ঢাকা ০৬:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

ফেসবুকের অফিস ক্যাম্পাস স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্ষুদ্র একটি শহর

  • আপডেট সময় : ০৪:৪৯:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
  • ৬১ বার পড়া হয়েছে

লাইফস্টাইল ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বে এরিয়ার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাস বেশ বিস্তৃত আর কর্মীদের বিভিন্ন সুবিধাও দেয়। ১ হ্যাকার ওয়েতে অবস্থিত ফেসবুকের মেনলো পার্ক ক্যাম্পাস ওই রকমই এক জায়গা, এক কথায় দারুণ। ভেতরের ব্যবস্থা দেখলে একটা কথাই মনে হবে, এটা যেন একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্ষুদ্র জগৎ। সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরের ধারে ২৫০ একরের বেশি জায়গা নিয়ে করা এই ক্যাম্পাসে ৩০টি ভবন। অফিসের চেয়ে একে ছোটখাটো একটা শহর বললেও ভুল হবে না।

তবে ফেসবুক ‘শহর’ তকমাটি এড়িয়ে চলে। ক্যাম্পাসটি চার ভাগে বিভক্ত এবং এখানে কয়েক হাজার কর্মী কাজ করেন। ২১ বছরে পা দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকটি কর্মক্ষেত্র আছে দুনিয়াজুড়ে। তার মধ্যে এই জায়গাটির বেশ সুখ্যাতি।

ক্যাম্পাসের দুটি প্রধান ভবন হলো ‘এমপিকে ২০’ ও ‘এমপিকে ২১’-এর নকশা করেছেন বিখ্যাত কানাডীয়-মার্কিন স্থপতি ও ডিজাইনার ফ্র্যাংক গেহরি। ফেসবুকের সদর দপ্তরটি স্টার্টআপ সংস্কৃতির সংগঠিত রূপটাকেই যেন তুলে ধরেছে। নির্মাণের সময় এমপিকে ২০ ছিল ৪৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের, বলতে গেলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোলামেলা অফিসই ছিল। ২৪ ফুট উঁচু সিলিংয়ের জায়গাটি ছিল বিশাল গুদামের মতো। ২ হাজার ৮০০ কর্মীর জন্য যথেষ্ট। কনফারেন্স রুম, কাজের জায়গা, রেস্তোরাঁ ও ক্যাফের মতো জায়গাগুলোকে ছোট ছোট কাঠামো দিয়েই বানানো। ফেসবুকের এই জায়গাটিতে এলে আধুনিক গ্রামের একটা অনুভূতি পাওয়া যায়।

২০১৫ সালে মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুকে এক পোস্টে জানান, এমপিকে ২০-এর লক্ষ্য ছিল ফেসবুকের প্রকৌশলী দলগুলো যেন একসঙ্গে কাজ করতে পারে এবং একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধারণা যেন ভাগাভাগি করে নিতে পারে। এই চিন্তা থেকেই নিখুঁত একটা স্থান তৈরি করতে চেয়েছিলেন। ফেসবুকের ওকুলাস ভিআর টিমের একজন কর্মী যেন হোয়াটসঅ্যাপ টিমের একজনের সঙ্গে সহজেই কাজের জায়গা ভাগ করে নিতে পারেন। অফিসের কর্মীরা যেন চলাফেরা বেশি করেন, ডিজাইনে সে বিষয়টিও প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ, এক জায়গায় বসে বসে কাজ করলে ভিন্ন ধারা বা বিপ্লবী ধারণার জন্ম হয় না। কর্মীরা চাইলে তাদের ডেস্ক রং করে বা আসবাব এদিক–ওদিক সরাতেও পারেন। এমনকি একটি পুরোনো আলমারিও আছে, যোকে একটা আর্কেডে রূপান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে ভিআর গেম, ডান্স ডান্স রেভলিউশনের মতো ক্ল্যাসিক গেম খেলার ব্যবস্থা আছে।

ভবনটির নকশা বেশ সহজ ও সাধারণ: মোট কথা, ভবনটির নকশা সহজ ও সাধারণ। স্থপতি চেষ্টা করেছেন ভবনটিতে যেন শুধু মৌলিক ও অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যগুলো থাকে। এ কারণে নকশা থেকে শুরু করে ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করতে তিন বছরের বেশি সময় লাগেনি।

