ঢাকা ০২:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় অপরাধের বিচার পদ্ধতি

  • আপডেট সময় : ০৪:২৪:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

আবদুল মালেক ভূঁঞা : কোনো অন্যায় বা নীতিগর্হিত কাজ কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সংঘটিত করলে কিংবা অবহেলাবশত সংঘটিত করে থাকলে তাকে ওই কাজের জন্য দায়ী হতে হয়। স্বেচ্ছায় সংঘটিত কাজের বেলায় ধরে নেওয়া হয়, অন্যায়কারীর একটি অসৎ উদ্দেশ্য বা দোষী মন ছিল। অপরাধ প্রস্তুতির সঙ্গে অভিপ্রায় থাকলে এবং তার অনুসরণে কোনো কাজ সংঘটিত হলে তা অপরাধ সংগঠনের জন্য যথোপযুক্ত মর্মে পরিগণিত হবে। তাছাড়া কমন ল লিগ্যাল সিস্টেমে বলা হয়েছে: ওমহড়ৎধহপব ড়ভ ষধি রং হড় বীপঁংব। অর্থাৎ আইন জানি না বললেই ক্ষমা পাওয়া যায় না।

যেসব কাজের দ্বারা সাধারণত সমাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয়, সেসব কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে।
ফৌজদারি মামলায় রাষ্ট্র বাদী হওয়ার কারণ সর্বসাধারণের নিরাপত্তা এ আইনের কার্যবিধি। ফৌজদারি আইনে কোনো ব্যক্তিকে তার অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় নেই। ফৌজদারি মামলা ফরিয়াদির সুবিধামতো যে কোনো সময়েই দায়ের করা যায়। সময়ের কালক্ষেপণ সার্বভৌম ক্ষমতাকে খর্ব করে না।

এরূপ প্রতিবন্ধকতা কেবল দেওয়ানি মোকদ্দমার ক্ষেত্রেই রয়েছে।
১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪নং ধারার ১নং উপধারার (ণ) দফায় অপরাধ শব্দের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যার সন্ধান পাওয়া যায়। এই ধারায় বর্ণিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী, অপরাধ বলতে সেসব কাজ করা বা করা থেকে বিরত থাকাকে বোঝায়Ñ যা করলে বা করা থেকে বিরত থাকলে বর্তমান প্রচলিত কোনো আইনের দ্বারা দণ্ডনীয় হবে।

যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারেÑ এমন ধরনের অপরাধগুলো রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ বলা হয়।
সাধারণ অর্থে রাষ্ট্রদ্রোহ বলতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে উত্তেজক করে তোলা বা উত্তেজক করার প্রচেষ্টা করাকে বোঝায়। রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধের উপাদান হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কোনো কিছু বলছেন বা লিখেছেন বা চিহ্ন দিয়েছেন বা কল্পমূর্তি প্রকাশ করছেন বা এই প্রকৃতির অন্য কাজ করেছিলেন।
দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ১২১(ক) ধারা মতে, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের ভেতরে বা বাইরে ১২১ ধারাবলে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ অনুষ্ঠান বা এর কোনো অংশবিশেষকে সার্বভৌমত্ব হতে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করে কিংবা অপরাধজনক বল প্রয়োগের হুমকি দ্বারা সরকারকে ভয়াভিভূত করার ষড়যন্ত্র করে।

দণ্ডবিধির ১৮৬০-এর ১২৪(ক) ধারা মতে, অনানুগত্য ও সর্বপ্রকারের শত্রুতার ভাব বোঝায়।
কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের এলাকার মধ্যে দণ্ডবিধির বিধানের পরিপন্থি কাজ, কার্যবিচ্যুতি বা কার্যবিরতি করেন, সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ২ ধারা অনুযায়ী শাস্তি পাবেন। দণ্ডবিধির ধারা ২ অনুযায়ী, এখানে প্রত্যেক ব্যক্তি বলতে বিদেশি নাগরিককেও বোঝায়। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩ ধারায় উল্লেখ আছে, বাংলাদেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধের জন্য যদি তা বাংলাদেশি আইনবলে বিচারযোগ্য হয়, দণ্ডবিধির বিধান অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তির বিচার এমনভাবে করা হবে, যেন তিনি অপরাধটি বাংলাদেশে করেছে [(বাংলাদেশ বনাম শমবন) ৩২ ডিএলআর(এডি)১৯৪]।
বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানকারী কোনো বাংলাদেশের নাগরিক বাংলাদেশের বাইরে যদি এমন কাজ করে, যা বাংলাদেশে অপরাধ বলে গণ্য হয়, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার করা যাবে।

