ঢাকা ০৮:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

ফেসবুকে তথ্যগুজব বন্ধে নিতে হবে তিন পদক্ষেপ

  • আপডেট সময় : ১০:২১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ মে ২০২২
  • ৬৩ বার পড়া হয়েছে

তৌহিদুল হক : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করা বা মেরে ফেলা বা করোনার সময়েও নানাকেন্দ্রিক বিবাদ দেখেছি আমরা। বিশেষ করে রাজনৈতিক ঘটনাবলী বা প্রেক্ষাপট নিয়ে কিংবা ধর্ম অবমাননা, সাম্প্রদায়িকতার মতো বিষয়কে ঘিরে গুজব তৈরি করা হচ্ছে।
এই ব্যাপারগুলো বা পরিস্থিতিগুলো লক্ষ্য করলে বলা যেতে পারে— গুজবের অন্যতম মাধ্যম হলো সোশ্যাল মিডিয়া। বিশেষ করে ফেসবুক। এখন বিষয় হলো যারা এই কাজগুলো করছে তাদের মোটিভটা কি, তাদের উদ্দেশ্যটা কি?
চলতি সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যে সমস্ত ব্যক্তি সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত কিংবা চলচ্চিত্র বা শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত তাদেরকে পুঁজি করে মিথ্যা ঘটনা বা কোনো বানোয়াট ঘটনা সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে অনেকে লাইক, কমেন্ট বা ভিউয়ার্স বাড়ানোর একটা অপচেষ্টা আমরা লক্ষ্য করছি। অনেকেই সেটা করছেন। এই কারণে বহু আগে থেকে আমরা বলে আসছি যে, আমাদের সামাজিক যে আচরণ কিংবা মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ বা অন্তর্নিহিত যে শিষ্টাচার সেই জায়গায় আমাদের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। সামাজিক মাধ্যমগুলো সেখানে একটি অস্থির অবস্থা হিসেবে যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে ফেসবুক।
ফেসবুকে লাইক, কমেন্ট, ভিউয়ার্স এবং সেখান থেকেই ইউটিউবের ভিডিও বানিয়ে দেওয়া এখান থেকে উপার্জনের একটা রাস্তা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থাৎ যারা এই কাজগুলো করছে তারা এই ধরনের ঘটনাগুলোকে একটা উপার্জনের ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে। এই জায়গাটা কখন তৈরি হয়? বিশ্বের মানুষের মধ্যে সেটা একজন হোক বা বেশিসংখ্যকই হোক—ঘটনাগুলো যখন ঘটে, তখন বুঝতে হবে একজন ব্যক্তি আরেকজন ব্যক্তির কাছে কখনো উপার্জনের উৎস হিসেবে বিবেচ্য হচ্ছে। অথবা কখনো সহিংসতা সৃষ্টির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অথবা কখনো মজা করা বা ফান করার মাধ্যম হিসেবে ব্যক্তিকে গণ্য করা হচ্ছে।
এই তিনটি বৈশিষ্ট্য যখন কোনো একটি সমাজের মানুষের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় তখন যে অবস্থাটি প্রকাশ পায়— সেটি হচ্ছে ওই দেশের মানুষের যে সামাজিক পরিপক্বতা এবং আচরণগত যে স্থিরতা সেই জায়গাটা তৈরি না হওয়া। দুঃখজনকভাবে সেই জায়গা তৈরি করার কাজটিও আমাদের এখানে শুরু হয়নি। সেটির পেছনের কারণ হলো—সোশ্যাল মিডিয়াকেন্দ্রিক যে অপরাধ, এই অপরাধগুলোর বিচার এবং যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব। এর জন্য আমাদের এখানে কৌশলগত যে বিষয়, সেগুলোর যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আমরা সেগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়েও দেখছি না।
দ্বিতীয়ত, এই ধরনের গুজবের ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে মামলা হয়। কাউকে কাউকে হঠাৎ গ্রেপ্তার করা হয়। সেই জায়গা থেকেও কিন্তু আমরা এর কোনো চূড়ান্ত সুরাহা দেখি না। এই কারণেই গুজবকে পুঁজি করে যারা কিছু একটা করতে চায়—যাদের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে, যারা এখান থেকে উপার্জন করতে চায় অথবা নিজেকে জাহির করতে চায় তাদের দুঃসাহস বেড়ে যায়। তাদের এই ধরনের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার মনোবলটা আরও বেড়ে যায়।
এখন গুজবকে কেন্দ্র করে যে অবস্থা চলছে, যেমন সর্বশেষ হানিফ সংকেতের ঘটনা। এখানে তাকে ভিকটিম করা হলো। তার সামাজিক পরিস্থিতিকে বা অবস্থানকে একটু টালমাটাল করে দেওয়া বা একটু অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো। তার পরিবারকে একটা দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো। এগুলো কিন্তু এক ধরনের অপরাধ এবং তিনি যেই স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার কথা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, তাকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে প্রমাণ করতে হলো যে তিনি বেঁচে আছেন!
