ঢাকা ০৯:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা

ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা

  • আপডেট সময় : ০২:২৪:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩
  • ৭৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে আবার অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি।
আগামীকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আজ মঙ্গলবার ভোরে চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা বিরতি রেখেছে দলটি। আগের সপ্তাহে তিন দিন এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসে অবরোধের দ্বিতীয় দিন সোমবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার ৭ নভেম্বরকে বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। এদিন অবরোধ থাকবে না বলে আগেই গুঞ্জন ছিল। শেষ পর্যন্ত এই দিনটিতে কর্মসূচি রাখেনি বিএনপি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর নভেম্বরের ঘটনাবহুল এই দিনটিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন। সেই থেকে বিএনপি এই দিনটিতে বরাবর নানা আয়োজন রাখে। তারা ক্ষমতায় থাকলে ৭ নভেম্বর সরকারি ছুটির দিন হিসেবেও পালিত হয়। তবে এবার আন্দোলন এবং প্রতিদিন গ্রেপ্তারের মধ্যে ৭ নভেম্বরের সব কর্মসূচি স্থগিত থাকবে বলে জানান রিজভী।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় নয়া পল্টনে জমায়েতের অদূরে কাকরাইল ও বিজয়নগরে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর সমাবেশ শেষ না করে পরদিন হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। হরতালের দিন সকালে গুলশানের বাসা থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হন আরও অনেক নেতা-কর্মী। এর প্রতিবাদে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন রাজপথ, রেল পথ ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেন রিজভী। সঙ্গে তাদের পুরনো দাবিও তুলে ধরা হয়। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিতে বিরতির পর রোববার ভোর থেকে আবার একই কর্মসূচিতে ফেরে তারা।
বিএনপির পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দল এবং দলটির এক যুগের শরিক জামায়াতে ইসলামীও একই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। চলমান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খিলগাঁওয়ের তালতলা পল্লীমা সংসদের কাছে জনা ত্রিশেক নেতাকর্মী নিয়ে মিছিলে নামেন রিজভী। তার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি বক্তব্যও দেন।
রিজভী বলেন, “সারাদেশে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এত নিপীড়ন-নির্যাতনের পরেও বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি দেখে সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে, সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, নেতারা আবোল তাবোল কথা বলছেন।”
মিছিল শেষে আবার অজ্ঞাত স্থানে গিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির ডাক দেন রিজভী। এই অবরোধ চলার মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ও বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিনসহ বহু নেতা। তাদের সবাইকে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অবরোধের প্রতিটি দিনও ঘটেছে নানা সহিংস ঘটনা। প্রতিদিনই আগুন দেওয়া হচ্ছে।
তবে রিজভীর ভাষ্য, “এই কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।” চলমান কর্মসূচি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ চালিয়ে যাওয়ায় বিএনপি, সমমনা জোট ও দলের নেতাকর্মীদেরকে তারেক রহমান অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। এদিন বিএনপির আগে একই কর্মসূচি ঘোষণা করে তাদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকা এলডিপি। সন্ধ্যায় জামায়াতে ইসলামীর তরফেও বুধবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
১২ দলীয় জোটের বিক্ষোভ: সারা দেশে হারিকেন দিয়ে খুঁজে খুঁজে বিএনপির নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে ১২ দলীয় জোটের নেতারা। তারা বলছেন, গণতন্ত্রের ঘাতক হাসিনা সরকার বিরোধীদলের ওপর বেপরোয়া দমন পীড়ন চালিয়ে নিজেদের পতনকেই ত্বরান্বিত করছে। নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা সংকট তৈরি করছে। বিরোধী দলের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ বুমেরাং হয়ে তাদের জীবনেই ফিরে আসবে।
গতকাল সোমবার (৬ নভেম্বর) দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি সফলের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো বিজয়নগর টেপা কমপ্লেক্স সামনে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে ১২ দলীয় জোট। জোটের নেতারা বলেন, ১৯৭৪ সঙ্গে আওয়ামী সরকার বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নমূলক ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’ প্রণয়ন করেছিল। ইতিহাস সাক্ষী ১৯৭৫ সালে ক্ষমতা হারানোর পরে ২১ বছর পর্যন্ত ক্ষমতার বাইরে থাকাকালে নিজেদের প্রণীত বিশেষ ক্ষমতা আইনে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত ও হয়রানির শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগ।সরকার ১৮ কোটি মানুষকে কারাগারে আটকে রাখতে পারবে না উল্লেখ করে ১২ দলীয় জোটের নেতারা আরও বলেন, জনগণই ভোটারবিহীন পাতানো ভোটের আয়োজন পন্ড করে দেবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ে প্রায় সব নেতাকে গ্রেপ্তার করে আন্দোলনের দায়িত্ব জনগণের হাতে তুলে দিয়েছে। সরকারের বিএনপি দমন ও বাড়াবাড়ি দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। নেতা বিহীন আন্দোলন বিনা পিকেটিং ও নেতৃত্ব ছাড়াই দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে নিচ্ছে। জনগণ ২৯ তারিখের হরতাল স্বপ্রণোদিত হয়ে পালন করেছে উল্লেখ করে জোটের নেতারা বলেন, তারপর ৩ দিনের অবরোধ এবং সবশেষে ২ দিনের অবরোধ সারা দেশকে অচল করে দিয়েছে। দেশের মানুষ এবং পুরো দুনিয়া সরকারের বাড়াবাড়ি এবং অবিবেচক কর্মকা-ের দিকে দৃষ্টি রাখছে বলে মনে করেন জোটের নেতারা। তারা বলেন, আরেকটি বিনাভোটের ২০১৪ সালের স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন বয়ে আনছে। আওয়ামী লীগ বুঝতে পারছে না, যখন বুঝতে পারবে তখন বুঝে কোনো লাভ হবে না!