বাংলাদেশের বাইরে সংঘটিতের অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার বাংলাদেশের আদালতের রয়েছে [(এমজি তাওয়াব বনাম রাষ্ট্র) ৩৪ ডিএলআর ৩৯০]; এবং এই আইনের অধীনে যে অপরাধ সংঘটিত হয়, সেই অপরাধের শাস্তি এই আইন অনুযায়ী হবে, অন্য কোনো প্রকারে নয়।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৯৯৮-এর ১৭৭ ধারা মতে, প্রত্যেকটি অপরাধ যে আদালতের স্থানীয় সীমার মধ্যে সংঘটিত হয়, সাধারণত সেই আদালত দ্বারা তার অনুসন্ধান ও বিচারকাজ হবে।

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১৭৯ ধারামতে, অপরাধ সংঘটনের স্থান বা তার ফলাফল দেখা দিয়েছে, তার ভিত্তিতে কোনো অপরাধ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হলে এ ধরনের অপরাধের অনুসন্ধান বা বিচার যে আদালতের এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ওই কাজ করা হয়েছে, সেই আদালতে অথবা আদালতের এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে তার ফলাফল দেখা দিয়েছে, সেই আদালতে হতে পারে।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৮১ ধারামতে, ঠক হওয়া অথবা ডাকাতের দলভুক্ত হওয়া, খুনসহ ডাকাতি, হেফাজত হতে পলায়ন করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা অপরাধী যে আদালতের স্থানীয় এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, তার অনুসন্ধান ও বিচার করতে পারবে উক্ত আদালতে হতে পারবে।

অপরাধজনক তছরূপ ও অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার যে, আদালতের স্থানীয় সীমার মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির কোনো অংশগ্রহণ করছে বা রাখছে অথবা অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে সেই আদালত অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের অনুসন্ধান ও বিচার করতে পারবে।
চুরির অপরাধ অথবা চুরি বা চোরাই মালের দখল সম্পর্কিত কোনো অপরাধের অনুসন্ধান বা বিচার যে আদালতের স্থানীয় এখতিয়ার-এর মধ্যে অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে অথবা চোরাইমাল দখলে রাখা হয়েছে অথবা কোনো ব্যক্তি চোরাইমাল বলে বিশ্বাস করবার কারণ থাকা সত্ত্বে তা গ্রহণ করছে বা দখলে রাখছে, সেখানে যেকোনো একটিতে স্থানীয় এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত অনুসন্ধান ও বিচার করতে পারবে।

যে এলাকা হতে অপহরণ ও অপবাহন করা হয়েছে বা তাকে প্রেরণ করা হয়েছে বা আটক বা গোপন রাখা হয়েছে সেই ক্ষেত্রে যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা তাকে প্রেরণ করা হয়েছে বা আটক বা গোপন যেখানে রাখা হয়েছে, সেই স্থানীয় এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত অনুসন্ধান ও বিচার করতে পারবে।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৮২ ধারা মতে- অপরাধের স্থান যেখানে অনিশ্চিত থাকে যে, কয়েকটি স্থানীয় এলাকার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেইক্ষেত্রে এইরূপ স্থানীয় এলাকায় যে কোনো একটিতে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত ইহার অনুসন্ধান ও বিচার চলবে।

