আটক করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ৪৫০ জন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবককে। এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি হলেন সুইডিশ জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, যাকে সম্প্রতি একটি জাহাজ থেকে সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনারা আটক করে। গ্রেফতারের আগে রেকর্ড করা এক ভিডিও বার্তায় থুনবার্গ বলেছিলেন, যদি আপনি এই ভিডিও দেখেন, তাহলে বুঝবেন আমি অপহৃত হয়েছি এবং ইসরায়েলি বাহিনী আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেছে।

এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ইতোমধ্যে তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, ইতালিসহ বহু দেশ নিন্দা জানিয়েছে। ইউরোপজুড়ে রাস্তায় নেমেছে হাজারো মানুষ। ইতালি ডেকেছে সাধারণ ধর্মঘট। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান এই অভিযানে ইসরায়েলকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং এই আক্রমণকে ‘গাজার ক্ষুধার্ত শিশুদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা’ বলে অভিহিত করেছেন।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, তারা শুধু একটি বৈধ সামরিক অবরোধ রক্ষা করছে এবং এই নৌবহর ছিল ‘উসকানিমূলক অভিযান’। তারা বলেছে, যেকোনো সহায়তা তাদের নির্ধারিত নিরাপদ রুটের মাধ্যমেই গাজায় পাঠানো যেতে পারে।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েল যে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে, তা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও জাতিসংঘ ঘোষিত ‘জেনোসাইড কনভেনশন’-এর লঙ্ঘন।

ওআ/আপ্র/০৩/১০/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ফ্লোটিলার সবশেষ জাহাজটিও আটক করলো ইসরায়েল

আপডেট সময় : ০৩:১৪:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: অবরুদ্ধ গাজার উদ্দেশে ত্রাণবাহী বহরের একমাত্র জাহাজটিকেও আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উপকূলে এই ঘটনাটি ঘটে।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকালে একটি লাইভস্ট্রিম ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলি বাহিনী জোর করে জাহাজটিতে ওঠে।

পোল্যান্ডের পতাকাবাহী ‘ম্যারিনেট’ নামের ওই জাহাজটিতে ছয়জন ক্রু রয়েছেন বলে জানা গেছে। এটি ছিল গ্লোবাল সামুদ ফ্লোটিলার শেষ কার্যকর নৌযান। এক সময়ের ৪৪টি জাহাজ নিয়ে গঠিত বহরের সর্বশেষ জাহাজ।

এর আগে, বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাহাজটির ক্যাপ্টেন একটি ভিডিও বার্তায় জানান, কিছুক্ষণ আগে ইঞ্জিনে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে সেটি মেরামত করা হয়েছে এবং এখন জাহাজটি সম্পূর্ণ সচল রয়েছে। ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও জানিয়েছেন, ম্যারিনেট এখনো স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট সংযোগের মাধ্যমে যোগাযোগে রয়েছে। এর সঙ্গে সরাসরি লাইভস্ট্রিমও সচল রয়েছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ রিয়েলটাইমে পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন।

জাহাজটি ফিরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছে না বলেও জানানো হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত এক পোস্টে তারা লিখেন, ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। এটি সাহসের প্রতীক। এটি ভয়, অবরোধ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতিচ্ছবি।

পোস্টে আরও বলা হয়, গাজা একা নয়। ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।

উল্লেখ্য, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ ছিল একটি শান্তিপূর্ণ মানবিক মিশন, যার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের অবরোধ ভেঙে সরাসরি গাজার মানুষের কাছে ওষুধ ও খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। আগস্টের শেষ দিকে যাত্রা শুরু করা এই নৌবহরে ৪০টির বেশি বেসামরিক জাহাজ অংশ নেয়। এর মধ্যে ছিল আইনজীবী, চিকিৎসক, সংসদ সদস্য, মানবাধিকারকর্মীসহ নানা দেশের প্রতিনিধিরা।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ওই বহরের অধিকাংশ জাহাজকে আটক করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ৪৫০ জন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবককে। এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি হলেন সুইডিশ জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, যাকে সম্প্রতি একটি জাহাজ থেকে সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনারা আটক করে। গ্রেফতারের আগে রেকর্ড করা এক ভিডিও বার্তায় থুনবার্গ বলেছিলেন, যদি আপনি এই ভিডিও দেখেন, তাহলে বুঝবেন আমি অপহৃত হয়েছি এবং ইসরায়েলি বাহিনী আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেছে।

এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ইতোমধ্যে তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, ইতালিসহ বহু দেশ নিন্দা জানিয়েছে। ইউরোপজুড়ে রাস্তায় নেমেছে হাজারো মানুষ। ইতালি ডেকেছে সাধারণ ধর্মঘট। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান এই অভিযানে ইসরায়েলকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং এই আক্রমণকে ‘গাজার ক্ষুধার্ত শিশুদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা’ বলে অভিহিত করেছেন।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, তারা শুধু একটি বৈধ সামরিক অবরোধ রক্ষা করছে এবং এই নৌবহর ছিল ‘উসকানিমূলক অভিযান’। তারা বলেছে, যেকোনো সহায়তা তাদের নির্ধারিত নিরাপদ রুটের মাধ্যমেই গাজায় পাঠানো যেতে পারে।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েল যে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে, তা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও জাতিসংঘ ঘোষিত ‘জেনোসাইড কনভেনশন’-এর লঙ্ঘন।

ওআ/আপ্র/০৩/১০/২০২৫