স্থাপত্য সমালোচক ক্রিস্টোফার হার্থন অবশ্য খুব একটা ইতিবাচক ব্যাখ্যা দেননি। তিনি বলেছিলেন, রংহীন ইস্পাতের বিম, ঝুলে থাকা নানা ধরনের তারের মধ্যে কর্মচারীদের আধা লুকানো মাথা বের হয়ে আছে বড় বড় মনিটরের পেছন থেকে। জাকারবার্গ অবশ্য এই নকশার পেছনের তত্ত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ‘ভবনটির নকশা বেশ সহজ। অভিনব নয়, তবে এর নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। আমরা চেয়েছিলাম, আমাদের স্থানটি যেন চলমান কাজের মতো মনে হয়। কর্মীরা যখন আমাদের ভবনে ঢুকবেন, আমরা চাই তিনি যেন অনুভব করেন যে বিশ্বকে সংযুক্ত করার জন্য আমাদের কতা কাজ বাকি আছে এখনো।’

‘দ্য বোল’ নামে পরিচিত: এমপিকে ২০ ও এমপিকে ২১ ভবন দুটিকে যুক্ত করা হয়েছে ছাদে বসার একটি জায়গার মাধ্যমে। অ্যাম্ফিথিয়েটার ধাঁচে বানানো জায়গাটি ‘দ্য বোল’ নামে পরিচিত। তুলনামূলক নিচু বা বলা যায়, ডোবানো বসার জায়গাটির চারপাশে ঘিরে আছে গাছ। পাশাপাশি প্রতিটি বসার জায়গার কেন্দ্রে আছে গ্যাসের অগ্নিকুণ্ড, যেখানে আগুনের শিখা ইচ্ছামতো জ্বালানো ও নেভানো যায়।

সবচেয়ে সুন্দর জায়গা: ক্যাম্পাসের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা নিঃসন্দেহে ছাদের গাছঘেরা জায়গাটি। ছাদের ৯ একর জায়গাজুড়ে করা বাগানটি ক্যাম্পাসের ওপরে। সাজানো ঝোপঝাড় ও পরিপক্ব গাছপালা ঘিরে রেখেছে ভবনটিকে। বাগানটি প্রাকৃতিকভাবে এলইইডি (লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন) গোল্ড সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত। ভবনের ভেতরটা ঠান্ডা রাখার জন্য এটা বেশ কার্যকর। ছাদটিতে আছে করাতের দাঁতের মতো দেখতে প্রচুর কাচের প্যানেল। এই প্যানেলগুলো সূর্যের আলো গ্রহণ করে।

পুরো ভবনটির চারপাশ, ওপর ও নিচের অংশ এমনভাবে বানানো হয়েছে যে, তা কর্মীদের ভেতরে ও বাইরে হাঁটাহাঁটির জন্য আদর্শ। ফেসবুকের মতে, পুনর্ব্যবহার করার কারণে বছরে ১৭ মিলিয়ন গ্যালন পানি সাশ্রয় করা সম্ভব হচ্ছে। ছাদে ১ দশমিক ৪ মেগাওয়াট ফটোভোলটাইক প্যানেল আছে, যা বার্ষিক ২ মিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এছাড়া জানালাগুলোয় আছে পাখিবান্ধব গ্লেজিং; যা বাইরের দৃশ্য পরিষ্কারভাবে দেখতে সহায়তা করে এবং দিনের আলো ভবনের ভেতর আসতে সহায়তা করে। এমপিকে ২১ মার্কিন গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল কর্তৃক এলইইডি প্ল্যাটিনাম সার্টিফিকেট পেয়েছে। ভবনটি ৮৮/১১০ পয়েন্ট অর্জন করায় ফেসবুকের যে কয়েকটি ভবন আছে দুনিয়াজুড়ে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে।