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১৮৩ ধারা মতে- ভ্রমন কালে বা সমুদ্র যাত্রায় অপরাধীর দ্বারা সংঘটিত কোনো অপরাধের অনুসন্ধান বা বিচার, অথবা যে লোকের বিরুদ্ধে বা বস্তুর ক্ষেত্রে অপরাধ করা হয়েছে, সেই অপরাধী, লোক বা বস্তু যে আদালতের স্থানীয় এলাকার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করে, সেই আদালত কর্তৃক অনুসন্ধান বা বিচার করতে পারবে।
দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪ ধারা মতে- বাংলাদেশের নাগরিক বাংলাদেশের বাইরে সংঘটিত যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রেও, এই বিধানসমূহ প্রযোজ্য হবে। যেমন- বাংলাদেশে নিবন্ধিত যেকোনো জাহাজ কিংবা বিমানে আরোহী যে কোনো ব্যক্তি, উক্ত জাহাজ বা বিমানে যে স্থানেই থাকুক না কেন, তাতে সংঘটিত যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রেও এই বিধির বিধানসমূহ প্রযোজ্য হবে।
অন্যদিকে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৮৮ ধারা মতে- বাংলাদেশের বাহিরে কোনো স্থানে কোনো অপরাধ করে ; অথবা যেই ক্ষেত্রে কোনো লোক বাংলাদেশে রেজিষ্ট্রেশকৃত কোনো জাহাজ বা বিমানে তা যেখানে-ই থাকুন না কেন, কোনো অপরাধ করে; সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যেই স্থানে-ই তাকে পাওয়া যাবে সেই স্থানে অপরাধ সংঘটন করেছে বলে ধরে নিয়ে সেই মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

তবে শর্ত থাকে যে, এ অধ্যায়ের পূর্ববর্তী কোনো ধারায় যা-ই বলা থাকুক না কেন, সরকারের অনুমতি ছাড়া উক্তরূপ কোনো অভিযোগ সম্পর্কে ইনকোয়ারী বা অনুসন্ধান বাংলাদেশ হতে পারবে না। অর্থ্যাৎ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ ধারায় বিচার করতে হলে সরকারের অনুমোদন লাগবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ইন্ডিয়ার বন্দিবিনিময় চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার মধ্যে ২০১৩ সালে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তা ২০১৬ সালে সংশোধিত হয়। এ চুক্তি দুই দেশের মধ্যে পলাতক আসামিদের দ্রুত ও সহজে বিনিময়ের জন্য করা হয়েছে।

এ চুক্তির আওতায় দুই দেশ ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন বা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিনিময় করার সুযোগ পায়।
ইন্ডিয়ার ১৯৬২ সালের প্রত্যর্পণ আইন বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির বেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি নথি বা রেফারেন্স হতে পারে। কারণ শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে ২০১৩ সালে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ইন্ডিয়ার ১৯৬২ সালের প্রত্যর্পণ আইনের ১২(২) ধারার প্রাসঙ্গিক অংশগুলোর সমপ্রসারণ করেছে।
বাংলাদেশ সরকার এই চুক্তির আওতায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের সম্মুখীন করতে ফেরত চায়।

এ জন্য তাকে ইন্ডিয়া থেকে ফিরিয়ে আনতে এবং বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ইন্ডিয়ার কাছে ফেরত চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা হয়েছে। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা উল্লেখযোগ্য কিছু দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্ত দেশের একাধিক সংস্থারও তদন্তের সম্মুখীন।
১৯৬২ সালের প্রত্যর্পণ আইনের ৩১ (১) ধারায় এই রাজনৈতিক ব্যতিক্রমের বিধান অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সুযোগ নেই।

কারণ ২০১৩ সালের চুক্তির ৬ (২) অনুচ্ছেদে, এ ধরনের ব্যতিক্রমের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে হত্যা এবং অন্যান্য অপরাধকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়, রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে নয়।
২০১৩ সালের চুক্তির কতগুলো ধারা আছেÑ যা অনুযায়ী ইন্ডিয়া শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে বাধ্য। চুক্তির ১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়া শুধু সেসব ব্যক্তিদেরই নিজ ভূখন্ড থেকে প্রত্যর্পণ করবে না যারা প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধ (বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার আইনের অধীনে কমপক্ষে এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ) করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এটি সেসব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে যাদের বিরুদ্ধে অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অর্থাৎ বাংলাদেশের আদালতে দোষী প্রমাণিত না হলেও শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করা যেতে পারে। অপরাধের জন্য তাকে অভিযুক্ত করাই ইন্ডিয়া থেকে তার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য যথেষ্ট।
যখন বাংলাদেশের বাইরে অপরাধ সংঘটিত হয়, তাখন সংঘটিত অপরাধের স্থানে কোনো বিচার কাজ চলমান বা বিচার হয়েছে কিনা সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া দরকার।