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ১২দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নোয়াব আলী আব্বাস খান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ।
ভয় দেখিয়ে কণ্ঠরোধ সম্ভব নয়: এবি পার্টি: দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার দ্বিতীয় দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে এবি পার্টি। সোমবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিজয়নগরে কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন সড়কে জমায়েত হন। তারা সেখানে অবরোধের সমর্থনে স্লোগান দেন এবং হামলা, সন্ত্রাস ও গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন। এসময় আয়োজিত সমাবেশে এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওহাব মিনার সর্বাত্মক অবরোধ সফল করার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জনগণের এই সংগ্রাম রুদ্ধ করার সামর্থ্য কারো নেই। মানুষকে ভয় দেখিয়ে কণ্ঠরোধ সম্ভব নয়। মানুষের অধিকার হরণকারী সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ অতিষ্ঠ। এই ফ্যাসিবাদী সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, বিএনপি ও বিরোধী দলের কর্মসূচিতে গুলি করে, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট মেরে অরাজকতা তৈরির মত ঘৃণ্য কাজ করে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। রাজপথে বিরোধী মতকে থামিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী শাসনের প্রমাণ রেখেছে সরকার। সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির অন্যান্য নেতাকর্মীরা।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা

ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা

আপডেট সময় : ০২:২৪:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে আবার অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি।
আগামীকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আজ মঙ্গলবার ভোরে চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা বিরতি রেখেছে দলটি। আগের সপ্তাহে তিন দিন এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসে অবরোধের দ্বিতীয় দিন সোমবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার ৭ নভেম্বরকে বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। এদিন অবরোধ থাকবে না বলে আগেই গুঞ্জন ছিল। শেষ পর্যন্ত এই দিনটিতে কর্মসূচি রাখেনি বিএনপি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর নভেম্বরের ঘটনাবহুল এই দিনটিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন। সেই থেকে বিএনপি এই দিনটিতে বরাবর নানা আয়োজন রাখে। তারা ক্ষমতায় থাকলে ৭ নভেম্বর সরকারি ছুটির দিন হিসেবেও পালিত হয়। তবে এবার আন্দোলন এবং প্রতিদিন গ্রেপ্তারের মধ্যে ৭ নভেম্বরের সব কর্মসূচি স্থগিত থাকবে বলে জানান রিজভী।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় নয়া পল্টনে জমায়েতের অদূরে কাকরাইল ও বিজয়নগরে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর সমাবেশ শেষ না করে পরদিন হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। হরতালের দিন সকালে গুলশানের বাসা থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হন আরও অনেক নেতা-কর্মী। এর প্রতিবাদে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন রাজপথ, রেল পথ ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেন রিজভী। সঙ্গে তাদের পুরনো দাবিও তুলে ধরা হয়। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিতে বিরতির পর রোববার ভোর থেকে আবার একই কর্মসূচিতে ফেরে তারা।
বিএনপির পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দল এবং দলটির এক যুগের শরিক জামায়াতে ইসলামীও একই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। চলমান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খিলগাঁওয়ের তালতলা পল্লীমা সংসদের কাছে জনা ত্রিশেক নেতাকর্মী নিয়ে মিছিলে নামেন রিজভী। তার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি বক্তব্যও দেন।
রিজভী বলেন, “সারাদেশে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এত নিপীড়ন-নির্যাতনের পরেও বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি দেখে সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে, সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, নেতারা আবোল তাবোল কথা বলছেন।”
মিছিল শেষে আবার অজ্ঞাত স্থানে গিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির ডাক দেন রিজভী। এই অবরোধ চলার মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ও বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিনসহ বহু নেতা। তাদের সবাইকে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অবরোধের প্রতিটি দিনও ঘটেছে নানা সহিংস ঘটনা। প্রতিদিনই আগুন দেওয়া হচ্ছে।