হ্যাকার স্কয়ার: ‘টাউন স্কয়ার’ থেকে ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে একটা উঠানের মতো আছে; যার চারপাশে আছে রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও ৪০ ফুট লম্বা রেডউড গাছ। টাউন স্কয়ারটিকে হ্যাকার স্কয়ারও বলা হয়; যেখানে ‘হ্যাক’ শব্দটি এত বড় পাথরে লেখা আছে যে তা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়।
আর্ট স্টুডিও: ক্যাম্পাসটিতে আছে অ্যানালগ রিসার্চ ল্যাব নামের একটি আর্ট স্টুডিও। ২০১০ সালে দুই ফেসবুককর্মী নিজের মনে করেই অব্যবহৃত গুদামঘর দখল করে স্টুডিও বানিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে এখানেই ফেসবুকের কর্মীরা স্ক্রিন প্রিন্টেড পোস্টার তৈরি করেন। যাতে লেখা আছে ‘আপনি যদি ভয় না পেতেন, তবে কী করতেন?’ ও ‘দ্রুত ছুটুন এবং ভেঙে ফেলুন’-এর মতো সেøাগান।
ইভেন্ট সেন্টার: ক্যাম্পাসটির কেন্দ্রস্থলে ২০ হাজার বর্গফুটের একটা ইভেন্ট সেন্টার আছে; যেখানে পাতা আছে দুই হাজার আসন। কর্মীরা একে ‘দ্য মিউজিয়াম’ নামে ডাকেন। কারণ প্রতিটি কক্ষের নামকরণ করা হয়েছে কোনো না কোনো বিখ্যাত জাদুঘরের নামে।

কর্মীদের সুবিধা: মেইন স্ট্রিটে ফেসবুকের কর্মীদের জন্য আছে অনেক সুযোগ-সুবিধা। খাবারের দোকান ছাড়া আছে ড্রাই ক্লিনিংয়ের সেবা, বাইক মেরামতের দোকান এবং মেডিকেল ও দাঁত দেখভালের স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কর্মীরা বার্ষিকভাবে শারীরিক পরীক্ষা, দাঁতের যত্ন, এমনকি ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের জন্যও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে পারেন।
বিনামূল্যে খাওয়া: বিনা পয়সার খাবারের থেকে ভালো আর কী হতে পারে! ফেসবুকের প্রধান ক্যাফেটেরিয়া হলো ‘এপিক ক্যাফে’, সপ্তাহে পাঁচ দিন তিনবেলা বিনা মূল্যে খাওয়া যায় এখানে। পরিবেশন করা হয় ভূমধ্যসাগরীয়, ভারতীয়, ভিয়েতনামিসহ নানা দেশের খাবার। সূত্র: ক্যানডর।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান ও পরিবারের ৫৭৬ কোটি টাকা ফ্রিজ

ফেসবুকের অফিস ক্যাম্পাস স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্ষুদ্র একটি শহর

আপডেট সময় : ০৪:৪৯:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

লাইফস্টাইল ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বে এরিয়ার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাস বেশ বিস্তৃত আর কর্মীদের বিভিন্ন সুবিধাও দেয়। ১ হ্যাকার ওয়েতে অবস্থিত ফেসবুকের মেনলো পার্ক ক্যাম্পাস ওই রকমই এক জায়গা, এক কথায় দারুণ। ভেতরের ব্যবস্থা দেখলে একটা কথাই মনে হবে, এটা যেন একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্ষুদ্র জগৎ। সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরের ধারে ২৫০ একরের বেশি জায়গা নিয়ে করা এই ক্যাম্পাসে ৩০টি ভবন। অফিসের চেয়ে একে ছোটখাটো একটা শহর বললেও ভুল হবে না।

তবে ফেসবুক ‘শহর’ তকমাটি এড়িয়ে চলে। ক্যাম্পাসটি চার ভাগে বিভক্ত এবং এখানে কয়েক হাজার কর্মী কাজ করেন। ২১ বছরে পা দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকটি কর্মক্ষেত্র আছে দুনিয়াজুড়ে। তার মধ্যে এই জায়গাটির বেশ সুখ্যাতি।

ক্যাম্পাসের দুটি প্রধান ভবন হলো ‘এমপিকে ২০’ ও ‘এমপিকে ২১’-এর নকশা করেছেন বিখ্যাত কানাডীয়-মার্কিন স্থপতি ও ডিজাইনার ফ্র্যাংক গেহরি। ফেসবুকের সদর দপ্তরটি স্টার্টআপ সংস্কৃতির সংগঠিত রূপটাকেই যেন তুলে ধরেছে। নির্মাণের সময় এমপিকে ২০ ছিল ৪৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের, বলতে গেলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোলামেলা অফিসই ছিল। ২৪ ফুট উঁচু সিলিংয়ের জায়গাটি ছিল বিশাল গুদামের মতো। ২ হাজার ৮০০ কর্মীর জন্য যথেষ্ট। কনফারেন্স রুম, কাজের জায়গা, রেস্তোরাঁ ও ক্যাফের মতো জায়গাগুলোকে ছোট ছোট কাঠামো দিয়েই বানানো। ফেসবুকের এই জায়গাটিতে এলে আধুনিক গ্রামের একটা অনুভূতি পাওয়া যায়।