যারা তাকে নিয়ে এই অপরাধমূলক কাজটি করলো—সেই অপরাধের জায়গাটা বোঝার মতো সামাজিক শক্তি বা সেই উপলব্ধিবোধ এখন পর্যন্ত আমাদের রাষ্ট্রের মধ্যেও নেই। যারা এই সামাজিক মাধ্যমগুলো পরিচালনা করেন— তাদের মধ্যেও নেই, জনগণের মধ্যেও নেই। জনগণের কিছু অংশের মধ্যে আমরা মনে করি, সেই উপলব্ধিটা আছে। সেটা পরিসংখ্যানে বা তথ্য-উপাত্ত কৌশলে পরিমাপ করা কঠিন। অধিকাংশ মানুষ হুজুগে মাতাল এবং উচ্ছৃঙ্খল। অশিষ্ট আচরণেই বেশি আনন্দ পায় কিংবা সেই জায়গাটাতে মানুষের আগ্রহের জায়গাটা বেশি। এসব পরিস্থিতির কারণেই গুজবের সংখ্যা বা গুজবের একটা রমরমা অবস্থা আমরা লক্ষ্য করছি। আজকে বড় বড় ব্যক্তিরা সেই গুজবের শিকার হচ্ছেন বা ভিকটিম হচ্ছেন। এই অবস্থা এখনই যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়—একটা সময় দেখা যাবে, পুরো দেশ নিয়ে গুজব হবে। দেশের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করার জন্য গুজব হবে। কারণ এই ধরনের অপরাধগুলো আর ছোটখাটো বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। একটা সময় এটা বড় আকার ধারণ করবে। পরিস্থিতি কিন্তু সেদিকেই যাচ্ছে।
এখন আমাদের যেটা করণীয়—গুজব যারা ছড়াচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা এবং শুধু গ্রেপ্তারেই সীমাবদ্ধ নয় বরং দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারটা চূড়ান্ত করা। গুজবের কারণে কেমন হলো তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যে, এই গুজব করেছে, সে এভাবে করেছে, তার এই শাস্তি।
আর দ্বিতীয়টি হলো, গুজবের প্রতি আমাদের দেশের জনগণের বিশেষ করে তরুণদের গুজবকে কেন্দ্র করে বিকৃত মানসিকতার বা আচরণ বিচ্যুতিমূলক অবস্থার তৈরি হচ্ছে কেন সেটি নিয়ে আমাদের গবেষণা করা। আমাদের জ্ঞান অনুসন্ধান করে দেখা যেতে পারে যে, তারা কিভাবে বা কি করে এই মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হলো। তাহলে পরিস্থিতিটা বোঝা যাবে আসলে এই ধরনের গুজবকেন্দ্রিক প্রবণতার উৎসগুলো কোথায়?
তৃতীয় পদক্ষেপটি হলো, সামগ্রিকভাবে জনগণকে একটি আত্মমর্যাদাবোধ ও সম্মানজনক অবস্থার মধ্যে বেড়ে ওঠার অবস্থা তৈরি করা। এ জন্য রাষ্ট্রের যে দায় এবং দায়িত্ব, সেই দায়-দায়িত্বকে পরিবার এবং শিক্ষা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া। বস্তুত এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমেই রাষ্ট্রের দায় বা করণীয়কে অনুশীলন করার ক্ষেত্র বা পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এই অবস্থাগুলো বাড়তে থাকবে। সৃষ্ট এই অবস্থাকে অনেকে মনে করেন বা বলে থাকেন—এটি সমাধানযোগ্য নয়। আমি বলতে চাই—এটি সমাধানযোগ্য। তবে একদিনে যেমন জনগণের একটি অংশ গুজবকেন্দ্রিক অবস্থার মধ্যে আসেনি, তেমনি একদিনে এর সমাধানও হবে না। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এখানে অপেক্ষা মানে, কর্মসূচি পরিচালনা করা অব্যাহত রাখা। সরকার যদি উদ্যোগী হয় তাহলে এই সমস্যাগুলোর সমাধানও করা যাবে।
লেখক: সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ফেসবুকে তথ্যগুজব বন্ধে নিতে হবে তিন পদক্ষেপ

আপডেট সময় : ১০:২১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ মে ২০২২

তৌহিদুল হক : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করা বা মেরে ফেলা বা করোনার সময়েও নানাকেন্দ্রিক বিবাদ দেখেছি আমরা। বিশেষ করে রাজনৈতিক ঘটনাবলী বা প্রেক্ষাপট নিয়ে কিংবা ধর্ম অবমাননা, সাম্প্রদায়িকতার মতো বিষয়কে ঘিরে গুজব তৈরি করা হচ্ছে।
এই ব্যাপারগুলো বা পরিস্থিতিগুলো লক্ষ্য করলে বলা যেতে পারে— গুজবের অন্যতম মাধ্যম হলো সোশ্যাল মিডিয়া। বিশেষ করে ফেসবুক। এখন বিষয় হলো যারা এই কাজগুলো করছে তাদের মোটিভটা কি, তাদের উদ্দেশ্যটা কি?
