ঢাকা ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে আরো দৃশ্যমান ঐক্য চান প্রধান উপদেষ্টা

  • আপডেট সময় : ০৯:৩৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

বুধবার ১২টি রাজনৈতিক দল এবং একটি জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ফটোসেশন করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস -ছবি পিআইডি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘মতপার্থক্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ থাকলেও ‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরো দৃশ্যমান করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এর কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেছেন, পরাজিত শক্তির নানা ‘ষড়যন্ত্রের লক্ষণ’ দেখা যাচ্ছে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার পর ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে চার দলের সঙ্গে বৈঠকের পরদিন আরো ১২টি রাজনৈতিক দল এবং একটি জোটের নেতাদের সঙ্গে বুধবার (২৩ জুলাই) বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বিকাল সোয়া ৪টায় বৈঠকের পর তার দপ্তর এ তথ্য দিয়েছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরো দৃশ্যমান করা দরকার। তা না হলে তারা এটাকে সুযোগ মনে করছে।

ইউনূস বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা, সেজন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হত। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া সব দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও গণঐক্য বজায় রাখার বিষয়ে ‘একমত’ পোষণ করে, এ কথা তুলে ধরে উপদেষ্টার বলেছে, দলগুলোর নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টাকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তারা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এবং ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরো নিয়মিত সর্বদলীয় বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ জানান। তার আাগে বিকাল ৩টায় বৈঠক শুরু হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার জানান।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির তানিয়া রব, ১২–দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণফোরামের মিজানুর রহমান।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এসে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টা চারটি রাজনৈতিক দলকে ডেকেছিলেন। বুধবারের আলোচনা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল বলেছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের প্রশ্নে তাদের মধ্যে কোনো মতভিন্নতা নেই।

আসিফ নজরুল বলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, আপনাদের মধ্যে যে ঐক্য আছে, সেটা আরেকটু দৃশ্যমান হলে ভালো হয়। গঠনমূলক কোনো কর্মসূচি দিয়ে হোক, অথবা যেকোনো ভাবে হোক, আপনার যদি একসাথে থাকেন, তাহলে মানুষের মনে স্বস্তি আসবে। ঐক্যের প্রমাণ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলো উপস্থাপন করে যে, মাঠে উনারা নিজেদের মধ্যে যাই বলুন না কেন, প্রধান উপদেষ্টা ডাকলে সবাই একসাথে হাজির হন। ঐক্য থাকার আরেকটা প্রমাণ হচ্ছে যে দলগুলো জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের মিটিংয়ে নিয়মিত যাচ্ছে।

গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৮ জন নিহত হয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৮ জন। হতাহতের ঘটনায় ক্ষতিপূরণসহ ছয় দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারকে তারা দিনভর অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এদিকে মাইলস্টোনের ঘটনার পর মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর ঘোষণা দিতে দেরি হওয়ায় এদিন দুপুরে সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখায় কয়েকশ শিক্ষার্থী। সেখানে তারা ভাঙচুরও চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি এই আন্দোলনের পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের হাত দেখতে পাওয়ার কথা বলেছে। ইসলামী আন্দোলনও যে একই ধারণা পোষণ করছে, সে কথা বৈঠক শেষে তুলে ধরেছেন আতাউর রহমান।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে আরো দৃশ্যমান ঐক্য চান প্রধান উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ০৯:৩৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘মতপার্থক্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ থাকলেও ‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরো দৃশ্যমান করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এর কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেছেন, পরাজিত শক্তির নানা ‘ষড়যন্ত্রের লক্ষণ’ দেখা যাচ্ছে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার পর ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে চার দলের সঙ্গে বৈঠকের পরদিন আরো ১২টি রাজনৈতিক দল এবং একটি জোটের নেতাদের সঙ্গে বুধবার (২৩ জুলাই) বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বিকাল সোয়া ৪টায় বৈঠকের পর তার দপ্তর এ তথ্য দিয়েছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরো দৃশ্যমান করা দরকার। তা না হলে তারা এটাকে সুযোগ মনে করছে।

ইউনূস বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা, সেজন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হত। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া সব দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও গণঐক্য বজায় রাখার বিষয়ে ‘একমত’ পোষণ করে, এ কথা তুলে ধরে উপদেষ্টার বলেছে, দলগুলোর নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টাকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তারা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এবং ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরো নিয়মিত সর্বদলীয় বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ জানান। তার আাগে বিকাল ৩টায় বৈঠক শুরু হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার জানান।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির তানিয়া রব, ১২–দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণফোরামের মিজানুর রহমান।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এসে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টা চারটি রাজনৈতিক দলকে ডেকেছিলেন। বুধবারের আলোচনা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল বলেছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের প্রশ্নে তাদের মধ্যে কোনো মতভিন্নতা নেই।

আসিফ নজরুল বলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, আপনাদের মধ্যে যে ঐক্য আছে, সেটা আরেকটু দৃশ্যমান হলে ভালো হয়। গঠনমূলক কোনো কর্মসূচি দিয়ে হোক, অথবা যেকোনো ভাবে হোক, আপনার যদি একসাথে থাকেন, তাহলে মানুষের মনে স্বস্তি আসবে। ঐক্যের প্রমাণ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলো উপস্থাপন করে যে, মাঠে উনারা নিজেদের মধ্যে যাই বলুন না কেন, প্রধান উপদেষ্টা ডাকলে সবাই একসাথে হাজির হন। ঐক্য থাকার আরেকটা প্রমাণ হচ্ছে যে দলগুলো জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের মিটিংয়ে নিয়মিত যাচ্ছে।

গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৮ জন নিহত হয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৮ জন। হতাহতের ঘটনায় ক্ষতিপূরণসহ ছয় দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারকে তারা দিনভর অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এদিকে মাইলস্টোনের ঘটনার পর মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর ঘোষণা দিতে দেরি হওয়ায় এদিন দুপুরে সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখায় কয়েকশ শিক্ষার্থী। সেখানে তারা ভাঙচুরও চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি এই আন্দোলনের পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের হাত দেখতে পাওয়ার কথা বলেছে। ইসলামী আন্দোলনও যে একই ধারণা পোষণ করছে, সে কথা বৈঠক শেষে তুলে ধরেছেন আতাউর রহমান।