২০১৫ সালে মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুকে এক পোস্টে জানান, এমপিকে ২০-এর লক্ষ্য ছিল ফেসবুকের প্রকৌশলী দলগুলো যেন একসঙ্গে কাজ করতে পারে এবং একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধারণা যেন ভাগাভাগি করে নিতে পারে। এই চিন্তা থেকেই নিখুঁত একটা স্থান তৈরি করতে চেয়েছিলেন। ফেসবুকের ওকুলাস ভিআর টিমের একজন কর্মী যেন হোয়াটসঅ্যাপ টিমের একজনের সঙ্গে সহজেই কাজের জায়গা ভাগ করে নিতে পারেন। অফিসের কর্মীরা যেন চলাফেরা বেশি করেন, ডিজাইনে সে বিষয়টিও প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ, এক জায়গায় বসে বসে কাজ করলে ভিন্ন ধারা বা বিপ্লবী ধারণার জন্ম হয় না। কর্মীরা চাইলে তাদের ডেস্ক রং করে বা আসবাব এদিক–ওদিক সরাতেও পারেন। এমনকি একটি পুরোনো আলমারিও আছে, যোকে একটা আর্কেডে রূপান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে ভিআর গেম, ডান্স ডান্স রেভলিউশনের মতো ক্ল্যাসিক গেম খেলার ব্যবস্থা আছে।

ভবনটির নকশা বেশ সহজ ও সাধারণ: মোট কথা, ভবনটির নকশা সহজ ও সাধারণ। স্থপতি চেষ্টা করেছেন ভবনটিতে যেন শুধু মৌলিক ও অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যগুলো থাকে। এ কারণে নকশা থেকে শুরু করে ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করতে তিন বছরের বেশি সময় লাগেনি।

স্থাপত্য সমালোচক ক্রিস্টোফার হার্থন অবশ্য খুব একটা ইতিবাচক ব্যাখ্যা দেননি। তিনি বলেছিলেন, রংহীন ইস্পাতের বিম, ঝুলে থাকা নানা ধরনের তারের মধ্যে কর্মচারীদের আধা লুকানো মাথা বের হয়ে আছে বড় বড় মনিটরের পেছন থেকে। জাকারবার্গ অবশ্য এই নকশার পেছনের তত্ত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ‘ভবনটির নকশা বেশ সহজ। অভিনব নয়, তবে এর নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। আমরা চেয়েছিলাম, আমাদের স্থানটি যেন চলমান কাজের মতো মনে হয়। কর্মীরা যখন আমাদের ভবনে ঢুকবেন, আমরা চাই তিনি যেন অনুভব করেন যে বিশ্বকে সংযুক্ত করার জন্য আমাদের কতা কাজ বাকি আছে এখনো।’

‘দ্য বোল’ নামে পরিচিত: এমপিকে ২০ ও এমপিকে ২১ ভবন দুটিকে যুক্ত করা হয়েছে ছাদে বসার একটি জায়গার মাধ্যমে। অ্যাম্ফিথিয়েটার ধাঁচে বানানো জায়গাটি ‘দ্য বোল’ নামে পরিচিত। তুলনামূলক নিচু বা বলা যায়, ডোবানো বসার জায়গাটির চারপাশে ঘিরে আছে গাছ। পাশাপাশি প্রতিটি বসার জায়গার কেন্দ্রে আছে গ্যাসের অগ্নিকুণ্ড, যেখানে আগুনের শিখা ইচ্ছামতো জ্বালানো ও নেভানো যায়।

সবচেয়ে সুন্দর জায়গা: ক্যাম্পাসের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা নিঃসন্দেহে ছাদের গাছঘেরা জায়গাটি। ছাদের ৯ একর জায়গাজুড়ে করা বাগানটি ক্যাম্পাসের ওপরে। সাজানো ঝোপঝাড় ও পরিপক্ব গাছপালা ঘিরে রেখেছে ভবনটিকে। বাগানটি প্রাকৃতিকভাবে এলইইডি (লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন) গোল্ড সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত। ভবনের ভেতরটা ঠান্ডা রাখার জন্য এটা বেশ কার্যকর। ছাদটিতে আছে করাতের দাঁতের মতো দেখতে প্রচুর কাচের প্যানেল। এই প্যানেলগুলো সূর্যের আলো গ্রহণ করে।

