নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্র ক্ষমতায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলেও একপর্যায়ে মানুষ যে জেগে ওঠে, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাই কোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, মাও সেতুংয়ের মতে, কোনো কোনো মৃত্যু হয়- পাহাড়ের মত ভারী, আর কোনো কোনো মৃত্যু পাখির পালকের মত হালকা। আবরারের মৃত্যু আমাদের কাছে পাহাড়ের মতো ভারী হয়ে আছে।
গোটা জাতির মূল্যবোধের শিকড়ে নাড়া দিয়েছে। আবরার ফাহাদের মৃত্যু এক্সপোজ করেছে যে- রাজনৈতিক ফ্যাসিজম কীভাবে দিনে দিনে বাড়তে পারে। একই সাথে আবরারের মৃত্যু আমাদেরকে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেছে যে- ফ্যাসিজম যত শক্তিশালী হোক, মানুষের মনুষ্যত্ববোধ কখনো কখনো জেগে উঠবে।
সাড়ে পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবনের রায় বহাল রেখেছে হাই কোর্ট।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি নিয়ে রোববার (১৬ মার্চ) এ রায় দেয় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আপিল বেঞ্চ।
রায় ঘোষণার পর অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, আমার পাশে আবরারের বাবা আছেন, উনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন, গোটা জাতি ন্যায়বিচার পেয়েছে। এ রায়ের মধ্য দিয়ে সমাজে ডিসিপ্লিন আনার জন্য, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগের যে ধারণা, সে ধারণাটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ রায়ের মধ্য দিয়ে সমাজে বার্তা গেল যে- আপনি যত শক্তিশালী হোন না কেন, আপনার পেছনে যত শক্তি থাকুক না কেন- সত্য এবং ন্যায়বিচার একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে।
আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, নিম্ন আদালত যে ফাইন্ডিংস দিয়েছে, এখানে ইন্টারফেয়ারের মত কিছু নেই।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সন্ধ্যার পর আবরারকে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের পর দোতলা ও নিচতলার সিঁড়ির মাঝামাঝি জায়গায় তাকে অচেতন অবস্থায় ফেলে যায় কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। ভোরে চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আবরার ফেসবুকে তার শেষ পোস্টে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের করা কয়েকটি চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন। বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই যে ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে ‘শিবির সন্দেহে’ আবরারকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা সংগঠনটির তদন্তে উঠে এলে ১২ জনকে বহিষ্কার করা হয়।
আবরার হত্যার পর ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে বুয়েট। ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবরার ফাহাদ ‘তার জীবন দিয়ে অসংখ্য মেধাবী ছাত্রের জীবন রক্ষা করে দিয়ে গেছে’ মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান বলেন, সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়ার কারণে আবরার ফাহাদের বিচার নিশ্চিত হয়েছে।