কারণ ফৌজদারি অপরাধে মূল ভিত্তি হচ্ছে ‘একই অপরাধের জন্য একই ব্যক্তিকে দুই বার বিচার করা এবং শাস্তি দেওয়া যাবে না’। তা কমন ল’ লিগ্যাল সিস্টেমে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, ‘এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারিতে সোপর্দ ও দণ্ডিত করা যাইবে না’ এবং ৩৫ (৩) অনুচ্ছেদ মতে, ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে।
ডাক্তার তসলিমা নাসরিন বনাম মো. নুরুল আলম এবং অন্যান্য মামলার রায়ে বলা হয়Ñ কথিত অপরাধটি ইন্ডিয়ায় সংঘটিত হওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ ধারার অনুশর্তের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের অনুমোদন ছাড়া উক্ত অপরাধের বিচারে অগ্রসর হওয়া যাবে না এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারায় তার ক্ষেত্রে পাওয়া অনুমোদন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ ধারার অনুশর্তের শর্ত রহিত করতে পারেন না।

তবে বিশেষ আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডবিধি অনুযায়ী অভিযোগ করতে বাধাগ্রস্ত করে না। কোনো অপরাধ বিশেষ আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় বা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত আবার দণ্ডবিধি অনুযায়ীও দণ্ডনীয় বা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলে সেক্ষেত্রে দণ্ডবিধি ১৮৬০ অনুযায়ী বিশেষ আইনের বিধান সাপেক্ষে দণ্ডবিধির বিধান অনুযায়ী বিচার ও দণ্ড প্রদান করা যাবে [এ আই আর ১৯৩৭ (এল) ৭১৪]।

তবে আরও শর্ত থাকে যে, এ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো কাজধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে অপরাধটি যদি বাংলাদেশে করা হতো তাহলে যদি উক্ত কাজধারা একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই অপরাধের পরবর্তী কাজধারা জন্য জন্য প্রতিবন্ধক হতো, তা হলে উক্ত কাজধারা বাংলাদেশের বাহিরে কোনো স্থানে কৃত একই অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিদেশি অপরাধী প্রত্যার্পণ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রতিবন্ধক হবে।

লেখক: কলাম লেখক

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ডলার সংকট-লোডশেডিং,গাজীপুরে বন্ধ হয়ে গেল ৪০ বছরের পুরোনো কারখানা

ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় অপরাধের বিচার পদ্ধতি

আপডেট সময় : ০৪:২৪:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫

আবদুল মালেক ভূঁঞা : কোনো অন্যায় বা নীতিগর্হিত কাজ কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সংঘটিত করলে কিংবা অবহেলাবশত সংঘটিত করে থাকলে তাকে ওই কাজের জন্য দায়ী হতে হয়। স্বেচ্ছায় সংঘটিত কাজের বেলায় ধরে নেওয়া হয়, অন্যায়কারীর একটি অসৎ উদ্দেশ্য বা দোষী মন ছিল। অপরাধ প্রস্তুতির সঙ্গে অভিপ্রায় থাকলে এবং তার অনুসরণে কোনো কাজ সংঘটিত হলে তা অপরাধ সংগঠনের জন্য যথোপযুক্ত মর্মে পরিগণিত হবে। তাছাড়া কমন ল লিগ্যাল সিস্টেমে বলা হয়েছে: ওমহড়ৎধহপব ড়ভ ষধি রং হড় বীপঁংব। অর্থাৎ আইন জানি না বললেই ক্ষমা পাওয়া যায় না।

যেসব কাজের দ্বারা সাধারণত সমাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয়, সেসব কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে।
ফৌজদারি মামলায় রাষ্ট্র বাদী হওয়ার কারণ সর্বসাধারণের নিরাপত্তা এ আইনের কার্যবিধি। ফৌজদারি আইনে কোনো ব্যক্তিকে তার অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় নেই। ফৌজদারি মামলা ফরিয়াদির সুবিধামতো যে কোনো সময়েই দায়ের করা যায়। সময়ের কালক্ষেপণ সার্বভৌম ক্ষমতাকে খর্ব করে না।

এরূপ প্রতিবন্ধকতা কেবল দেওয়ানি মোকদ্দমার ক্ষেত্রেই রয়েছে।
১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪নং ধারার ১নং উপধারার (ণ) দফায় অপরাধ শব্দের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যার সন্ধান পাওয়া যায়। এই ধারায় বর্ণিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী, অপরাধ বলতে সেসব কাজ করা বা করা থেকে বিরত থাকাকে বোঝায়Ñ যা করলে বা করা থেকে বিরত থাকলে বর্তমান প্রচলিত কোনো আইনের দ্বারা দণ্ডনীয় হবে।

যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারেÑ এমন ধরনের অপরাধগুলো রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ বলা হয়।
সাধারণ অর্থে রাষ্ট্রদ্রোহ বলতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে উত্তেজক করে তোলা বা উত্তেজক করার প্রচেষ্টা করাকে বোঝায়। রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধের উপাদান হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কোনো কিছু বলছেন বা লিখেছেন বা চিহ্ন দিয়েছেন বা কল্পমূর্তি প্রকাশ করছেন বা এই প্রকৃতির অন্য কাজ করেছিলেন।
দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ১২১(ক) ধারা মতে, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের ভেতরে বা বাইরে ১২১ ধারাবলে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ অনুষ্ঠান বা এর কোনো অংশবিশেষকে সার্বভৌমত্ব হতে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করে কিংবা অপরাধজনক বল প্রয়োগের হুমকি দ্বারা সরকারকে ভয়াভিভূত করার ষড়যন্ত্র করে।

দণ্ডবিধির ১৮৬০-এর ১২৪(ক) ধারা মতে, অনানুগত্য ও সর্বপ্রকারের শত্রুতার ভাব বোঝায়।
কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের এলাকার মধ্যে দণ্ডবিধির বিধানের পরিপন্থি কাজ, কার্যবিচ্যুতি বা কার্যবিরতি করেন, সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ২ ধারা অনুযায়ী শাস্তি পাবেন। দণ্ডবিধির ধারা ২ অনুযায়ী, এখানে প্রত্যেক ব্যক্তি বলতে বিদেশি নাগরিককেও বোঝায়। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩ ধারায় উল্লেখ আছে, বাংলাদেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধের জন্য যদি তা বাংলাদেশি আইনবলে বিচারযোগ্য হয়, দণ্ডবিধির বিধান অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তির বিচার এমনভাবে করা হবে, যেন তিনি অপরাধটি বাংলাদেশে করেছে [(বাংলাদেশ বনাম শমবন) ৩২ ডিএলআর(এডি)১৯৪]।
বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানকারী কোনো বাংলাদেশের নাগরিক বাংলাদেশের বাইরে যদি এমন কাজ করে, যা বাংলাদেশে অপরাধ বলে গণ্য হয়, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার করা যাবে।

বাংলাদেশের বাইরে সংঘটিতের অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার বাংলাদেশের আদালতের রয়েছে [(এমজি তাওয়াব বনাম রাষ্ট্র) ৩৪ ডিএলআর ৩৯০]; এবং এই আইনের অধীনে যে অপরাধ সংঘটিত হয়, সেই অপরাধের শাস্তি এই আইন অনুযায়ী হবে, অন্য কোনো প্রকারে নয়।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৯৯৮-এর ১৭৭ ধারা মতে, প্রত্যেকটি অপরাধ যে আদালতের স্থানীয় সীমার মধ্যে সংঘটিত হয়, সাধারণত সেই আদালত দ্বারা তার অনুসন্ধান ও বিচারকাজ হবে।

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১৭৯ ধারামতে, অপরাধ সংঘটনের স্থান বা তার ফলাফল দেখা দিয়েছে, তার ভিত্তিতে কোনো অপরাধ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হলে এ ধরনের অপরাধের অনুসন্ধান বা বিচার যে আদালতের এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ওই কাজ করা হয়েছে, সেই আদালতে অথবা আদালতের এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে তার ফলাফল দেখা দিয়েছে, সেই আদালতে হতে পারে।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৮১ ধারামতে, ঠক হওয়া অথবা ডাকাতের দলভুক্ত হওয়া, খুনসহ ডাকাতি, হেফাজত হতে পলায়ন করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা অপরাধী যে আদালতের স্থানীয় এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, তার অনুসন্ধান ও বিচার করতে পারবে উক্ত আদালতে হতে পারবে।