পুরো ভবনটির চারপাশ, ওপর ও নিচের অংশ এমনভাবে বানানো হয়েছে যে, তা কর্মীদের ভেতরে ও বাইরে হাঁটাহাঁটির জন্য আদর্শ। ফেসবুকের মতে, পুনর্ব্যবহার করার কারণে বছরে ১৭ মিলিয়ন গ্যালন পানি সাশ্রয় করা সম্ভব হচ্ছে। ছাদে ১ দশমিক ৪ মেগাওয়াট ফটোভোলটাইক প্যানেল আছে, যা বার্ষিক ২ মিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এছাড়া জানালাগুলোয় আছে পাখিবান্ধব গ্লেজিং; যা বাইরের দৃশ্য পরিষ্কারভাবে দেখতে সহায়তা করে এবং দিনের আলো ভবনের ভেতর আসতে সহায়তা করে। এমপিকে ২১ মার্কিন গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল কর্তৃক এলইইডি প্ল্যাটিনাম সার্টিফিকেট পেয়েছে। ভবনটি ৮৮/১১০ পয়েন্ট অর্জন করায় ফেসবুকের যে কয়েকটি ভবন আছে দুনিয়াজুড়ে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে।

হ্যাকার স্কয়ার: ‘টাউন স্কয়ার’ থেকে ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে একটা উঠানের মতো আছে; যার চারপাশে আছে রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও ৪০ ফুট লম্বা রেডউড গাছ। টাউন স্কয়ারটিকে হ্যাকার স্কয়ারও বলা হয়; যেখানে ‘হ্যাক’ শব্দটি এত বড় পাথরে লেখা আছে যে তা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়।
আর্ট স্টুডিও: ক্যাম্পাসটিতে আছে অ্যানালগ রিসার্চ ল্যাব নামের একটি আর্ট স্টুডিও। ২০১০ সালে দুই ফেসবুককর্মী নিজের মনে করেই অব্যবহৃত গুদামঘর দখল করে স্টুডিও বানিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে এখানেই ফেসবুকের কর্মীরা স্ক্রিন প্রিন্টেড পোস্টার তৈরি করেন। যাতে লেখা আছে ‘আপনি যদি ভয় না পেতেন, তবে কী করতেন?’ ও ‘দ্রুত ছুটুন এবং ভেঙে ফেলুন’-এর মতো সেøাগান।
ইভেন্ট সেন্টার: ক্যাম্পাসটির কেন্দ্রস্থলে ২০ হাজার বর্গফুটের একটা ইভেন্ট সেন্টার আছে; যেখানে পাতা আছে দুই হাজার আসন। কর্মীরা একে ‘দ্য মিউজিয়াম’ নামে ডাকেন। কারণ প্রতিটি কক্ষের নামকরণ করা হয়েছে কোনো না কোনো বিখ্যাত জাদুঘরের নামে।

কর্মীদের সুবিধা: মেইন স্ট্রিটে ফেসবুকের কর্মীদের জন্য আছে অনেক সুযোগ-সুবিধা। খাবারের দোকান ছাড়া আছে ড্রাই ক্লিনিংয়ের সেবা, বাইক মেরামতের দোকান এবং মেডিকেল ও দাঁত দেখভালের স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কর্মীরা বার্ষিকভাবে শারীরিক পরীক্ষা, দাঁতের যত্ন, এমনকি ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের জন্যও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে পারেন।
বিনামূল্যে খাওয়া: বিনা পয়সার খাবারের থেকে ভালো আর কী হতে পারে! ফেসবুকের প্রধান ক্যাফেটেরিয়া হলো ‘এপিক ক্যাফে’, সপ্তাহে পাঁচ দিন তিনবেলা বিনা মূল্যে খাওয়া যায় এখানে। পরিবেশন করা হয় ভূমধ্যসাগরীয়, ভারতীয়, ভিয়েতনামিসহ নানা দেশের খাবার। সূত্র: ক্যানডর।