চলতি সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যে সমস্ত ব্যক্তি সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত কিংবা চলচ্চিত্র বা শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত তাদেরকে পুঁজি করে মিথ্যা ঘটনা বা কোনো বানোয়াট ঘটনা সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে অনেকে লাইক, কমেন্ট বা ভিউয়ার্স বাড়ানোর একটা অপচেষ্টা আমরা লক্ষ্য করছি। অনেকেই সেটা করছেন। এই কারণে বহু আগে থেকে আমরা বলে আসছি যে, আমাদের সামাজিক যে আচরণ কিংবা মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ বা অন্তর্নিহিত যে শিষ্টাচার সেই জায়গায় আমাদের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। সামাজিক মাধ্যমগুলো সেখানে একটি অস্থির অবস্থা হিসেবে যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে ফেসবুক।
ফেসবুকে লাইক, কমেন্ট, ভিউয়ার্স এবং সেখান থেকেই ইউটিউবের ভিডিও বানিয়ে দেওয়া এখান থেকে উপার্জনের একটা রাস্তা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থাৎ যারা এই কাজগুলো করছে তারা এই ধরনের ঘটনাগুলোকে একটা উপার্জনের ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে। এই জায়গাটা কখন তৈরি হয়? বিশ্বের মানুষের মধ্যে সেটা একজন হোক বা বেশিসংখ্যকই হোক—ঘটনাগুলো যখন ঘটে, তখন বুঝতে হবে একজন ব্যক্তি আরেকজন ব্যক্তির কাছে কখনো উপার্জনের উৎস হিসেবে বিবেচ্য হচ্ছে। অথবা কখনো সহিংসতা সৃষ্টির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অথবা কখনো মজা করা বা ফান করার মাধ্যম হিসেবে ব্যক্তিকে গণ্য করা হচ্ছে।
এই তিনটি বৈশিষ্ট্য যখন কোনো একটি সমাজের মানুষের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় তখন যে অবস্থাটি প্রকাশ পায়— সেটি হচ্ছে ওই দেশের মানুষের যে সামাজিক পরিপক্বতা এবং আচরণগত যে স্থিরতা সেই জায়গাটা তৈরি না হওয়া। দুঃখজনকভাবে সেই জায়গা তৈরি করার কাজটিও আমাদের এখানে শুরু হয়নি। সেটির পেছনের কারণ হলো—সোশ্যাল মিডিয়াকেন্দ্রিক যে অপরাধ, এই অপরাধগুলোর বিচার এবং যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব। এর জন্য আমাদের এখানে কৌশলগত যে বিষয়, সেগুলোর যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আমরা সেগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়েও দেখছি না।
দ্বিতীয়ত, এই ধরনের গুজবের ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে মামলা হয়। কাউকে কাউকে হঠাৎ গ্রেপ্তার করা হয়। সেই জায়গা থেকেও কিন্তু আমরা এর কোনো চূড়ান্ত সুরাহা দেখি না। এই কারণেই গুজবকে পুঁজি করে যারা কিছু একটা করতে চায়—যাদের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে, যারা এখান থেকে উপার্জন করতে চায় অথবা নিজেকে জাহির করতে চায় তাদের দুঃসাহস বেড়ে যায়। তাদের এই ধরনের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার মনোবলটা আরও বেড়ে যায়।
এখন গুজবকে কেন্দ্র করে যে অবস্থা চলছে, যেমন সর্বশেষ হানিফ সংকেতের ঘটনা। এখানে তাকে ভিকটিম করা হলো। তার সামাজিক পরিস্থিতিকে বা অবস্থানকে একটু টালমাটাল করে দেওয়া বা একটু অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো। তার পরিবারকে একটা দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো। এগুলো কিন্তু এক ধরনের অপরাধ এবং তিনি যেই স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার কথা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, তাকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে প্রমাণ করতে হলো যে তিনি বেঁচে আছেন!