তবে রিজভীর ভাষ্য, “এই কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।” চলমান কর্মসূচি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ চালিয়ে যাওয়ায় বিএনপি, সমমনা জোট ও দলের নেতাকর্মীদেরকে তারেক রহমান অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। এদিন বিএনপির আগে একই কর্মসূচি ঘোষণা করে তাদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকা এলডিপি। সন্ধ্যায় জামায়াতে ইসলামীর তরফেও বুধবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
১২ দলীয় জোটের বিক্ষোভ: সারা দেশে হারিকেন দিয়ে খুঁজে খুঁজে বিএনপির নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে ১২ দলীয় জোটের নেতারা। তারা বলছেন, গণতন্ত্রের ঘাতক হাসিনা সরকার বিরোধীদলের ওপর বেপরোয়া দমন পীড়ন চালিয়ে নিজেদের পতনকেই ত্বরান্বিত করছে। নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা সংকট তৈরি করছে। বিরোধী দলের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ বুমেরাং হয়ে তাদের জীবনেই ফিরে আসবে।
গতকাল সোমবার (৬ নভেম্বর) দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি সফলের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো বিজয়নগর টেপা কমপ্লেক্স সামনে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে ১২ দলীয় জোট। জোটের নেতারা বলেন, ১৯৭৪ সঙ্গে আওয়ামী সরকার বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নমূলক ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’ প্রণয়ন করেছিল। ইতিহাস সাক্ষী ১৯৭৫ সালে ক্ষমতা হারানোর পরে ২১ বছর পর্যন্ত ক্ষমতার বাইরে থাকাকালে নিজেদের প্রণীত বিশেষ ক্ষমতা আইনে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত ও হয়রানির শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগ।সরকার ১৮ কোটি মানুষকে কারাগারে আটকে রাখতে পারবে না উল্লেখ করে ১২ দলীয় জোটের নেতারা আরও বলেন, জনগণই ভোটারবিহীন পাতানো ভোটের আয়োজন পন্ড করে দেবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ে প্রায় সব নেতাকে গ্রেপ্তার করে আন্দোলনের দায়িত্ব জনগণের হাতে তুলে দিয়েছে। সরকারের বিএনপি দমন ও বাড়াবাড়ি দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। নেতা বিহীন আন্দোলন বিনা পিকেটিং ও নেতৃত্ব ছাড়াই দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে নিচ্ছে। জনগণ ২৯ তারিখের হরতাল স্বপ্রণোদিত হয়ে পালন করেছে উল্লেখ করে জোটের নেতারা বলেন, তারপর ৩ দিনের অবরোধ এবং সবশেষে ২ দিনের অবরোধ সারা দেশকে অচল করে দিয়েছে। দেশের মানুষ এবং পুরো দুনিয়া সরকারের বাড়াবাড়ি এবং অবিবেচক কর্মকা-ের দিকে দৃষ্টি রাখছে বলে মনে করেন জোটের নেতারা। তারা বলেন, আরেকটি বিনাভোটের ২০১৪ সালের স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন বয়ে আনছে। আওয়ামী লীগ বুঝতে পারছে না, যখন বুঝতে পারবে তখন বুঝে কোনো লাভ হবে না!
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ১২দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নোয়াব আলী আব্বাস খান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ।
ভয় দেখিয়ে কণ্ঠরোধ সম্ভব নয়: এবি পার্টি: দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার দ্বিতীয় দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে এবি পার্টি। সোমবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিজয়নগরে কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন সড়কে জমায়েত হন। তারা সেখানে অবরোধের সমর্থনে স্লোগান দেন এবং হামলা, সন্ত্রাস ও গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন। এসময় আয়োজিত সমাবেশে এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওহাব মিনার সর্বাত্মক অবরোধ সফল করার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জনগণের এই সংগ্রাম রুদ্ধ করার সামর্থ্য কারো নেই। মানুষকে ভয় দেখিয়ে কণ্ঠরোধ সম্ভব নয়। মানুষের অধিকার হরণকারী সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ অতিষ্ঠ। এই ফ্যাসিবাদী সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, বিএনপি ও বিরোধী দলের কর্মসূচিতে গুলি করে, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট মেরে অরাজকতা তৈরির মত ঘৃণ্য কাজ করে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। রাজপথে বিরোধী মতকে থামিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী শাসনের প্রমাণ রেখেছে সরকার। সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির অন্যান্য নেতাকর্মীরা।