প্রত্যাশা ডেস্ক : আবারও ফেইসবুক তথা মেটার বিরুদ্ধে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফ্রান্সেস হাউগেন। এবার মেটাকে আইনি চাপে ফেলতে আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন কোম্পানির এই সাবেক কর্মী।
গত বছরেই ফেইসবুকের অভ্যন্তরীণ গবেষণার গোপন নথিপত্র ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মটিকে বিপাকে ফেলেছিলেন হাউগেন; ঘটনা গড়িয়েছিল মার্কিন সিনেট পর্যন্ত। ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রাম মুনাফার লোভে সেবাগ্রাহকদের ওপর নিজস্ব প্ল্যাটফর্মের নেতিবাচক প্রভাব জেনেশুনে অগ্রাহ্য করছে এবং বিতর্ক এড়াতে নিজস্ব গবেষণার ফলাফলও চেপে যাচ্ছে বলে তথ্যপ্রমাণ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি শিল্পের পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা ও তৎপরতায় মেটার অনৈতিক ব্যবসা কৌশলের বিতর্ক অনেকটাই চাপা পড়ে গেলেও হাল ছাড়েননি হাউগেন। সম্প্রতি রাজনীতি বিষয়ক সাময়িকী পলিটিকো জানিয়েছে, নতুন একটি অলাভজনক সংস্থা গঠনের চেষ্টা করছেন হাউগেন; সংস্থাটিকে ‘বিয়ন্ড দ্য স্ক্রিন’ নামে ডাকতে চান তিনি।
নতুন প্রকল্পে হাউগেনের সঙ্গে আরও দুজন আছে বলে জানিয়েছে পলিটিকো। প্রকল্পের জন্য হাউগেন প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন এবং কিছু তহবিল সম্ভবত এরইমধ্যে তার হাতে এসেছে বলে উঠে এসেছে পলিটিকোর প্রতিবেদনে।
পলিটিকো জানিয়েছে, হাউগেনের ‘বিয়ন্ড দ্য স্ক্রিন’-এর মূল লক্ষ্য তিনটি। প্রথমত, ভবিষ্যতে ফেইসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর বিপরীতে আদালতে লড়াইয়ের জন্য আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দিতে চান তিনি। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগের আগে কোম্পানি সামাজিক দায়িত্ববোধেরভিত্তিতে কাজ করছে কি না, বিনিয়োগকারীরা যেন সে বিষয়টি যাচাই করে দেখতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করা, এবং সর্বশেষ, গবেষক ও বাজারনিয়ন্ত্রকদের সামনে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ কার্যপ্রণালীর দৃশ্যপট তুলে ধরতে চান তিনি।
অল্প কথায় বললে, আইনজীবী, গবেষক এবং বিনিয়োগকারীদের সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর নেতিবাচক ব্যবসায়িক কৌশল পরিবর্তনে সহযোগিতা করতে চান হাউগেন।
সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে ক্লাস-অ্যাকশন মামলা করার সময় কোন বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে, হাউগেন ‘বিয়ন্ড দ্য স্ক্রিন’-এর মাধ্যমে আইনজীবীদের সে বিষয়গুলোই শেখাতে চান বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ। পাশাপাশি, তিনি এমন একটি মানদ- প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন, যার ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীরা তুলনা বিচার করতে পারবেন যে কোম্পানিটি তাদের সেবাগ্রাহকদের নিরাপদ রাখতে কতোটা কার্যকর।
ভার্জ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে একটি ‘মক সোশাল নেটওয়ার্ক’ বানানোর লক্ষ্য নিয়েও কাজ করছেন হাউগেন, যার মাধ্যমে বাজারের প্রচলিত প্ল্যাটফর্ম ও তাদের ব্যবহৃত অ্যালগরিদমগুলো কীভাবে কাজ করে তা আদালত ও জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হবে।
গবেষকদের জন্য এই প্ল্যাটফর্মটি কাজে আসবে বলে মন্তব্য করেছে ভার্জ। যে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ, তাদের সরাসরি দৃশ্যপটে না এনেই অ্যালগরিদম ও প্ল্যাটফর্ম নিয়ে গবেষণা চালানোর সুযোগ পাবেন গবেষকরা। গত বছরে ফ্যাশন সাময়িকী ভোগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একই পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন হাউগেন। নিজের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে হাউগেন এমন একটি বিশ্বের স্বপ্ন দেখছেন যেখানে ‘বিয়ন্ড দ্য স্ক্রিন’-এর মতো সংস্থার কোনো প্রয়োজন থাকবে না। পলিটিকোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাউগেন বলেছেন, “আমার সবচেয়ে বড় আশা হচ্ছে এমন একটা দিন আসবে যে আমি আর প্রাসঙ্গিক থাকবো না।” তবে, এমনটা শীঘ্রই হওয়ার সম্ভাবনাও নেহাতই কম। হাউগেন নিজেও স্বীকার করে নিয়েছেন যে বিশ্বে এমন দেশও আছে যেখানে ফেইসবুকই আদতে পুরো ইন্টারনেট। হাউগেন নিজে ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে আইন ও নীতিমালা পরিবর্তনের চেষ্টায় তৎপর থাকলেও, বিয়ন্ড দ্য স্ক্রিন পুরো বিশ্বের দিকে নজর দেবে-এমনটা চান তিনি।