অপরাধজনক তছরূপ ও অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার যে, আদালতের স্থানীয় সীমার মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির কোনো অংশগ্রহণ করছে বা রাখছে অথবা অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে সেই আদালত অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের অনুসন্ধান ও বিচার করতে পারবে।
চুরির অপরাধ অথবা চুরি বা চোরাই মালের দখল সম্পর্কিত কোনো অপরাধের অনুসন্ধান বা বিচার যে আদালতের স্থানীয় এখতিয়ার-এর মধ্যে অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে অথবা চোরাইমাল দখলে রাখা হয়েছে অথবা কোনো ব্যক্তি চোরাইমাল বলে বিশ্বাস করবার কারণ থাকা সত্ত্বে তা গ্রহণ করছে বা দখলে রাখছে, সেখানে যেকোনো একটিতে স্থানীয় এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত অনুসন্ধান ও বিচার করতে পারবে।

যে এলাকা হতে অপহরণ ও অপবাহন করা হয়েছে বা তাকে প্রেরণ করা হয়েছে বা আটক বা গোপন রাখা হয়েছে সেই ক্ষেত্রে যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা তাকে প্রেরণ করা হয়েছে বা আটক বা গোপন যেখানে রাখা হয়েছে, সেই স্থানীয় এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত অনুসন্ধান ও বিচার করতে পারবে।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৮২ ধারা মতে- অপরাধের স্থান যেখানে অনিশ্চিত থাকে যে, কয়েকটি স্থানীয় এলাকার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেইক্ষেত্রে এইরূপ স্থানীয় এলাকায় যে কোনো একটিতে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত ইহার অনুসন্ধান ও বিচার চলবে।

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১৮৩ ধারা মতে- ভ্রমন কালে বা সমুদ্র যাত্রায় অপরাধীর দ্বারা সংঘটিত কোনো অপরাধের অনুসন্ধান বা বিচার, অথবা যে লোকের বিরুদ্ধে বা বস্তুর ক্ষেত্রে অপরাধ করা হয়েছে, সেই অপরাধী, লোক বা বস্তু যে আদালতের স্থানীয় এলাকার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করে, সেই আদালত কর্তৃক অনুসন্ধান বা বিচার করতে পারবে।
দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪ ধারা মতে- বাংলাদেশের নাগরিক বাংলাদেশের বাইরে সংঘটিত যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রেও, এই বিধানসমূহ প্রযোজ্য হবে। যেমন- বাংলাদেশে নিবন্ধিত যেকোনো জাহাজ কিংবা বিমানে আরোহী যে কোনো ব্যক্তি, উক্ত জাহাজ বা বিমানে যে স্থানেই থাকুক না কেন, তাতে সংঘটিত যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রেও এই বিধির বিধানসমূহ প্রযোজ্য হবে।
অন্যদিকে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৮৮ ধারা মতে- বাংলাদেশের বাহিরে কোনো স্থানে কোনো অপরাধ করে ; অথবা যেই ক্ষেত্রে কোনো লোক বাংলাদেশে রেজিষ্ট্রেশকৃত কোনো জাহাজ বা বিমানে তা যেখানে-ই থাকুন না কেন, কোনো অপরাধ করে; সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যেই স্থানে-ই তাকে পাওয়া যাবে সেই স্থানে অপরাধ সংঘটন করেছে বলে ধরে নিয়ে সেই মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

তবে শর্ত থাকে যে, এ অধ্যায়ের পূর্ববর্তী কোনো ধারায় যা-ই বলা থাকুক না কেন, সরকারের অনুমতি ছাড়া উক্তরূপ কোনো অভিযোগ সম্পর্কে ইনকোয়ারী বা অনুসন্ধান বাংলাদেশ হতে পারবে না। অর্থ্যাৎ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ ধারায় বিচার করতে হলে সরকারের অনুমোদন লাগবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ইন্ডিয়ার বন্দিবিনিময় চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার মধ্যে ২০১৩ সালে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তা ২০১৬ সালে সংশোধিত হয়। এ চুক্তি দুই দেশের মধ্যে পলাতক আসামিদের দ্রুত ও সহজে বিনিময়ের জন্য করা হয়েছে।