যারা তাকে নিয়ে এই অপরাধমূলক কাজটি করলো—সেই অপরাধের জায়গাটা বোঝার মতো সামাজিক শক্তি বা সেই উপলব্ধিবোধ এখন পর্যন্ত আমাদের রাষ্ট্রের মধ্যেও নেই। যারা এই সামাজিক মাধ্যমগুলো পরিচালনা করেন— তাদের মধ্যেও নেই, জনগণের মধ্যেও নেই। জনগণের কিছু অংশের মধ্যে আমরা মনে করি, সেই উপলব্ধিটা আছে। সেটা পরিসংখ্যানে বা তথ্য-উপাত্ত কৌশলে পরিমাপ করা কঠিন। অধিকাংশ মানুষ হুজুগে মাতাল এবং উচ্ছৃঙ্খল। অশিষ্ট আচরণেই বেশি আনন্দ পায় কিংবা সেই জায়গাটাতে মানুষের আগ্রহের জায়গাটা বেশি। এসব পরিস্থিতির কারণেই গুজবের সংখ্যা বা গুজবের একটা রমরমা অবস্থা আমরা লক্ষ্য করছি। আজকে বড় বড় ব্যক্তিরা সেই গুজবের শিকার হচ্ছেন বা ভিকটিম হচ্ছেন। এই অবস্থা এখনই যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়—একটা সময় দেখা যাবে, পুরো দেশ নিয়ে গুজব হবে। দেশের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করার জন্য গুজব হবে। কারণ এই ধরনের অপরাধগুলো আর ছোটখাটো বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। একটা সময় এটা বড় আকার ধারণ করবে। পরিস্থিতি কিন্তু সেদিকেই যাচ্ছে।
এখন আমাদের যেটা করণীয়—গুজব যারা ছড়াচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা এবং শুধু গ্রেপ্তারেই সীমাবদ্ধ নয় বরং দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারটা চূড়ান্ত করা। গুজবের কারণে কেমন হলো তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যে, এই গুজব করেছে, সে এভাবে করেছে, তার এই শাস্তি।
আর দ্বিতীয়টি হলো, গুজবের প্রতি আমাদের দেশের জনগণের বিশেষ করে তরুণদের গুজবকে কেন্দ্র করে বিকৃত মানসিকতার বা আচরণ বিচ্যুতিমূলক অবস্থার তৈরি হচ্ছে কেন সেটি নিয়ে আমাদের গবেষণা করা। আমাদের জ্ঞান অনুসন্ধান করে দেখা যেতে পারে যে, তারা কিভাবে বা কি করে এই মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হলো। তাহলে পরিস্থিতিটা বোঝা যাবে আসলে এই ধরনের গুজবকেন্দ্রিক প্রবণতার উৎসগুলো কোথায়?
তৃতীয় পদক্ষেপটি হলো, সামগ্রিকভাবে জনগণকে একটি আত্মমর্যাদাবোধ ও সম্মানজনক অবস্থার মধ্যে বেড়ে ওঠার অবস্থা তৈরি করা। এ জন্য রাষ্ট্রের যে দায় এবং দায়িত্ব, সেই দায়-দায়িত্বকে পরিবার এবং শিক্ষা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া। বস্তুত এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমেই রাষ্ট্রের দায় বা করণীয়কে অনুশীলন করার ক্ষেত্র বা পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এই অবস্থাগুলো বাড়তে থাকবে। সৃষ্ট এই অবস্থাকে অনেকে মনে করেন বা বলে থাকেন—এটি সমাধানযোগ্য নয়। আমি বলতে চাই—এটি সমাধানযোগ্য। তবে একদিনে যেমন জনগণের একটি অংশ গুজবকেন্দ্রিক অবস্থার মধ্যে আসেনি, তেমনি একদিনে এর সমাধানও হবে না। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এখানে অপেক্ষা মানে, কর্মসূচি পরিচালনা করা অব্যাহত রাখা। সরকার যদি উদ্যোগী হয় তাহলে এই সমস্যাগুলোর সমাধানও করা যাবে।
লেখক: সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়