এ চুক্তির আওতায় দুই দেশ ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন বা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিনিময় করার সুযোগ পায়।
ইন্ডিয়ার ১৯৬২ সালের প্রত্যর্পণ আইন বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির বেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি নথি বা রেফারেন্স হতে পারে। কারণ শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে ২০১৩ সালে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ইন্ডিয়ার ১৯৬২ সালের প্রত্যর্পণ আইনের ১২(২) ধারার প্রাসঙ্গিক অংশগুলোর সমপ্রসারণ করেছে।
বাংলাদেশ সরকার এই চুক্তির আওতায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের সম্মুখীন করতে ফেরত চায়।

এ জন্য তাকে ইন্ডিয়া থেকে ফিরিয়ে আনতে এবং বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ইন্ডিয়ার কাছে ফেরত চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা হয়েছে। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা উল্লেখযোগ্য কিছু দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্ত দেশের একাধিক সংস্থারও তদন্তের সম্মুখীন।
১৯৬২ সালের প্রত্যর্পণ আইনের ৩১ (১) ধারায় এই রাজনৈতিক ব্যতিক্রমের বিধান অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সুযোগ নেই।

কারণ ২০১৩ সালের চুক্তির ৬ (২) অনুচ্ছেদে, এ ধরনের ব্যতিক্রমের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে হত্যা এবং অন্যান্য অপরাধকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়, রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে নয়।
২০১৩ সালের চুক্তির কতগুলো ধারা আছেÑ যা অনুযায়ী ইন্ডিয়া শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে বাধ্য। চুক্তির ১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়া শুধু সেসব ব্যক্তিদেরই নিজ ভূখন্ড থেকে প্রত্যর্পণ করবে না যারা প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধ (বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার আইনের অধীনে কমপক্ষে এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ) করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এটি সেসব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে যাদের বিরুদ্ধে অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অর্থাৎ বাংলাদেশের আদালতে দোষী প্রমাণিত না হলেও শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করা যেতে পারে। অপরাধের জন্য তাকে অভিযুক্ত করাই ইন্ডিয়া থেকে তার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য যথেষ্ট।
যখন বাংলাদেশের বাইরে অপরাধ সংঘটিত হয়, তাখন সংঘটিত অপরাধের স্থানে কোনো বিচার কাজ চলমান বা বিচার হয়েছে কিনা সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া দরকার।

কারণ ফৌজদারি অপরাধে মূল ভিত্তি হচ্ছে ‘একই অপরাধের জন্য একই ব্যক্তিকে দুই বার বিচার করা এবং শাস্তি দেওয়া যাবে না’। তা কমন ল’ লিগ্যাল সিস্টেমে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, ‘এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারিতে সোপর্দ ও দণ্ডিত করা যাইবে না’ এবং ৩৫ (৩) অনুচ্ছেদ মতে, ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে।
ডাক্তার তসলিমা নাসরিন বনাম মো. নুরুল আলম এবং অন্যান্য মামলার রায়ে বলা হয়Ñ কথিত অপরাধটি ইন্ডিয়ায় সংঘটিত হওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ ধারার অনুশর্তের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের অনুমোদন ছাড়া উক্ত অপরাধের বিচারে অগ্রসর হওয়া যাবে না এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারায় তার ক্ষেত্রে পাওয়া অনুমোদন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ ধারার অনুশর্তের শর্ত রহিত করতে পারেন না।

তবে বিশেষ আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডবিধি অনুযায়ী অভিযোগ করতে বাধাগ্রস্ত করে না। কোনো অপরাধ বিশেষ আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় বা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত আবার দণ্ডবিধি অনুযায়ীও দণ্ডনীয় বা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলে সেক্ষেত্রে দণ্ডবিধি ১৮৬০ অনুযায়ী বিশেষ আইনের বিধান সাপেক্ষে দণ্ডবিধির বিধান অনুযায়ী বিচার ও দণ্ড প্রদান করা যাবে [এ আই আর ১৯৩৭ (এল) ৭১৪]।

তবে আরও শর্ত থাকে যে, এ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো কাজধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে অপরাধটি যদি বাংলাদেশে করা হতো তাহলে যদি উক্ত কাজধারা একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই অপরাধের পরবর্তী কাজধারা জন্য জন্য প্রতিবন্ধক হতো, তা হলে উক্ত কাজধারা বাংলাদেশের বাহিরে কোনো স্থানে কৃত একই অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিদেশি অপরাধী প্রত্যার্পণ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রতিবন্ধক হবে।

লেখক: কলাম লেখক